দূরের তুরস্ক, কাছের তুরস্ক-৫
৭.
ছেলেকে ঘুম থেকে জাগালাম সকাল পৌনে ১০টায়। উঠেই বলল, আয় হায়, দেরি হয়ে গেল। ওরা বলছিল সাড়ে ৯টায় যেতে।
সাড়ে ৯টায় যেতে বলেনি, বলেছে সাড়ে ৯টা থেকে বেলুন ওড়া শুরু হবে। বেলা ১টার মধ্যে যেতে।
ওহ্।
সকালের নাশতা করলাম নুডলস, ব্রেড, ডিম আর ফলের জুস দিয়ে। অ্যাপার্টমেন্টেই। ছেলেকে বললাম রেডি হতে, কিন্তু তার মুঠোফোন টেপা শেষ হয় না। তাকে বললাম, যেতে ইচ্ছা না হলে বাদ দে বেলুনে চড়া।
না, অবশ্যই যাব। তুমিও আমার সঙ্গে বেলুনে উঠো বাবা।
না বাবা, মাফ চাই।
কেন!
আকাশে ওড়ার আমার কোনো শখ নেই।
তুমি কি ভয় পাচ্ছ, বাবা?
কিছুটা।
কেন! ওই দিন তোমার বন্ধুই তো বলল, তিনি বেলুন চড়েছেন। তোমার ভয় কেন!
একেক মানুষ একেক রকম।
ঘর থেকে বের হতে হতে দুপুর ১২টা। ওরা আমাকে বলল, একটা ডকুমেন্ট স্বাক্ষর করতে, কিন্তু কেন?
কিছু না, এটা লাইফ ইনস্যুরেন্স।
ভাবলাম, মিথ্যা বলছে না তো! এ রকম কিছু না তো, মৃত্যুর দায় আমার! কী আর করা, সবাই স্বাক্ষর করেই যাচ্ছে। ভয়ে ভয়ে স্বাক্ষর করলাম। আমার একমাত্র ছেলে। আল্লাহ যেন তাকে হেফাজতে রাখেন।
বেলুন কোম্পানির লোকেরা ছেলের গায়ে লাইফবেস্ট পরিয়ে দিল, যাতে জলে পড়লে ডুবে না যায়। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ছোট ডিঙি দিয়ে, যেগুলো দেখতে অনেকটা বাতাস ফাঁপানো নৌকার মতো, তা দিয়ে ছেলেকে নিয়ে গেল, তীর থেকে ৪০০ কি ৫০০ মিটার দূরে। সেখানে নিয়ে ওঠাল স্পিডবোটে। যে স্পিডবোট বেলুনকে টেনে টেনে নিয়ে যায়। স্পিডবোটে আরও কয়েকজন। দূর থেকে দেখলাম, ওরা নাচছে। আমার ছেলেও। গানের তালে তালে। কিছুক্ষণ পর তাকে বেলুনে ওঠাল। সে উড়ছে। আমার মনে শঙ্কা। আবার দেখতেও ভালো লাগছে। আকাশে ওড়ার তার কত শখ। আজ সে শখ পূর্ণ হয়েছে। প্রায় ১০ মিনিট আকাশে ওড়ার পর, তাকে আবার নামিয়ে আনা হলো স্পিডবোটে। তারপর ছোট ডিঙি দিয়ে আনা হলো সৈকতে। ছেলে দেখি এভারেস্ট বিজয়ীদের মতো উৎফুল্ল হয়ে হাত নাড়ছে—কি রে আকাশসফর কেমন হলো?
