ক্রিকেটপ্রেমীদের আয়োজনে মরুর বুকে এক খণ্ড বাংলাদেশ
কুয়েত, এখানে কাজ করেন, স্বপ্ন দেখেন লাখো প্রবাসী বাংলাদেশি। কর্মজীবনের ব্যস্ততার মধ্যেও যাঁরা খুঁজে নেন দেশের স্পন্দন; খেলার মাঠে, বন্ধনের ভিড়ে, লাল-সবুজ ভালোবাসায়। বিদেশের মাটিতে বুকে লাল-সবুজের পতাকা আর হৃদয়ে দেশের টান এই অনুভব থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কুয়েতের জন্ম। দীর্ঘদিন ধরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতির মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐক্যবদ্ধ করে তুলছে এ সংগঠন। আর এ ভালোবাসাকে সুশৃঙ্খলভাবে ধারণ করেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কুয়েত।
ছয় বছর আগে গুটিকয় প্রবাসী ক্রিকেটপ্রেমীর উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে এ সংগঠন। উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট, প্রবাসে বসেও যেন বাংলাদেশি তরুণেরা খেলাধুলা, বিশেষ করে ক্রিকেটের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন। তাঁরা ভাবতেন, শুধু কাজ আর ঘর—এটা তো জীবন হতে পারে না। খেলার মাঠে তাঁরা বাংলাদেশকে খুঁজতে চেয়েছেন।
তাঁদের প্রধান কার্যক্রম ছিল নিয়মিত ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন। বছরের বিভিন্ন সময়ে তাঁরা আয়োজন করেন স্বাধীনতা কাপ, বিজয় দিবস কাপ, হালা ফেব্রয়ারি কাপসহ একাধিক প্রতিযোগিতা। তাঁরা শুধু প্রতিযোগিতার আয়োজকই নন, নতুন খেলোয়াড় তৈরি, প্রশিক্ষণ, স্পোর্টসম্যানশিপ গড়ে তোলাও তাঁদের অন্যতম দায়িত্ব। তাঁরা চান, প্রতিটি প্রবাসী তরুণ যেন মাঠে খেলতে পারেন, ভুলে যেতে পারেন একাকিত্ব আর হতাশা।
এ সংগঠনের পথ চলা এতটা সহজ ছিল না। মাঠসংকট, অর্থের সীমাবদ্ধতা, প্রবাসজীবনের চাপ—তবুও দমে যাননি সংগঠকেরা। নিজেদের শ্রম, সময়, ভালোবাসা দিয়ে এগিয়ে নিয়েছে এই সংগঠনকে। তাঁদের কেউই বেতনভুক্ত নন, তবুও প্রতি শুক্রবার কিংবা ছুটির দিনে মাঠে যান, সময় দেন। কারণ, এটা তাঁদের ভালোবাসা। তাঁরা ভবিষ্যতে প্রবাসে বাংলাদেশি ক্রীড়া একাডেমি গড়তে চান। তাঁরা চান, নতুন প্রজন্ম মাঠেই বড় হোক, খেলার মাধ্যমে গড়ে তুলুক নেতৃত্ব আর আত্মবিশ্বাস।
বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কুয়েতের প্রতিটি পদক্ষেপে যাঁরা নীরবে পাশে থেকেছেন, যাঁদের অকুণ্ঠ সহযোগিতা ছাড়া এ সংগঠন এত দূর আসতে পারত না, তাঁরা হলেন সম্মানিত স্পনসর ও পৃষ্ঠপোষকেরা।
তাঁদের অনুদান শুধুই অর্থের নয়, তাঁদের সহযোগিতা স্বপ্নের জ্বালানী। তাঁরা বিশ্বাস করেন, প্রবাসে থেকেও বাংলাদেশকে গড়ে তোলা সম্ভব। তাঁরা পাশে দাঁড়িয়েছেন মাঠ গড়তে, আয়োজন করতে, প্রবাসী তরুণদের খেলার সুযোগ করে দিতে। আমরা কৃতজ্ঞ এমন দানশীল, উদার, দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে পাশে পাওয়ার জন্য। তাঁরা শুধু ব্যবসায়ী নন, তাঁরা কমিউনিটির সত্যিকারের বন্ধু। তাঁদের এই উদারতা প্রমাণ করে দিয়েছে, প্রবাসে বাংলাদেশিদের হৃদয় এখনো দেশের জন্য স্পন্দিত হয়। আপনাদের এই সহযোগিতা শুধু একটি আয়োজনকে সফল করছে না, একটি প্রজন্মকে উৎসাহিত করছে, একটি জাতিকে সম্মানিত করছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কুয়েত শুধু একটি ক্রীড়া সংগঠন নয়, এটি একটি প্রবাসী প্রাণের কেন্দ্র, একটি সংস্কৃতির ভরকেন্দ্র। খেলা, দেশপ্রেম, সংস্কৃতি আর বন্ধনে গড়ে ওঠা এই সংগঠনের গল্প প্রতিটি প্রবাসীর গল্প। আমরা একটি প্রজন্ম তৈরি করতে চাই, যারা প্রবাসেও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে, গর্বের জায়গায় দাঁড়াবে।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
