বাংলায় উল্লাসে মাতল সিডনির ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল
প্রশান্তপারে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি প্রচার ও প্রসারে প্রতিশ্রুতবদ্ধ, ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল বাংলায় হাসে, বাংলায় কাঁদে, বাংলায় স্বপ্ন দেখে, বাংলাতেই মেতে ওঠে উল্লাসে। গত রোববার স্কুল প্রাঙ্গণে ‘বাংলায় মাতি উল্লাসে’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঞ্চ আলোকিত করে বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও সিডনির প্রখ্যাত শিল্পীরা। স্থানীয় সময় সকাল দশটায় বাংলা স্কুলের মিলনায়তনে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার ভূমি সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সবাইকে স্বাগত জানান বাংলা স্কুল সাধারণ সম্পাদক কাজী আশফাক রহমান। দুই পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে এক অসাধারণ পরিবেশনা দিয়ে সবাইকে বিমোহিত করেন স্কুলের ছাত্র–ছাত্রীরা।
একক সংগীত, দলগত সংগীত, একক আবৃত্তি, দলগত আবৃত্তিতে বাংলা স্কুলের ছেলেমেয়েরা মুনশিয়ানার ছাপ রাখতে সমর্থ হয়। পরিবেশনায় যোগ দেয় রায়ান, রেয়ান্স, মুহাইমিন, মুনাজ্জা, সুহানা, নাজিফা, সারিনা, আমিনা, আদিয়ান, নাসভা, অনিরুদ্ধ, নাশিয়া, রাইয়ান, নুসাইবা, মাহরুস, জারিফ, অস্কার, অর্নিলা, আদ্য, নুসাইবা হক, ইয়ারা, স্বাধীন, রাইনা, সোহারদিতি, মারজান, স্বপ্নীল, রেহনুমা, অলিভিয়া ও অর্ণা।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে মঞ্চে দ্যুতি ছড়াতে আসেন সিডনির প্রখ্যাত শিল্পীরা। এ পর্বে স্বনামধন্য সব শিল্পীদের হৃদয়ছোঁয়া পরিবেশনা অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। সংগীত পরিবেশন করেন তৃপ্তি খান ও তবলায় সংগত করেন তাঁর পুত্র শুভ খান, আনিসুর রহমান ও রোকসানা বেগম দম্পতির সঙ্গে তবলায় ও গিটারে যোগ দেন যথাক্রমে তাঁদের পুত্র আনান ও তাদের কন্যা আদৃতা, নাজমুল আহসান খান এবং তাঁর নাতনি জেইনা ও জাহিয়ার সঙ্গে তবলায় ছিলেন পুত্র সজীব খান।
আরও সংগীত পরিবেশন করেন ফয়সাল খালেদ শুভ, জয়তী রায় সোমা, লুৎফা খালেদ। বিশেষ অতিথি হাবিবার সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়াতে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রাপ্য সরকারি সুবিধাদি নিয়ে আলোচনা করেন। যুগল আবৃত্তিতে অংশ নেন মৃন্ময় পাল ও সহধর্মিনী বিশাখা পাল এবং আজীম সাগর ও ফারহানা বীথি দম্পতি। জনপ্রিয় একটি নজরুলসংগীতের সুর বেহালায় তুলে আনেন স্কুলেরই সাবেক শিক্ষক আবীর হারুনী।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে অধ্যক্ষ রুমানা খান মোনা বাংলা স্কুলের সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম তুলে ধরে মাতৃভাষা শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতার ওপর আলোকপাত করেন। তিনি সবাইকে তাঁদের সন্তানদেরকে বাংলা স্কুলে আসতে অনুরোধ করেন।
প্রধান সমন্বয়কারী নাজমুল আহসান খানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছাত্রছাত্রীদের পর্ব পরিচালনা করেন সংগীতশিক্ষক জয়তী রায় সোমা ও তবলাবাদক বিজয় সাহা। শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা পর্ব সঞ্চালনা করেন অনিতা মণ্ডল এবং শাখা সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন শায়লা ইয়াসমীন নুসরাত, নুসরাত মৌরি, সায়মা হক এবং নুসরাত লিন্ডা।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন ফায়সাল খালিদ শুভ ও নুসরাত মৌরি। অনুষ্ঠানজুড়ে তবলায় সংগত করেন বিজয় সাহা। স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মির্জা মনিরুল ইসলাম, গোলাম মওলা ও ডক্টর খায়রুল চৌধুরী এবং ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম নাজমুল আহসান খান।
অনুষ্ঠানে শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন ফায়সাল খালিদ শুভ, কারিগরি নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ছিলেন রাফায়েল রোজারিও। ব্যবস্থাপনা ও অঙ্গসজ্জায় ছিলেন ইয়াকুব আলী, নুরুল ইসলাম শাহিন, ফয়সাল রহমান তমাল ও আজিজ রহমান। আপ্যায়নে ছিলেন শাহীন, ইয়াকুব, কিবরিয়া, মাসুদ, মৃন্ময়, দিশা, সিলভিয়া, সুমিত, রাফায়েল, জিশান, তমাল, আলিশা, নূরীণ ও শ্রীজা।
বেলা আড়াইটায় সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাংলা স্কুলের আগামী পরিবেশনা বিজয় দিবসের আয়োজনে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন স্কুলের সভাপতি মশিউল আযম খান স্বপন।
উল্লেখ্য, ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল প্রতি রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে সব বাংলাভাষীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।