লন্ডনে আনন্দধারা আর্টসের আয়োজনে নজরুল উৎসব
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আনন্দধারা আর্টসের আয়োজনে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো নজরুল উৎসব–২০২৪। হলভর্তি দর্শকের উপস্থিতিতে রিচমিক্স মিলনায়তন উৎসব আনন্দমুখর হয়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আনন্দধারা আর্টসের পরিচালক শিল্পী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বিদ্রোহীসত্তার বাইরেও যে নানা রঙে বর্ণিল নজরুল ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছেন, তাঁর জীবন ও সৃষ্টিতে তাঁকেই উপস্থাপন করা এ আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক অধ্যাপক সেলিম জাহানের ‘নজরুল ও সাম্যবাদ’বিষয়ক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মূল আয়োজনের সূচনা হয়। তিনি বলেন, নজরুল হচ্ছেন মানুষের কবি, মানবিকতার কবি ও সাম্যের কবি। নজরুলের সাম্যচিন্তা তাঁর জীবন ও অভিজ্ঞতা থেকে এসেছে এবং তা সব সময় প্রাসঙ্গিক।
এরপর আনন্দধারা আর্টসের শিশু-কিশোরের দল নজরুল রচিত ছোটদের কবিতা ও গানের এক অনন্য উপস্থাপনা উপহার দিয়েছে দর্শককে, যা মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে সবাইকে। আবৃত্তি সংগঠন ‘বর্ণন’ উপস্থাপন করে এক মনোজ্ঞ কবিতালেখ্য। এতে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সঙ্গে নৃত্যে অংশ নেন নৃত্যশিল্পী মনিরুল ইসলাম মুকুল ও আর্থিকা সাহা। আবৃত্তিতে অংশ নেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও সংস্কৃতিজন উদয় শংকর দাশ, সমর সাহা ও নুসরাত জাহান তানিয়া।
নজরুলের দেশাত্মবোধক গানের গীতি–আলেখ্য নিয়ে মঞ্চে আসেন আনন্দধারা আর্টসের শিল্পীরা। দর্শক-শ্রোতা বহুলশ্রুত উদ্দীপনামূলক গানগুলোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেয়ে ওঠেন, পুরো মিলনায়তনে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। কান্তা তাজরীন ও মনিরুল ইসলাম মুকুলের নৃত্যের সমন্বয়ে গানগুলো আরও বিমূর্ত হয়ে ওঠে।
এরপর একক পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন প্রতিথযশা নজরুলসংগীতশিল্পী লুসি রহমান। তাঁর সুরেলা কণ্ঠে মুখর হয় উৎসব প্রাঙ্গণ। ‘সুরে ও বাণীর মালা দিয়ে তুমি’সহ নানা গানে ভরিয়ে রাখেন সবাইকে। এরপর উদীয়মান তরুণ শিল্পী অমিত দে তাঁর জাদুকরি পরিবেশনায় দর্শকের মন জয় করেন।
সবশেষে মঞ্চে আসেন প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী শ্রীমতি চন্দ্রা চক্রবর্তী। রাগাশ্রয়ী নজরুলসংগীতসহ নজরুলের নানা ধারার গানে অনুষ্ঠান মুখর হয়ে ওঠে। ‘আমার যাবার সময় হলো’ গানটির হৃদয়গ্রাহী বৈতালিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে গানের পর্ব শেষ হয়।
নজরুলসংগীতশিল্পী ও কণ্ঠযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেণুর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে। তিনি বলেন, আনন্দধারা আর্টসের এই মনোজ্ঞ আয়োজন দর্শকের বহুদিন মনে থাকবে। অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন আনন্দধারা আর্টসের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, একটি মানবিক সমাজ বিনির্মাণে নজরুলের ভাবাদর্শ ও তাঁর শিল্পসৃষ্টির চর্চা আরও বেশি প্রয়োজন। প্রতিবছর যেন এমন করেই উৎসব বারবার ফিরে আসে।
আনন্দধারা আর্টসের উদ্যোগে আগামী বছরগুলোয় নজরুল উৎসবের এমন সফল আয়োজন হবে, এমনটাই আশা করেন দর্শক–শ্রোতা।
**দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]