গাড়ির চাকায় ইউরোপের ছাদে: পর্ব–১

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘কুকু ক্লক’। বাড়িরই দোতলার জানালা খুলে প্রতি ঘণ্টায় বেরিয়ে আসে বিশাল এক কুকু পাখিছবি: লেখকের পাঠানো

যাত্রার শুরু:

গতকাল যখন আমরা জার্মানির রহস্যময় ব্ল্যাক ফরেস্টের হোটেলে এসে পৌঁছালাম, রাত তখন বেশ গভীর। হোটেলের রিসিপশন জনশূন্য, চারপাশ নিঝুম। অগত্যা ভরসা হোটেলের অটোমেশন চেকইন। দরজার পাশের মেশিনে পাসপোর্ট স্ক্যান করে রিজারভেশন নম্বর দিতেই মিলল রুমে ঢোকার জাদুর কোড। দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি নিয়ে অবশেষে বিছানায় গা এলানো।

এই যাত্রার স্বপ্নটা বোনা হয়েছিল আরও অনেক আগে। আরিফ ভাই আর স্বর্ণার সঙ্গর মিলে আমাদের বহুদিনের পরিকল্পনা—ইউকে থেকে নিজেদের গাড়ি নিয়ে আল্পসের ছবির মতো সুন্দর কিছু শহর ঘুরে দেখব। রোড ট্রিপের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো স্বাধীনতা; পাবলিক ট্রান্সপোর্টের সময়ের ফ্রেমে বন্দী থাকতে হয় না। পথে কোনো জায়গা ভালো লাগলে গাড়ি থামিয়ে ইচ্ছেমতো সময় কাটানো যায়, রাত অবধি ঘুরে বেড়ানো যায় অচেনা শহরের অলিগলিতে।

আমাদের এই আনন্দভ্রমণে আমরা মোট তিনটি পরিবার। আমার আর খালেদার সঙ্গে আছে আমাদের দুই মেয়ে—ইসরা ও ইনায়দা। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মুরাদ ভাই ও শায়লা ভাবী, সঙ্গে তাদের মেয়ে মানহা। আরও আছেন আরিফ ভাই ও স্বর্ণা। সব মিলিয়ে দুই গাড়িতে ছোট-বড় ৯ জনের এক জমজমাট দল। আমাদের মূল গন্তব্য আল্পসের রাজকীয় চূড়া, ‘টপ অব ইউরোপ’ খ্যাত ইয়ংফ্রাও যাকে ইউরোপের ছাদ বলা হয়ে থাকে। তবে পাহাড়ে চড়ার ভয় নেই, হাইকিংয়ের ক্লান্তি নেই; সুইজারল্যান্ডের গ্রিন্ডেলওয়াল্ড গ্রাম থেকে ট্রেন আর ক্যাবল কারের জাদুকরি রাইডে খুব সহজেই আমরা ছুঁয়ে দেখব আল্পসের তুষারশুভ্র শিখর।

ক্লাক হাউসের সামনে লেখকেরা
ছবি: লেখকের পাঠানো

যাত্রার আনুষ্ঠানিক শুরুটা হয়েছিল গতকাল ভোরে। লন্ডন থেকে আরিফ ও মুরাদ ভাইরা ভোর ছয়টায় কেন্টে আমাদের বাসায় আসেন। মুরাদ ভাইয়ের গাড়িটি আমাদের ড্রাইভওয়েতে রেখেই দুটি গাড়িতে ৯ জনের বহর নিয়ে মূল যাত্রা শুরু হলো। কেন্টের টানব্রিজ থেকে সোজা ডোভার। তারপর ফেরিতে ইংলিশ চ্যানেলের নীল জলরাশি পেরিয়ে ফ্রান্সের ক্যালে। সেখান থেকে গাড়িতে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার পথ পেছনে ফেলে আমাদের আল্পাইন রোড ট্রিপের প্রথম গন্তব্য—এই ব্ল্যাক ফরেস্ট।

ম্যাকডোনাল্ডসে নাশতা সেরে রওনা হলাম ঘড়ির গ্রাম শেনভাল্ডের উদ্দেশ্যে। ব্ল্যাক ফরেস্টের গভীরে ঢোকার এই পথটুকু ছিল জাদুকরি। রাস্তাগুলো মসৃণ কিন্তু সাপের মতো আঁকাবাঁকা। গাড়ির গ্লাস নামাতেই পাইন আর ভেজা মাটির একটা বুনো গন্ধ নাকে এসে লাগল। ঘন অরণ্যের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো রাস্তায় এসে পড়ছে, যেন আলো-ছায়ার লুকোচুরি।