দারুণ, বাবা।
বেলুন কোম্পানি এখন ফটোশপ নিয়ে দাঁড়ানো। তার বেলুন চড়ার বিভিন্ন ছবি কম্পিউটারে দেখাতে থাকল। এক ছবি পাঁচ ইউরো। পয়সা বানানোর কত ধান্ধা। ছেলে একটা ছবি নিল ৫ ইউরোতে। আকাশে উড়তে গেল আরও ৬০ ইউরো। মোটামুটি আট হাজার টাকার মামলা।
অ্যাপার্টমেন্টে ফিরতে ফিরতে দেখলাম দুইটা জিনিস। একটা ভালো, একটা মন্দ। ভালোটা হচ্ছে, স্ট্রিট লাইটের খুঁটিতে তারা ঝুলন্ত টব লাগিয়েছে, সেখানে ফুল হাসছে শিশুর মতো। আহা। আর খারাপটা হলো, পথে অনেকগুলো বড় বড় স্ক্রু ফিট করা। যেগুলোয় যেকোনো পথচারী হোঁচট খেতে পারেন।
রুমে ফিরে ছেলে গোসল করল। তারপর বলল, আমি একটু ঘুরে আসি। আমরা স্বামী-স্ত্রী রুমেই থাকলাম। মিনিট দশেক পর ছেলে ফিরে এল। ব্যাপার কী! এত সকাল!
বাবা, আমাকে ২০ পাউন্ড দিতে পারবা?
কেন?
এখানে ম্যাসেজ ও হাম্মামখানা আছে, টার্কিশ বাথ।
দেখো অনুভব, আমরা মুসলমান। পরনারী গোসল করিয়ে দেবে, গা মালিশ করে দেবে, এসব অ্যালাউ করে না ইসলাম।
ছেলেরাও হাম্মামে কাজ করে বাবা।
এসব হবে না।
ছেলে আমার টেম্পার বুঝতে পারল। আর কথা বাড়াল না। আবার বাইরে চলে গেল। তার চলে যাওয়ার পর আমার সন্দেহ হলো, সে নিজের পয়সায় হাম্মামে চলে যায় কি না। কারণ, তার ব্যাংক কার্ডে কিছু পয়সা আছে। আমিও বের হলাম। কিছু দূর হাঁটার পর পেয়ে গেলাম তাকে। না, সে যায়নি। রিসোর্টের অভ্যর্থনাকক্ষে বসে জুস খাচ্ছে। আমাকে দেখে বলল- বাবা, জুস ও চকলেট কিনেছি ৪০ লিরা দিয়ে, ১০ লিরা বকশিশ দিয়ে দিয়েছি দোকানদারকে।
বকশিশ কেন!
লোকটাকে আমি পছন্দ করি।
আচ্ছা। এ দুই দিনে লোকটার সঙ্গে খাতিরও হয়ে গেছে তার। এর আগেরবার যখন স্পেনে গিয়েছিলাম, এক কিশোর দেখি তাকে এনে কোক দিচ্ছে।
কে এই কিশোর?
ও আমার নতুন বন্ধু, বাবা।
যখন যেখানে যায়, বন্ধু বানিয়ে ফেলে। ছোট-বড় কোনো বিভেদ নেই। রুমে ফিরে ভাত খেলাম। মোরগের মাংস আর ডিম। ছেলে বলল, খেয়ে সুইমিং পুলে যাবে গোসল করতে।
খেয়ে কেন?
সাঁতার কাটলে ভাত হজম হবে।
তুই তো ভাত খাস নাই, বার্গার খেয়েছিস।
ওই এক কথাই।
খাওয়ার পর বউ বলল, মাথার স্কার্ফ একটা কিনেছ কেন?
