অভিভাবকত্ব

ট্রেন ছুটে চলে তার গন্তব্যে। ছুটে চলার পথটা আঁকাবাঁকা আর ট্রেনের চলাটা প্ল্যাটফর্ম বরাবর। জীবন একটা ট্রেনের নাম। এর প্রথম স্টেশনের নাম জন্ম, আর শেষ স্টেশন হলো মৃত্যু। জীবনব্যাপী হরেক রকম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সেগুলোর মোকাবিলা করে ধাপে ধাপে আমরা এগিয়ে যাই শেষ গন্তব্যে। প্রতিটি বাধা অতিক্রম করে যে সফলতা, সেগুলো একেকটা স্টেশন। জীবন নামের ট্রেনের চালক হলো অভিভাবক। গন্তব্যের পথে সুন্দর অভিভাবকত্ব অপরিহার্য।

ছোট শিশুদের ভরসা মা-বাবা। জীবনের জন্য আবশ্যিক অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান আর শিক্ষা পেতে ভরসার জায়গা হলো অভিভাবক। শিশুদের বড় হওয়া আর বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মানসিকতা নির্ভর করে অভিভাবকের সুন্দর অভিভাবকত্বে। তাহলে যোগ্য অভিভাবক কারা? ধনী আর উচ্চশিক্ষিতরাই কি যোগ্য অভিভাবক?

মতামতে ভিন্নতা থাকবেই। ভিন্ন মতামতেই সৌন্দর্য আছে। বাস্তবতার আলোকে যুক্তি দিয়ে যে মতামত, সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বেশি। ধনসম্পদে প্রাচুর্য থাকলেই মা-বাবার সেরা অভিভাবক হওয়ার কোনো কারণ নেই। উচ্চশিক্ষিত মানুষই সেরা অভিভাবক হবেন—এটাও বাস্তবে দেখা যায় না। সেরা বা সফলতার সঙ্গে সচেতনতা শব্দটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন সচেতন মানুষই একজন সেরা অভিভাবক। আর্থিকভাবে অসচ্ছল কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় নিম্নতরের কেউ তাঁর সচেতনতা আর আদর্শ দিয়ে সফল মানুষ তৈরি করতে সক্ষম।

সন্তানের বেড়ে ওঠায় সুন্দর অভিভাবকত্ব আবশ্যিক বিষয়। সফল মানুষদের জীবনসংগ্রামের গল্প শুনতে আমার খুব ভালো লাগে। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে খুব আগ্রহ নিয়ে তাঁদের জীবনের গল্প শুনি।

অগণিত সফল মানুষের কাছাকাছি থেকে, সফলতার বিষয়ে তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্ন করে যে উত্তরগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। বিশ্লেষণের সারমর্মে এ কথা খুব স্পষ্ট করে বলা যায় যে একজন অভিভাবকের দেওয়া তিনটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হলো বেসিক জ্ঞান, উৎসাহ আর সাহস।

মানবজীবনে বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে অভিভাবকের শেখানো মৌলিক শিক্ষা, এগিয়ে যাওয়ায় উৎসাহ আর কঠিন বিষয়ে সাহসিকতা—সুন্দর লক্ষ্যে পোঁছানোর জন্য এই তিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

এগিয়ে যাওয়ার দুর্গম পথে ভালোকে বেছে নিতে এ তিনটি উপাদান খুব কাজে আসে। বিপথগামী হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে দূরে সরে গিয়ে সঠিক প্ল্যাটফর্মে থাকা যায়। সুন্দর অভিভাবকত্বের সার্থকতা সেখানেই।