ইংল্যান্ডে আমাদের গাড়ির ইনস্যুরেন্সে বছরে ৩০ দিনের ইউরোপ ভ্রমণ কভার করে, তাই বাড়তি কোনো খরচ নেই। মুরাদ ভাইকে আমরা দুটি গাড়ি চালানোর জন্য বাড়তি কিছু পাউন্ড দিয়ে ইনস্যুরেন্সে অ্যাড করে নিয়েছি। তাই ক্যালে থেকে ব্ল্যাক ফরেস্ট আসার এই দীর্ঘ পথ আমরা দুজনে ভাগ করে চালিয়েছি, যার ফলে কারোরই একঘেয়েমি বা ক্লান্তি আসেনি।

ভিয়েনায়।  ছবি: লেখকের পাঠানো

ব্ল্যাক ফরেস্ট ও স্মৃতির পাতা

দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির এই ব্ল্যাক ফরেস্ট বা ‘শোয়ার্জওয়াল্ড’ আসলে পাইন আর ফার গাছের এক বিশাল ও গহিন অরণ্য। সবুজের বুক চিরে মাঝেমধ্যে উঁকি দেয় ছবির মতো সাজানো ছোট ছোট গ্রাম। জার্মান ভাষায় ‘শোয়ার্জ’ মানে কালো আর ‘ওয়াল্ড’ মানে বন; ঘন অরণ্যের কারণে দূর থেকে কালচে দেখায় বলেই এর নাম ব্ল্যাক ফরেস্ট। এখানকারই এক ছিমছাম গ্রাম ট্রিবার্গের শেনভাল্ড, যাকে বলা হয় ‘কুকু ক্লক’-এর আঁতুড়ঘর। প্রায় ৩০০ বছর আগে এখানকার কারিগররাই লোকাল পাইন কাঠ দিয়ে তৈরি করেছিলেন সেই বিখ্যাত মেকানিক্যাল ঘড়ি, যা প্রতি ঘণ্টায় পাখির ডাকে সময় জানান দেয়। শোনা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কুকু ক্লকটিও আছে এই গ্রামেই, যা নাকি আয়তনে তিনতলা সমান উঁচু!

পাইন বনের বুক চিরে আঁকাবাঁকা পথ ধরে মিনিট বিশেকে আমরা পৌঁছে গেলাম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘কুকু ক্লক’-এর সামনে। ঘড়ি তো নয়, যেন আস্ত একটা তিনতলা বাড়ি! এই বাড়িরই দোতলার জানালা খুলে প্রতি ঘণ্টায় বেরিয়ে আসে বিশাল এক কুকু পাখি।

সকালে হোটেল থেকে বেরোতেই জার্মানির ঝকঝকে নীল আকাশ আমাদের স্বাগত জানাল। আমাদের এবারের যাত্রার বাহন দুটিই ইলেকট্রিক ভেইকল, যা এক চার্জে প্রায় ৫০০-৫৫০ কিলোমিটার চলতে পারে। আরিফ ভাই আমাদের অঘোষিত ট্যুর প্ল্যানার; তার নিখুঁত হোমওয়ার্কের কারণেই হাইওয়েতে চার্জিং নিয়ে আমাদের খুব একটা ভাবতে হয়নি। প্ল্যান এমনভাবে করা, যাতে যাত্রা বিরতিতেই ‘ফাস্ট চার্জিং’ সেরে নেওয়া যায়। টেসলার সুপার চার্জার পেলে তো কথাই নেই, মাত্র ৩০ মিনিটেই ফুল ব্যাটারি চার্জ! টেসলা গাড়ির জন্য বিশেষ ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। ২০ ইউরোতে ফুল চার্জ করে ৫০০ কিলোমিটারের মতো ড্রাইভ করা যায়। গতকাল আসার পথেই ফ্রান্সে রাস্তার ধারের সার্ভিসে আমরা টেসলা সুপার চার্জার পেয়েছিলাম। মুরাদ ভাই আর ভাবী সঙ্গে করে লিচু নিয়ে এসেছিলেন। গাড়ি চার্জ হওয়ার ফাঁকে আমরাও লিচু খেয়ে নিজেদের ‘রিচার্জ’ করে নিয়েছিলাম।