তুমি তো একটাই আনতে বললে।
দুইটা হলে ভালো হতো।
ঠিক আছে, ছেলেকে নিয়ে যাও, আরেকটা কিনে নিয়ে আস।
কিন্তু সে গেল না। বলল, বিকেলে যখন বের হব ম্যাকডোনাল্ড খেতে, তখন কিনব। দুপুরে খেয়ে সুইমিং পুলে গেলাম বাপ-ছেলে। তখন প্রায় বিকেল চারটা। পুলে সাঁতার কাটার লোক নেই। শুধু আমরা বাপ-বেটা। তবে সুইমিং পুলের এক কোনায় বসে মদ ও সিগারেট টানছে দুই জোড়া দম্পতি। দুই নারী স্বল্প পোশাকে বসে আছে, দুই পুরুষের সামনে। তুরস্ক মুসলিম দেশ হলেও চারদিকে স্বল্প পোশাক পরা মানুষ। বিশেষ করে পর্যটন এলাকায়। এখানে মদ অবাধ। সব দিকই বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তবে এক জায়গায় দেখলাম, ডাস্টবিনের পাশে ময়লার ব্যাগ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এখানকার মানুষেরা বেশ শৌখিন। বিশেষ করে চুল কাটায়। হরেকরকম ডিজাইনে চুল কাটে ওরা এবং এখানকার শপগুলোও খুব সুন্দর করে সাজানো। বিভিন্ন জাতের খাবার পাওয়া যায় এখানে। বাক্লাভা, ডোনার কাবাব ও টার্কিশ চা বেশি জনপ্রিয়। জনপ্রিয় ইস্তাম্বুল ও কাপ্পাডসিয়ার বেলুন। ওখানেও যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আন্তালিয়া থেকে অনেক দূর সেই শহর।
বিকেলে কফি খেয়ে বেরিয়ে পরলাম আমরা তিনজন। উদ্দেশ্য প্রথম হেঁটে হেঁটে মসজিদে যাব। মাগরিবের নামাজ পড়ে যাব ম্যাকডোনাল্ডে। মসজিদে হেঁটে যেতে সময় লাগবে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট।
আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। বিকেলের আবহাওয়াটা দারুণ। ঠান্ডায় উষ্ণ উষ্ণ ভাব হলে যে রকম লাগে, সে রকম। রাস্তার দুই পাশে স্থাপনা, বৃক্ষ। এক রকম গোলাপি ফুল ফুটে থাকে চারদিকে। ব্লসম চেরির মতো। তবে তুরস্কে প্রচুর টিউলিপ হয়। সুইজারল্যান্ডের খ্যাতিমান টিউলিপের কোনো কোনোটা নাকি এই তুরস্ক থেকেই নেওয়া।
হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম মসজিদে। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে যেকোনো জায়গায় যাওয়া যায়। যখন পৌঁছালাম, তখন আজান হচ্ছে। নামাজি ২০ থেকে ২৫ জন। নামাজের পর দেখি কোথা থেকে তিলাওয়াতের সুর আসে। ইমাম তো আমাদের সামনেই বসা। তিনি চুপচাপ। তাহলে তিলাওয়াত করছে কে! পেছনে তাকিয়ে দেখি, ছোট একটা রুমে বসে একজন স্পিকার নিয়ে, কিছুক্ষণ পরপর তিলাওয়াত করেন, সংক্ষেপে। সম্ভবত তিনি মোয়াজ্জিন।
নামাজ পড়ে দোতলা থেকে নিচে নামলাম। মেয়েদের নামাজ পড়ার স্থান নিচতলায়। বউ বেরিয়ে এল। হঠাৎ দেখি মসজিদ আঙিনায় ছোট একটা দোকান। দোকানি তেমন ইংরেজি জানেন না, তবে তিনি খুব বিনয়ী। ছেলে বলল, ওখান থেকে টার্কিশ লাল ক্যাপ কিনবে। কিনলাম দুইটা, সাত ইউরো দিয়ে। তারপর হেঁটে হেঁটে গেলাম ম্যাকডোনাল্ড রেস্তোরাঁয়। আমরা ইংল্যান্ডের যে শহরে থাকি, সেই শহরের ম্যাকডোনাল্ডের চিকেন/ মিট হালাল না। এখানে সব হালাল। ছেলে খুশি। সে চিকেন/ মিট খেতে পারবে। মসজিদ থেকে ম্যাকডোনাল্ডের দূরত্ব সাত থেকে আট মিনিটের হাঁটাপথ। ম্যাকডোনাল্ডে পৌঁছে দেখি, সেখানে বিরাট লাইন। ছেলে লাইনে দাঁড়িয়ে গেল। আমার স্ত্রী আর আমি গিয়ে বসলাম রেস্তোরাঁর ফাঁকা জায়গায়। সেখানে আমাদের সামনে বসা টার্কিশ দুটি পরিবার। দুই পরিবারের নারীরাই খুব সুন্দর। সংযত। ছেলেদের চুলের স্টাইল অসাধারণ। টার্কিশ পুরুষেরাও সুন্দর। ফরসা। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর ছেলে খাবার নিয়ে এল। সে হাসছে।
কি রে, হাসছিস কেন?