কুয়েতেপ্রবাসী বাংলাদেশিদের অন্যতম বৃহৎ ক্রীড়া সংগঠন বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কুয়েত। আয়োজন করে মহান স্বাধীনতা কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ২০২৫, বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং সম্মাননাও প্রদান করা হয়। ১৬ মে, শুক্রবার সন্ধ্যায় কুয়েতের মরু অঞ্চল হিজিলের একটি রিসোর্টে এই আয়োজন করা হয়। বিভিন্নভাবে বিভক্ত করে পুরো অনুষ্ঠানে ছিল আনন্দঘন পরিবেশ। প্রথমেই পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর দুই দেশের জাতীয় সংগীত। সংগঠনের উপদেষ্টা সাংবাদিক মঈন উদ্দিন সরকার সুমনের পরিচালনায় এবং সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনের সহযোগিতায় নির্মিত সংগঠনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত কার্যক্রমের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদশিত হয়। মরুর দেশে খেজুরগাছবেষ্টিত মাঠে শিশুশিল্পী সম্পৃক্তা দাস সৃজার স্বাগত নৃত্য উপস্থিত দর্শকদের দৃষ্টি মঞ্চের দিকে কাড়ে। উপস্থাপকের কণ্ঠে মাইকে ডাক আসে সংগঠনটির সদ্য অনুষ্ঠিত নতুন কমিটির নির্বাচন কমিশনার মঈন উদ্দিন সরকার সুমনের। মঞ্চে এসে তিনি কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহরাওয়ার্দী (সরোয়ার)–কে ব্যাজ পরিয়ে দায়িত্বভার প্রদান করেন। পরে শুভেচ্ছা বক্তব্যে সোহরাওয়ার্দী (সরোয়ার) আমন্ত্রিত অতিথি, বিজ্ঞাপনদাতা, সহকর্মী, সংগঠনের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন, তাঁদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এরপর শুরু হয় ম্যান অব দ্য ম্যাচ, রানার্সআপ, চ্যাম্পিয়নদের পুরস্কার বিতরণ এবং স্পনসর ও সুধীজনের সম্মাননা প্রদান। এরই ফাঁকে ফাঁকে চলে প্রবাসী শিল্পীদের নাচ–গান। স্টেজে নেই কোনো চেয়ার–টেবিল, পেছনে বিরাট টিভি স্ক্রিনে নাচ–গানের তালে তালে ভেসে আসে দেশের ছবি। চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠের শিল্পী ফাতেমার কণ্ঠে মনমাতানো গান, রক্তিম বিশ্বাস এবং তুসির নাচ। প্রবাসী শিল্পীরা তাঁদের মেধা ও ভালোবাসা দিয়ে প্রমাণ করলেন যে দেশের মাটি ছেড়ে এলেও সংস্কৃতির টান থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন হতে পারেন না। এ যেন মরুর বুকে এক খণ্ড বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে।রানার্সআপ জেলিব প্রবাসী এবং চ্যাম্পিয়ন শিরোপা অর্জন করে কেরানীগঞ্জ চ্যালেঞ্জার্স। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশে। অনুষ্ঠানে ট্রফি ও মেডেল তুলে দেন দূতাবাসের প্রতিনিধি ও অতিথিরা। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দূতাবাসের মিনিষ্ট্রির শ্রম মোহাম্মদ আবুল হোসেন, কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি হঠাৎ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকার কারণে আসতে পারেননি। বক্তব্যে মরুর বুকে ক্রিকেটপ্রেমীদের এমন আয়োজনের প্রশংসা করেন দূতাবাসের কাউন্সেলর ও দূতালয়প্রধান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
বিজ্ঞপ্তি