রাইন ফলস, সুইজারল্যান্ড
ছবি: লেখকের পাঠানো

আজ সকালে হোটেল থেকে মাত্র ১০ মিনিটের ড্রাইভেই ম্যাকডোনাল্ডস। দূর থেকে হলুদ রঙের সেই বিখ্যাত ‘এম’ সাইন দেখলেই বাচ্চারা খুশি হয়ে যায়! কার পার্কের পাশেই জার্মানির জনপ্রিয় বাজেট সুপারশপ—লিডল। সেখান থেকে আমরা পথের জন্য কিছু শুকনা খাবার আর পানি কিনলাম। এরই ফাঁকে মুরাদ ভাই দেখি একটা ইস্ত্রি কিনে এনেছেন। উনি অত্যন্ত শৌখিন ও পরিপাটি মানুষ; ভ্রমণে থাকলেও পাটভাঙা শার্ট আর টি-শার্ট ছাড়া তার চলে না। যেহেতু আমাদের পুরো ট্রিপে আমরা তিনটি ভিন্ন ‘এয়ার-বিএনবি’তে থাকব, সবখানে ইস্ত্রি থাকবে কি না—সেই অনিশ্চয়তা থেকেই তার এই প্রস্তুতি।

ম্যাকডোনাল্ডসে নাস্তা সেরে রওনা হলাম ঘড়ির গ্রাম শেনভাল্ডের উদ্দেশ্যে। ব্ল্যাক ফরেস্টের গভীরে ঢোকার এই পথটুকু ছিল জাদুকরি। রাস্তাগুলো মসৃণ কিন্তু সাপের মতো আঁকাবাঁকা। গাড়ির গ্লাস নামাতেই পাইন আর ভেজা মাটির একটা বুনো গন্ধ নাকে এসে লাগল। ঘন অরণ্যের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো রাস্তায় এসে পড়ছে, যেন আলো-ছায়ার লুকোচুরি। রাস্তার দুপাশে মাঝেমধ্যে কাঠের তৈরি টিপিক্যাল জার্মান বাড়ি, বারান্দায় ঝুলছে রঙিন ফুলের টব। মনে হচ্ছিল, আমরা কোনো রূপকথার বইয়ের পাতার ভেতর দিয়ে ড্রাইভ করছি।

দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

জার্মান অটোবান বা হাইওয়েতে কোনো স্পিড লিমিট নেই। বায়ের লেনে ঘণ্টায় ৯০–১০০ মাইল স্পিডে গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। জার্মানির এই মসৃণ রাস্তায় ড্রাইভ করতে করতে হঠাৎ করেই আমার স্কুলবন্ধু তনুর কথা মনে পড়ে গেল। অদ্ভুত এক জার্মান-প্রীতি ছিল তার। হয়তো ওর এক চাচা জার্মানিতে থাকতেন, সেখান থেকেই এই ভালোলাগার শুরু। ফুটবলে অন্ধ জার্মান ভক্ত, টেনিসে স্টেফি গ্রাফের পূজারি। এমনকি মাঝেমধ্যে হিটলারের কোনো ভালো গুণ ছিল কি না, তা নিয়েও অহেতুক তর্ক জুড়ে দিত। তুচ্ছ সব বিষয় নিয়ে মেতে থাকতে ওর জুড়ি ছিল না। ‘ডানকে’ (ধন্যবাদ), ‘অটোবান’-এর মতো জার্মান শব্দগুলো প্রথম ওর কাছেই শোনা। মনে পড়ছে, অনেক আগে ইমদাদুল হক মিলনের ‘পরবাসী’ নামে এক উপন্যাস পড়েছিলাম, ওকেও পড়তে দিয়েছিলাম। আশির দশকে জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জীবন নিয়ে লেখা সেই উপন্যাস। বইটিতেও কী যেন একটা লিখে দিয়েছিল, ঠিক মনে নেই। তবে সারমর্ম ছিল অনেকটা এমন—‘আমি কখনো প্রবাসী হতে চাই না।’ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, কিডনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কয়েক বছর আগেই ও না ফেরার দেশে চলে গেছে। আজ আমি ওর স্বপ্নের দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি, ও বেঁচে থাকলে আজ এখান থেকে একটা মেসেজ পাঠাতাম।

