জাপান বনাম বাংলাদেশ: পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশনব্যবস্থা–১
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে জাপান পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে পানি পরিশোধন, নিষ্কাশন এবং পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ও কার্যকর নীতিমালা অনুসরণ করে আসছে। এর ফলে দেশটির জলাধার ও নদীগুলো সুসংগঠিত এবং দূষণমুক্ত রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। অন্যদিকে বাংলাদেশে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। শিল্প ও গৃহস্থালি বর্জ্য যথাযথভাবে পরিশোধন না করেই নদী ও জলাশয়ে ফেলা হয়, যা মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তবে তা কার্যকর করার জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তি ও কার্যকর নীতিমালার প্রয়োজন।
জাপান ১৯৬০–এর দশক থেকেই পানি ব্যবস্থাপনায় বিপ্লবী পরিবর্তন আনা শুরু করে। শহুরে পরিবেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখে দেশটি পানির সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ করেছে। পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ রক্ষায় জাপান যে সফলতার গল্প তৈরি করেছে, তা বিশ্বে উদাহরণ।
১.পানি পরিশোধন—
১৯৬০–এর দশক থেকে জাপান শিল্প ও নগর এলাকায় পানির মান নিশ্চিত করতে উচ্চ মানের পানি পরিশোধন প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে। বিশেষত শহরগুলোতে ময়লা পানি পরিষ্কারের জন্য অ্যাডভান্সড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সিস্টেম (AWTS) প্রতিষ্ঠা করেছে জাপান। এই ব্যবস্থায় কেমিক্যাল, বায়োলজিক্যাল ও ফিলট্রেশন প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য অত্যন্ত কার্যকর উপকরণ ব্যবহার করা হয়, যার ফলে দূষিত পানি পান উপযোগী হয়ে ওঠে। শুধু শহরের উন্নয়ন নয়, দেশের প্রাকৃতিক জলসম্পদের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই পরিশোধনপ্রক্রিয়া এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে দূষিত পানির প্রতিটি অণু অতি সহজেই শুদ্ধ হয়ে যায়। এর ফলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে না।
২. পুনর্ব্যবহার—
পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পুনর্ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৮০–এর দশকে জাপান বৃষ্টির পানি সংগ্রহ এবং গোসল, রান্না কিংবা অন্যান্য ব্যবহারের জন্য পানি পুনর্ব্যবহারের প্রযুক্তি উদ্ভাবন শুরু করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে কৃষি, শিল্প ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। এর ফলে জলাশয়ের পানির স্তরের ওপর চাপ কমে এবং দেশের পানিসম্পদের সাশ্রয় সম্ভব হয়। পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে, বিশেষত বাড়ির জন্য ব্যবহৃত পানি পুনঃপ্রক্রিয়া করে সেটি কৃষিকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা দেশের পানি সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
৩. উন্নত নেটওয়ার্ক সিস্টেম—
জাপানে পানি ব্যবস্থাপনাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে একটি উন্নত পানি সিস্টেম নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে। এ নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিষ্কাশন এবং পানি পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে। বিশেষত শহরের মধ্যে দ্রুতগতিতে পানি সরবরাহ এবং অপসারণের কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে। জলাধারের জলস্তর নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যার মাধ্যমে কোনো জলাধারে অতিরিক্ত পানি জমে না যায় এবং জলাবদ্ধতার ঝুঁকি কমে। পানির পরিমাণের ওপর নজর রাখার জন্য রয়েছে উন্নত সেন্সর এবং অটোমেটেড কন্ট্রোল সিস্টেম, যা নিখুঁতভাবে জলস্তর নিয়ন্ত্রণে রাখে।
জাপানের এই নেটওয়ার্ক সিস্টেম দেশটির পানি ব্যবস্থাপনার অন্যতম শক্তিশালী দিক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে এবং এটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিশেষত বন্যা বা ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের সময়ে এটি পানি সরবরাহের সঠিক নীতি বজায় রাখে।
