কানাডায় ৬ বছর, সীমান্তে আটক বাংলাদেশিকে ফেরত দিচ্ছে না আমেরিকা
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার এক শরণার্থী (রিফিউজি) আশ্রয়প্রার্থী মাহিন শাহরিয়ার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো শহরে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) হেফাজতে রয়েছেন। মাহিন শাহরিয়ারের ভাষ্য, ভুলবশত কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত পেরিয়ে চলে গেছেন, কিন্তু এখন কানাডা তাঁকে আর ফিরিয়ে নিচ্ছে না।
মাহিন শাহরিয়ার জানান, গত ১২ মে তিনি মন্ট্রিয়লের কাছে এক বন্ধুর বাড়িতে কয়েক দিন থাকার প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বন্ধুর দেওয়া ঠিকানা আসলে সীমান্তের খুব কাছাকাছি ছিল। বন্ধুর ফোনে পাঠানো নির্দেশনা অনুসরণ করতে গিয়ে তিনি অজান্তেই সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বুঝতেই পারিনি, আমি যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে গেছি। বুঝতে পারার পর সীমান্তরক্ষীদের কাছে গিয়ে সব ব্যাখ্যা করি। আমি ভেবেছিলাম, তাঁরা আমাকে কানাডায় ফেরত পাঠাবেন, কিন্তু তাঁরা আমাকে আটক করেছেন।’
শাহরিয়ারের আইনজীবী ওয়াসিম আহমেদ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে যে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলে মাহিন শাহরিয়ার নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে ফেরার আশঙ্কায় রয়েছেন।
আইনজীবী ওয়াসিম আহমেদ আরও জানান, মাহিন শাহরিয়ারকে কানাডায় ফেরত পাঠাতে আইসিই প্রস্তুত থাকলেও কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (সিবিএসএ) তাঁর প্রবেশ অনুমোদন দেয়নি। ফলে মাহিন শাহরিয়ার এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।
সিইবিএসএ এক ই–মেইল বার্তায় জানিয়েছে, তারা বিদেশে আটক কোনো ব্যক্তির বিষয়ে মন্তব্য করে না এবং প্রতিটি প্রবেশের সিদ্ধান্ত কেসভিত্তিকভাবে নেওয়া হয়।
ওয়াসিম আহমেদ এখন ফেডারেল কোর্টে জরুরি শুনানির আবেদন করেছেন, যাতে মানবিক কারণে কানাডা মাহিন শাহরিয়ারকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, ‘তিনি ২০১৯ সাল থেকে কানাডায় বসবাস করছেন। তাঁর মা ও বোন কানাডায় বৈধ অবস্থায় আছেন। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁকে ফিরিয়ে নেওয়া উচিত।’
মাহিন শাহরিয়ারের মা ইতিমধ্যে কানাডায় শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছেন এবং তাঁর বোন পূর্ণ সময়ে (ফুলটাইম) পড়াশোনা করছেন। তবে শাহরিয়ারের প্রথম আশ্রয় আবেদনটি প্রতারক এক ইমিগ্রেশন পরামর্শকের মাধ্যমে জমা পড়ায় তা বাতিল হয়। আইনজীবী ওয়াসিম আহমেদ জানান, এই ভুল আবেদন ও মানসিক চাপের কারণেই মাহিন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, যা পরবর্তী সময় তাঁকে এ দুর্ঘটনার মুখে ফেলে দেয়।
বর্তমানে আইসিই তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারছে না। কারণ, তার কোনো ভ্রমণ নথি নেই। তবে তাঁর পরিবার কানাডায় থেকে মারাত্মক মানসিক চাপের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
আইনজীবী ওয়াসিম আহমেদ বলেন, ‘তাঁর মা ইতিমধ্যে কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মানসিক অবসাদের কারণে। তাঁর বোন এখন পরিবারকে সাহায্য করার জন্য পড়াশোনা বন্ধ করার কথা ভাবছেন।’
এদিকে সেফ থার্ড কান্ট্রি অ্যাগ্রিমেন্টের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে আটক কোনো কানাডা-সংলগ্ন আশ্রয়প্রার্থীকে ১৪ দিনের মধ্যে কানাডায় ফেরত পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। আইনজীবী আহমেদ বিশ্বাস করেন, এই আইন অনুযায়ীই মাহিন শাহরিয়ারকে ফেরত নেওয়া উচিত।