আল পাইন হাউস
।ছবি: লেখকের পাঠানো

এক দিনে তিন দেশ

পাইন বনের বুক চিরে আঁকাবাঁকা পথ ধরে মিনিট বিশেক ড্রাইভ করতেই আমরা পৌঁছে গেলাম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘কুকু ক্লক’-এর সামনে। ঘড়ি তো নয়, যেন আস্ত একটা তিনতলা বাড়ি! এই বাড়িরই দোতলার জানালা খুলে প্রতি ঘণ্টায় বেরিয়ে আসে বিশাল এক কুকু পাখি। নিচতলায় সুন্দর সাজানো সুভ্যেনির শপ। আমাদের মতো আরও অনেক পর্যটক চারপাশটা ঘুরে দেখছেন।
হঠাৎ চোখ পড়লো পাশের বাড়ির দোতলার বারান্দায়। সেখানে কিছু পুতুল দিয়ে অদ্ভুত সুন্দর ডেকোরেশন করা। এক বৃদ্ধ দম্পতি নিচের মেশিনে এক ইউরো কয়েন ফেলতেই জাদুর মতো মিউজিক বেজে উঠল, আর শুরু হলো কয়েক মিনিটের পুতুল নাচ। আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করলাম, ছবিও তুললাম। তা দেখে বৃদ্ধ ভদ্রলোক মজা করে সবার কাছে তার সেই ‘এক ইউরো’ ফেরত চাইলেন! তার রসবোধে সবাই হেসে উঠলাম।

ঘড়ির কাঁটায় ১২টা ছুঁতে তখনো কয়েক মিনিট বাকি। বড় ঘড়িটার সামনে ভিড় বাড়ছে। সবাই মোবাইল উঁচিয়ে প্রস্তুত সেই মুহূর্তটি ভিডিও করার জন্য। ঠিক ১২টা বাজতেই ঢং ঢং শব্দে নিস্তব্ধ এলাকাটা কেঁপে উঠল। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে জানালা খুলে বেরিয়ে এল সেই যান্ত্রিক পাখি।

এরপর আমাদের গন্তব্য গ্রামের সেন্টারে অবস্থিত বিখ্যাত ‘হাউস অব থাউজেন্ড ক্লকস’। নামেই যার পরিচয়। এখানে শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য মেনে লোকাল কারিগরেরা এখনো হাতে ঘড়ি তৈরি করেন। দোকানটি যেন ঘড়ির জাদুঘর! গাড়ি পার্ক করে প্রথমেই সবাই মিলে আইসক্রিম খেয়ে নিলাম।

‘হাউস অব থাউজেন্ড ক্লকস’  দোকানের ভেতরটা আরও রঙিন। সব স্টাফের পরনে লোকাল ঐতিহ্যবাহী পোশাক। তারা হাসিমুখে পর্যটকদের বিভিন্ন ঘড়ির ইতিহাস ও মেকানিজম বোঝাচ্ছেন। ইসরা ও ইনায়দা ওদের দাদার জন্য একটি ঘড়ি কিনবে বলে ঠিক করেছে। অনেক দেখে-শুনে আমরা এমন একটি ঘড়ি পছন্দ করলাম, যা প্রতি ঘণ্টায় পাখির কিচিরমিচির শব্দে সময় জানান দেয়। ইসরা যখন দোকানের সেই কর্মীর সঙ্গে ছবি তুলছিল, তখন ভদ্রমহিলা খুব মিষ্টি করে বললেন, ‘এই উপহার তোমার দাদার অবশ্যই পছন্দ হবে।’ তাঁর পরনে ছিল লাল রঙের স্কার্ট আর ধবধবে সাদা টপ, যা ওখানকার ঐতিহ্যের সঙ্গে খুব মানানসই লাগছিল।

দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু এখানে হালাল খাবারের তেমন অপশন নেই। অগত্যা ভরসা এক বেকারি। ব্ল্যাক ফরেস্ট অঞ্চলে এসেছি, আর এখানকার বিখ্যাত ‘ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক’ খাব না—তা কি হয়? কিন্তু বিধিবাম! অথেনটিক জার্মান রেসিপিতে এই কেকে চেরি ফ্লেভারের ওয়াইন মেশানো থাকে, তাই এর অথেনটিক কারণে সেই স্বাদ নেওয়া হলো না। আমরা কফি আর সাধারণ পেস্ট্রিতেই সন্তুষ্ট থাকলাম।

ঘড়ির গ্রামকে বিদায় জানিয়ে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য সুইজারল্যান্ড। রওনা হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে মানহা জানাল যে ওর মোবাইল খুঁজে পাচ্ছে না! গাড়িতে নেই, তার মানে নিশ্চয়ই বেকারিতে ফেলে এসেছে। ভাগ্যিস আমরা তখনও কার পার্ক থেকে বের হইনি। খালেদা একছুটে বেকারিতে গেল। মানহার ভাগ্যটা আসলেই ভালো; বেকারির এক স্টাফ টেবিলে মোবাইলটি পেয়ে সযত্নে কাউন্টারে রেখে দিয়েছিলেন। হাসিমুখে ফোনটি ফেরত পেতেই আমাদের সবার ধড়ে প্রাণ এল।