এখন পর্যন্ত জাপান আধুনিক পানি ব্যবস্থাপনা নীতির মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশকেই এই প্রযুক্তি ও কৌশল অনুসরণ করার প্রেরণা দিয়েছে এবং এই উন্নতির পথে বাংলাদেশকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
*বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনায় উন্নতির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্য পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের কারণে পানি ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে পানির সংকট, জলাবদ্ধতা, দূষণ এবং পানির মান বজায় রাখা দেশের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তবে উন্নত দেশের অভিজ্ঞতা অনুসরণ করে বাংলাদেশেও পানি ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, যা দেশটির ভবিষ্যৎ পানি ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ ও টেকসই করতে সাহায্য করবে।
১. সরকারি উদ্যোগ—
সরকারের উদ্যোগ দেশের পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে:
মডেল উন্নয়ন—
বাংলাদেশ সরকার জলাশয়, নদী ও সমুদ্রের কাছাকাছি ময়লা পানি পরিশোধনকেন্দ্র গড়ে তুলতে পারে। যেমন জাপানে আধুনিক ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সিস্টেম রয়েছে। তেমন ব্যবস্থা চালু করা হলে ময়লা পানি শোধন করা সম্ভব হবে এবং এটি পরিবেশ রক্ষায়ও সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে জনগণের জন্য পান উপযোগী পানির সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানোর পথে সহায়তা মিলবে।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
আইন ও নীতি সংস্কার—
বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ রক্ষায় শক্তিশালী আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি। আইনত জলাশয়, নদী ও অন্যান্য জলাধার রক্ষা করার জন্য একটি কার্যকর নিয়মাবলি থাকতে হবে, যা পানিদূষণ এবং অপব্যবহার প্রতিরোধ করবে। নদী রক্ষা আন্দোলন এবং পানি সংরক্ষণে একটি জাতীয় কৌশল গ্রহণ করা হবে, যা সরকারিভাবে পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে।
শিক্ষা ও সচেতনতা—
পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ রক্ষায় জনগণকে সচেতন করতে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালানো প্রয়োজন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষও পানির সঠিক ব্যবহার করতে শিখবে এবং পরিবেশ রক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
*২. বেসরকারি উদ্যোগ
প্রযুক্তি ব্যবহার—
বেসরকারি খাতের মাধ্যমে পানি পরিশোধন প্রযুক্তি এবং পুনর্ব্যবহার প্রযুক্তির উন্নতি ঘটানো যেতে পারে। বর্তমানে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আধুনিক পানি পরিশোধন প্রযুক্তি, সোলার পাওয়ার পাম্পিং সিস্টেম এবং বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। যদি সরকারি ও বেসরকারি খাত একত্রে কাজ করে, তবে এর ফলে পানি ব্যবস্থাপনা আরও আধুনিক ও কার্যকর হবে।
*বিনিয়োগ (ইনভেস্টমেন্ট)
পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিদেশি ইনভেস্টমেন্ট বাড়ানো প্রয়োজন। সারা পৃথিবীতে পানিসংক্রান্ত প্রযুক্তিতে বিপুল পরিমাণ ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে। বাংলাদেশে এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আগ্রহী হয় এবং ইনভেস্টমেন্ট আসে, তবে তা দেশের পানি ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সাহায্য করবে।
৩.ব্যক্তিগত পদক্ষেপ
পানি সাশ্রয়—
প্রতিটি নাগরিকের উচিত, পানিসাশ্রয়ের ব্যাপারে সচেতন হওয়া। বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, রান্নাবান্নার পানির পুনর্ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। শহরাঞ্চলে বাড়ির ছাদে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা তৈরি করা যেতে পারে, যা পরে বাগান বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যাবে। এ ধরনের ছোট ছোট পদক্ষেপ একে অপরকে সহায়তা করবে এবং দেশব্যাপী পানিসাশ্রয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।
প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ—