শোন বাবা, একটা ঘটনা ঘটে গেছে।
কী ঘটনা!
আমি অ্যাক্সিডেনটালি কোক ফেলে দিছি এক মেয়ের পায়ে।
তারপর? সরি বলো নাই?
বলছি। তারপরও আমাকে গালি দিয়েছে।
ওই মেয়ে?
না, তার দাদি। বাঙালি।
বাঙালি! কেমনে বুঝলি?
গালি তো দিল বাংলায়। ভাবছে আমি বুঝব না।
কী কয়?
কয়-কুত্তা।
ওকে, বাদ দাও, বুড়ো মানুষ।
ছেলে গাল খেয়েও খুশি। ব্রিটেনে জন্ম নেওয়া শিশুরা বেশ সরল থাকে। আমরা খেতে শুরু করলাম। বউ বিরক্তি প্রকাশ করল। তার কোক ফেলে দেওয়ার জন্য। তাকে বললাম, বিরক্ত হচ্ছ কেন, এক লিটার সাইজের দুই কোক আমাদের সামনে, এগুলো আগে শেষ করো। আমাদের আর কোক শেষ করা হয় না। রাত ১০টায় ট্যাক্সি চড়ে হোটেল গেটে ফিরলাম। বউ বলল, শেষ শপিংটা করে নিই। কাল সকালেই তো আমাদের ফ্লাইট।
ওকে, কর।
ওরা আবার কেনাকাটায় লেগে গেল। হোটেলের পাশেই অসংখ্য দোকান। কোনো কোনো দোকানি আমাদের পরিচিত হয়ে উঠেছে। আমরাও তাদের কাছে। কারণ, রোজই বাজার করি। এক নারীকে বললাম, তোমাকে না আরেকটা দোকানে দেখলাম, গতকাল।
আমাদের দোকান দুইটা। এইটা আমার স্বামী চালায়। সে একটা কাজে গেছে। তাই আমি এসেছি।
আর ওই দোকানে?
আমার মেয়েকে বসিয়ে এসেছি। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।
এ রকম বাজার করতে করতে, মানুষের সঙ্গে কথা বলতে বলতে, একধরনের প্রেমে পড়ে গেছি এ শহরের। আন্তালিয়ার সিডে শহর। কাল লন্ডন চলে যাব, ফেলে যাব এই শহর। এই জীবনে এই শহরে আর ফেরা হবে কি না, কে জানে। এটা ভেবে খারাপ লাগছে। একটা ছোট ছেলে, গোলগাল, বয়স তার কত হবে, ১৩ কি ১৪, রোজ তার দোকান থেকে ব্যাগ, বেল্ট, এসব কিনতাম। সে কথা বলে কম, খুব চুপচাপ। টুকটাক ইংলিশ বলে। একদিন তাকে বললাম, তুমি স্কুলে যাও না?
না ।
কেন যাও না?
সে উত্তর দেয় না।
কার দোকান এটা?