এখান থেকে মাত্র ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) দূরেই ইউরোপের বৃহত্তম জলপ্রপাত—রাইন ফলস। তবে সুইজারল্যান্ডে ঢোকার আগে দেশটির হাইওয়েতে গাড়ি চালাতে হলে ‘রোড ট্যাক্স’ বা ভিনেট স্টিকার বাধ্যতামূলক, তা সে একদিনের জন্য হলেও। বর্ডার ক্রস করার আগেই পেট্রলপাম্প থেকে ৫০ ইউরো (বা ৪০ সুইস ফ্রাঙ্ক) দিয়ে ২০২৫ সালের স্টিকারটি কিনে গাড়ির উইন্ডশিল্ডে লাগিয়ে নিলাম।

ইউরোপের মজা হলো, এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঢুকতে সাধারণত কোনো ইমিগ্রেশন বা কাস্টমস চেকের ঝক্কি পোহাতে হয় না। জার্মানি থেকে সুইজারল্যান্ডে ঢোকার সময় মনেই হলো না নতুন কোনো দেশে ঢুকছি। ব্যারিয়ার খোলা, শুধু গাড়ির গতি কমিয়ে পার হয়ে গেলাম। বর্ডারের গার্ডরা আমাদের দেখে সৌজন্যের হাসি দিয়ে হাত নাড়ল।

সুইজারল্যান্ডে বরফ
ছবি: লেখকের পাঠানো

রাইন ফলের আপার কার পার্কে গাড়ি থামতেই এক নস্টালজিয়া ঘিরে ধরল। ২০১৬ সালে আমরা এখানে এসেছিলাম, তখন আমাদের ছোট মেয়ের বয়স মাত্র তিন মাস। সেবার জুরিখ থেকে ট্রেনে এসেছিলাম, দিনটি ছিল মেঘলা। আর আজ জার্মানির সকালের মতোই সুইজারল্যান্ডেও ঝকঝকে রোদেলা নীল আকাশ আমাদের স্বাগত জানাল। আপার কার পার্কে গাড়ি পার্ক করলাম, গাড়ি চার্জ করার চেষ্টা করলাম কিন্তু লোকাল অ্যাপ না থাকায় চার্জে রেখে ঘুরতে যাওয়া হলো না।

আরিফ ভাইয়েরা অন্য একটি কার পার্কে গাড়ি রেখেছেন। আমরা ফলস ক্রুজের টিকিট কাউন্টারের দিকে এগোতেই চোখে পড়ল এক এশিয়ান টেক-অ্যাওয়ে রেস্টুরেন্ট। মেনু দেখে তো জিভে জল—হালাল চিকেন, কারি আর নুডলস! দুপুরের ওই সামান্য কেক খেয়ে কি আর বাঙালির চলে? এখন বিকেল চারটা বাজে, শুধু সুন্দর জায়গা দেখে তো আর পেট ভরে না। আমি ভাত ও কারি অর্ডার করলাম, খালেদার পছন্দ চিকেন নুডলস। মেয়েরাও তাদের পছন্দের খাবার নিল। অন্য গাড়ির সবাইকে মোবাইলে এই ‘সুসংবাদ’ পাঠাতেই তারা তড়িঘড়ি করে চলে এলেন। প্রবাসে ভ্রমণের সময় গরম ভাত-তরকারি পাওয়ার আনন্দই আলাদা!

খাওয়াদাওয়া শেষে আমরা ৩০ মিনিটের একটি নৌকাভ্রমণে বের হলাম। নীল পানিতে ভাসতে ভাসতে নৌকাটি যখন ঝরনার একদম কাছে চলে গেল, মনে হলো প্রকৃতির এক বিশাল শক্তির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ওপর থেকে আছড়ে পড়া টন টন পানির গর্জনে কান পাতা দায়, আর পানির ছিটায় তৈরি হওয়া রংধনু দেখে মন ভরে গেল। কীভাবে যে ৩০ মিনিট কেটে গেল, টেরই পেলাম না।

এবার ফেরার পালা, ঘড়িতে সন্ধ্যা ৮টা। ইউরোপে গ্রীষ্মের দিন অনেক লম্বা, তাই সূর্য ডুবতে তখনো ঢের দেরি। আমাদের আজকের শেষ গন্তব্য অস্ট্রিয়ার লিনজ শহর। সুইজারল্যান্ড থেকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার ড্রাইভ শেষে যখন আমরা অস্ট্রিয়ায় আমাদের ভাড়াকরা এয়ার-বিএনবিতে পৌঁছালাম, তখন রাত সাড়ে ১২টা।