পানি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করা উচিত। ছোটখাটো সেচ, শৌচাগার বা গোসলখানায় পানি পরিশোধন প্রকল্প চালু করা সম্ভব, এবং এগুলোকে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় যেখানে পানির সংকট প্রবল, সেখানে সহজ ও কম ব্যয়ে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এ ছাড়া ওয়াটার রিসাইক্লিং সিস্টেমগুলোও স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে, যা পানি ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
জাপান থেকে বাংলাদেশে প্রযুক্তি গ্রহণ: পানি ব্যবস্থাপনায় উন্নতির পথ
বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি গ্রহণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। বিশেষ করে উন্নত দেশ জাপান পানি ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা বাংলাদেশের জন্য একটি আদর্শ হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশের জন্য এই প্রযুক্তি গ্রহণ যথেষ্ট লাভজনক ও কার্যকর হতে পারে।
১. বায়োলজিক্যাল ফিলট্রেশন সিস্টেম—
জাপান দীর্ঘদিন ধরে বায়োলজিক্যাল ফিলট্রেশন সিস্টেম ব্যবহার করে পানি পরিশোধনের কাজ করছে। এই প্রযুক্তিতে পানি থেকে বিষাক্ত উপাদান ও অণুজীব মুছে ফেলা হয়। বায়ো ফিল্টার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পানি শোধনপ্রক্রিয়া প্রাকৃতিকভাবে সম্পন্ন হয়, যা পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর। বাংলাদেশের কৃষি ও নগরাঞ্চলে এই প্রযুক্তির ব্যবহার সহজেই কার্যকর হতে পারে। দেশে অব্যবহৃত পানি অথবা ময়লা পানি ব্যবস্থাপনায় এটি একটি সাশ্রয়ী এবং কার্যকর পন্থা হতে পারে।
২. রিভার্স অসমোসিস (বিপরীত পরাসরণ)—
জাপানে পানি পরিশোধনের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রযুক্তি হলো রিভার্স অসমোসিস। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমুদ্র বা অপরিশোধিত পানি থেকে শুদ্ধ পানির উৎস তৈরি করা সম্ভব। রিভার্স অসমোসিস প্রযুক্তি কম খরচে দ্রুত পানি পরিশোধন নিশ্চিত করে, যা বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে মিঠাপানির সংকট প্রবল, সেখানে খুবই উপকারী হতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে, যেখানে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে এবং বৃষ্টির পানি সংগ্রহের সুযোগ কম, সেখানে এই প্রযুক্তি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
৩. বৃষ্টির পানি সংগ্রহ সিস্টেম—
জাপান বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের জলসংকট মোকাবিলা করছে। বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য প্রাথমিকভাবে ছাদ, পুকুর ও জলাধার ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা হয়, যা পরে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়—যেমন কৃষি, গোচারণ, পার্কের সেচ ইত্যাদি। বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে, যেখানে প্রতিবছর বৃষ্টির ওপর নির্ভরতা বেশি, সেখানে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পানি সাশ্রয় ও পরিবেশ রক্ষা সম্ভব।
বাংলাদেশে খরচ ও বিনিয়োগ—
পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির উন্নয়নে কিছু খরচ আসবে, তবে দীর্ঘ মেয়াদে এর লাভ অনেক বেশি। নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে এবং দেশের অভ্যন্তরে উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য এতে প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, কিন্তু এর ফলে পান উপযোগী পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং দীর্ঘমেয়াদি পানির সংকট সমাধান করা সম্ভব হবে।
বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন—
এই প্রকল্পগুলোর জন্য বিদেশি বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাহায্য এখানে ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশের জন্য এই প্রকল্পগুলোতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারে। এসব সংস্থার সাহায্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের মাধ্যমে দেশটি আন্তর্জাতিক স্তরে পানি ব্যবস্থাপনায় একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের বেসরকারি ও সরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে উঠলে প্রযুক্তি গ্রহণ আরও সাশ্রয়ী ও কার্যকর হবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের প্রযুক্তি বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়, তবে এটি দেশে পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ দীর্ঘমেয়াদি লাভের পথ উন্মোচন করবে। চলবে...