আমার ভগ্নিপতির।
তুমি তো খুব শক্ত ব্যবসায়ী, এক পয়সাও দাম কমাও না।
সে এক চিলতে হাসে। মেপে মেপে। এখন তার চেহারাটাও চোখে ভাসছে। মায়া হচ্ছে তার জন্য। জীবন এ রকম কেন! শুধু মায়ায় আটকে যাই।
রুমে ফিরলাম। বউ ইতিমধ্যেই ব্যাগ গুছিয়ে ফেলেছে। এসব কাজে সে খুব দক্ষ। ছেলেকে বললাম, তাড়াতাড়ি ঘুমাও, সকাল পৌনে সাতটায় জাগতে হবে, পৌনে আটটায় ট্যাক্সি আসবে। ট্যাক্সি এল সময়মতোই। আগে বুক করা ছিল। রিসেপশনে গেলাম। এয়ারকন্ডিশনের জন্য অতিরিক্ত ২৮ ইউরো দিতে হলো। ট্যাক্সি ছুটে চলছে আন্তালিয়া বিমানবন্দরের দিকে। সিডা থেকে আন্তালিয়ার দূরত্ব ৩৮ কিলোমিটার। লাগে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট। আজ ছেলের একটু মন খারাপ। গত রাতে সে হুঁকা টানতে চেয়েছিল। আমি দিইনি। সে জন্য গাল এখনো কিছু ফোলা। বিমানবন্দরে ঢুকে কী একটা খেতে চাইল। ১৪ ইউরো লাগে। তার মাকে গিয়ে বলল, বাবাকে জিজ্ঞেস কর, খেতে পারব কি না।
যাও, খাও।
খাওয়ার পর ফোলা গাল কিছুটা নামল। তারপর উঠতে যাব বিমানে, পরলাম সমস্যায়। যাত্রীরা সব দাঁড়িয়ে আছেন, বিমানে তোলার কোনো খবর নেই। এক টার্কিশ মেয়ে চেকইনে কাজ করে, তাকে গিয়ে বললাম, সমস্যা কী? দেরি হচ্ছে কেন?
নো ইংলিশ।
আশ্চর্য! এয়ারলাইনে কাজ করে, বলে নো ইংলিশ!
যাত্রীরা একটু বিরক্ত। হঠাৎ ছেলে এসে বলল, বাবা, ওই যে ফ্যামিলি, ওরা বাঙালি।
কেমনে বুঝলি?
আরে, ওই লোকটাকে আমি চিনি।
কি বলিস!
ও ফেমাস ইউটিউবার। মিলিয়ন ফলোয়ারস তার।
তাই নাকি!
ছেলের সঙ্গে কথা বললাম। বয়স তার ৪০-এর মতো। আপনি ইউটিউবার?
জি ভাইসাব।
আমার ছেলে তো আপনাকে চিনছে।
হি হি।
আধা ঘণ্টা বিলম্বে বিমান ছাড়ল। করনডাইন এয়ারলাইনস। মোটামুটি আরামেই জার্নি হলো। ছেলে তিন সিট ফাঁকা পেয়ে চলে গেল অন্যত্র, আর আমরা দুজন তিন সিট শেয়ার করলাম। আরাম-ই। বেলা তিনটার দিকে বিমান ল্যান্ড করল ইংল্যান্ডের গেটউইক বিমানবন্দরে। ইমিগ্রেশন পেরিয়ে এলাম বিমানবন্দরের ট্রেনস্টেশনে। তখন বিকেল পৌনে চারটা। ট্রেনে চড়লাম। আমাদের ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছার আগেই ছেলে তার কিছু বন্ধুর দেখা পেয়ে গেল। ট্রেনেই—কি অনু, ব্র্যান্ডের বেল্ট আনছিস তো?
আনছি।
একজন পকেট থেকে ২০ পাউন্ডের নোট বের করে বলল, অনু, আমার বেল্টের টাকাটা রাখ।
এসব দেখে ছেলেকে বললাম, আগে বাড়ি যাই, তারপর ব্যবসাপাতি।
আচ্ছা।
বাসায় ফিরলাম বিকেল সোয়া চারটায়। বাসায় ঢুকেই বউ খুব খুশি। তার বাগানের সবজি এ এক সপ্তাহে অনেক বড় হয়ে গেছে। খুব সুন্দর বড় বড় পাতা। তার খুব টেনশন ছিল। এক সপ্তাহ পানি না দেওয়ার কারণে গাছ মরে যায় কি না। না মরেনি। এ শহরে গত দুই দিন বৃষ্টি হয়েছিল। ঘরে ঢুকে মনে পড়ল ফেলে আসা শহরের কথা। তখন আবার বৃষ্টি শুরু। আকাশ থেকে নেমে আসেনি সেই ধারা। নেমে এসেছে হৃদয়ের গভীর অনুভব থেকে। তার গভীরতম বোধ থেকে। ভালোবাসা এমন কেন! যেখানেই যাই, হয়ে যায়। হয়ে যায়। শেষ
দূর পরবাসে লেখা পাঠাতে পারবেন আপনিও। ঠিকানা [email protected]