রাইন ফল থেকে লিনজ যাওয়ার এই সাড়ে চার ঘণ্টার পথটা ছিল অসাধারণ। একদিকে আল্পসের বিশাল পাহাড়ের সারি, অন্যদিকে দিগন্তজোড়া সবুজ মাঠ। এত লম্বা পথ যাতে ক্লান্তিকর না হয়, তাই আমরা ড্রাইভিং শেয়ার করে নিলাম। মাঝেমধ্যে লম্বা টানেলের ভেতর দিয়ে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়া।

অবশেষে আমরা পৌঁছালাম আমাদের পাঁচ বেডরুমের বিশাল বাড়িতে—লিভিং, ডাইনিং, কিচেন সব আছে। গাড়িতে আমাদের চাল-ডালসহ রান্নার সব সরঞ্জাম ছিলই। এত ধকলের পর বাইরের খাবার নয়, তাই মাঝরাতে ধোঁয়া ওঠা গরম খিচুড়ি রান্না হলো, সঙ্গে ডিমের কারি। আর ডেজার্ট হিসেবে ছিল এক বিশেষ চমক—মুরাদ ভাই, ভাবী লন্ডন থেকে নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের আম!

আজকের দিনটি আমাদের স্মৃতির পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। সকালের নাশতা জার্মানিতে, দুপুরের লাঞ্চ সুইজারল্যান্ডের রাইন ফলের ধারে, আর মাঝরাতে অস্ট্রিয়ায় বসে দেশি স্বাদের ডিনার। তিন দেশে এক দিনের এই অদ্ভুত সুন্দর জার্নি দিয়ে আমাদের রোড ট্রিপের দ্বিতীয় দিনটি দারুণভাবে শেষ হলো।

রাজকীয় ভিয়েনা দর্শন

আজ আমাদের গন্তব্য অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। লিনজ থেকে ভিয়েনা প্রায় দুই ঘণ্টার ড্রাইভ। যেহেতু ‘ডে ট্রিপ’, তাই খুব একটা তাড়াহুড়া নেই। আমি আর আরিফ ভাই একদম টিপিক্যাল ‘বাংলাদেশি ড্রাইভার’-এর মতো সকালে উঠে ১০ মিনিট দূরের টেসলা সুপার চার্জার থেকে গাড়ি ফুল চার্জ করে নিয়ে এলাম। ফেরার পর দেখি সবাই রেডি। সকালের নাশতা সেরে বেরিয়ে পড়লাম রাজকীয় ভিয়েনার উদ্দেশ্যে।

অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের গাড়ির চাকা গড়াল অস্ট্রিয়ান হাইওয়েতে। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো এতটাই উন্নত আর গোছানো যে এখানে কোনো কিছুতে খুঁত খুঁজে পাওয়াটাই যেন এক বড় চ্যালেঞ্জ। ড্রাইভ করতে করতে ভাবছিলাম এই দেশটির কথা। পৃথিবীর শীর্ষ ২০টি ধনী ও উন্নত দেশের তালিকায় থেকেও অস্ট্রিয়া কেমন যেন শান্ত, কোনো বৈশ্বিক ঝুট-ঝামেলায় নেই।

আসলে সংকট মোচনে অস্ট্রিয়ান কূটনীতি বা ডিপ্লোমেসি যুগে যুগে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে এসেছে। এটা আজকের কথা নয়; সেই রাজতন্ত্রের আমল থেকেই তারা এই নীতি মেনে চলছে। যখন ইউরোপের অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলো যুদ্ধে মত্ত, তখন অস্ট্রিয়ান হ্যাবসবার্গ সাম্রাজ্য যুদ্ধ এড়িয়ে ‘রয়াল ম্যারেজ’ বা বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে শান্তি বজায় রেখেছে। আর এভাবেই তারা একসময় ইউরোপ থেকে বলকান পর্যন্ত বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করেছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স বা স্পেনের মতো দেশগুলো যখন ঔপনিবেশিক শাসনের মাধ্যমে অন্য দেশের সম্পদ লুট করে নিজেদের উন্নত করেছে, সেখানে অস্ট্রিয়ার ইতিহাসে কোনো বিদেশি উপনিবেশের কলঙ্ক নেই। বাণিজ্য, চতুর কূটনীতি এবং আল্পসের লোহা ও খনিজ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারই আজকের এই সমৃদ্ধ অস্ট্রিয়ার ভিত্তি। আজও বিশ্ব কূটনীতির শীর্ষে থাকায় জাতিসংঘ, ওপেকসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান কার্যালয় এই দেশটিতেই।

ইতিহাস আর অর্থনীতির ভারিক্কি চিন্তা সরিয়ে এবার সংস্কৃতির প্রসঙ্গে আসি। অস্ট্রিয়া মানেই তো ধ্রুপদী সংগীত আর অপেরা। সংগীত মানেই ভলফগ্যাং আমাদাউস মোজার্ট। সালজবার্গের এই ভূমিপুত্র ভিয়েনাকেই বানিয়েছিলেন তাঁর কর্মক্ষেত্র। ভিয়েনা শহরে প্রবেশ করে প্রথমেই আমরা গেলাম বুরগার্টেন পার্কে। পার্কের পাশে আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কে গাড়ি রেখে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই এই পার্ক। সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে মোজার্টের সেই বিখ্যাত স্ট্যাচু। সামনে ঘাসের ওপর লাল ফুল দিয়ে বানানো ‘ট্রেবল ক্লেফ’ (মিউজিক্যাল নোটের চিহ্ন)—সব মিলিয়ে এক অপূর্ব দৃশ্য দিয়ে আমাদের ভিয়েনা দর্শন শুরু হলো।

পার্কের সেই নরম সবুজ ঘাসে বসে আমরা বেশ কিছু ছবি তুললাম। ভিয়েনার রাজকীয় আভিজাত্য যেন বাতাসের সঙ্গে মিশে আছে। প্রাসাদের চত্বরে ঘুরে বেড়ানোর এক ফাঁকে মুরাদ ভাই মেয়েদের নিয়ে গেলেন কাছের ‘পাম গার্ডেনে’ বিশাল সব গাছ আর স্থাপত্যের মেলবন্ধন দেখার মতো।
ভিয়েনায় এসে এখানকার বিখ্যাত ক্যাফে সেন্ট্রালে কফি না খেলে কি হয়? ইচ্ছা ছিল এই ঐতিহ্যবাহী ক্যাফেতে বসে একটু আয়েশ করে কফি উপভোগ করব। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি পর্যটকদের বিশাল লাইন। হাতে অত সময় নেই, তাই লাইনে দাঁড়ানোর ধৈর্য আর হলো না। অগত্যা সামনের একটি রেস্টুরেন্টেই দুপুরের খাবার সেরে নিলাম।

বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা নামছে। শেষ বিকেলের সেই সোনালী আলোয় ভিয়েনা শহরটা দেখার জন্য আমরা ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি বা ‘ফিয়াকার’-এ চড়লাম। পুরোনো শহরের অলিগলি দিয়ে ঘোড়ার টগবগ শব্দে এগিয়ে চলা—ভাবতেই বেশ রোমান্টিক লাগে। তবে বাস্তবতা সব সময় কল্পনার মতো হয় না! আমাদের ছোট ইনায়দা বারবার বলছিল গলফ কার্টের মতো দেখতে ইলেকট্রিক ট্যুরিস্ট গাড়িতে চড়তে। এখন মনে হচ্ছে ওর কথাই শোনা উচিত ছিল! ঘোড়ার গায়ের তীব্র গন্ধ আর পোকার উপদ্রব রোমান্টিক রাইডটাকে কিছুটা মাটি করে দিল। এর ধকলে খালেদার এলার্জি শুরু হয়ে গেল—চোখ লাল হয়ে অনবরত পানি পড়া শুরু হলো। রাজকীয় অভিজ্ঞতার সঙ্গে এইটুকু বিড়ম্বনা মেনেই নিতে হলো।

ঘোড়ার গাড়ির পর্ব শেষ হতে না হতেই খালেদার কাজিন আদনানের ফোন। ও বহুদিন ধরেই ভিয়েনায় থাকে। ভিয়েনার ডে ট্রিপে আমরা কি কি দেখব তা ও ঠিক করে দিয়েছে। ও আইটিতে কাজ করে, আর ওর স্ত্রী মেসিডোনিয়ান, পেশায় শিক্ষিকা। ঠিক হলো, ভিয়েনার প্রাণ দানিয়ুব নদীর তীরে আমরা মিট করব।

নদীর পাড়ে এক খোলামেলা রেস্টুরেন্টে আমাদের দেখা হলো। আদনান ওর স্ত্রী, দুই ছেলে আর ছোট মেয়ে ইয়ারাকে নিয়ে এসেছেন দেখা করতে। আদনানের দুই ছেলে ইসরা আর মানহার সমবয়সী, বড় ছেলে ইসরা ও মানহার মতো ইয়ার টেনে পড়ে। অস্ট্রিয়ার স্কুলে ইংরেজি ও জার্মান ভাষায় পাঠ্যক্রম তাই ওদের চারজনে ভালোই গল্প জমে উঠল।

ইয়ংফ্রাউ (ইউরোপের ছাদ) সুইজারল্যান্ড
ছবি: লেখকের পাঠানো

ভিনদেশে আপন মানুষের দেখা পাওয়ার আনন্দই আলাদা। দানিয়ুবের ফুরফুরে বাতাসে বসে চিপস আর ড্রিংকস খেতে খেতে আড্ডা চলল রাত ৯টা পর্যন্ত। দুই সংস্কৃতির মেলবন্ধনে আদনানের সাজানো সংসার আর আমাদের ভ্রমণের গল্পে সময়টা কীভাবে যে কেটে গেল! ভিয়েনার এই সুন্দর সন্ধ্যা আর আত্মীয়তার উষ্ণতা সঙ্গে নিয়ে আমরা আবার ফিরে চললাম লিনজের পথে।

বেশ রাত হয়েছে, মাঝপথে আরিফ ভাই পরামর্শ দিলেন হাইওয়ে বা ‘অটোবান’  থেকে নেমে একটু ডি-টুর নিয়ে টেসলা সুপার চার্জারে যেতে। চার্জিং শেষে ম্যাকডোনাল্ডসেও একটু ঢুঁ মারা হলো।

বিপত্তি বাধল ম্যাকডোনাল্ডস থেকে বের হওয়ার সময়। প্রথমে বাঁয়ে মোড় নিতে গিয়ে দেখি ‘নো এন্ট্রি’, তাই দিক বদলে হঠাৎ করে ডানে মোড় নিতে গেলাম। তাড়াহুড়ায় খেয়ালই করিনি ট্রাফিক লাইট তখন লাল হয়ে আছে। রেড লাইট অমান্য করে গাড়ি টান দিতেই—যা হওয়ার তা–ই হলো! মুহূর্তের মধ্যে পেছনে পুলিশ কারের নীল সাইরেন। বুকটা ধক করে উঠল।

দ্রুত ডানদিকের এক গলিতে গাড়ি থামালাম। অফিসার এগিয়ে এসে ড্রাইভিং লাইসেন্স আর গাড়ির কাগজপত্র (V5C) চাইলেন। আমরা কোথা থেকে এসেছি, কোথায় যাচ্ছি, গাড়িতে ফ্যামিলি আছে কি না—সব জানতে চাইলেন। আমার ব্রিটিশ লাইসেন্সে নামের আগে ‘Dr.’ দেখে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হাসপাতালের ডাক্তার, নাকি ইউনিভার্সিটির?’ আমি ‘মেডিকেল ডাক্তার’ বলে বিনয়ের সঙ্গে সরি বলে বোঝালাম যে, রাস্তাটা আমার অপরিচিত এবং শেষ মুহূর্তে দিক বদলাতে গিয়েই এই অনিচ্ছাকৃত ভুলটা হয়েছে।

সব শুনে অফিসার মুচকি হেসে বললেন, ‘It’s your lucky night! রাস্তাটা তোমার অপরিচিত বুঝতে পারছি, তাই ৫৫ ইউরোর ফাইনটা আর করছি না।’ আমরা তো স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম! শুধু ফাইন মওকুফ করেই দিলেন না, যাওয়ার আগে হাতে ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন কোন পথে গেলে বাঁয়ে মোড় নিয়ে সোজা লিনজের হাইওয়েতে ওঠা যাবে।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, আমরা যাতে আর পথ না হারাই, সে জন্য পুলিশের গাড়িটি আমাদের এসকর্ট করে হাইওয়ে পর্যন্ত দিয়ে এল। পুলিশের এমন আন্তরিক ও সাহায্যপরায়ণ আচরণে গাড়ির সবাই আমরা রীতিমতো অভিভূত। ভিয়েনার রাজকীয় আভিজাত্যের সঙ্গে অস্ট্রিয়ান পুলিশের এই সৌজন্যতা, দুটো মিলিয়েই রাতটা স্মরণীয় হয়ে রইল। চলবে...

আগামীকাল পড়ুন দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব