ডে ওয়ানে কী করতে চান ট্রাম্প!

ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: রয়টার্স

ওয়াল স্টিট থেকে মেইন স্টিট, কংগ্রেস থেকে সিটি হল, ইউনিভার্সিটি থেকে স্থানীয় পাবলিক স্কুল—যুক্তরাষ্ট্রের সবখানে বর্ণবাদী-বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তির জয়জয়কার। এ যেন নিউ রিপাবলিক। নভেম্বরের উত্তাল তরঙ্গে ভেসে গেছে কমলা হ্যারিস। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এত বড় রাজনৈতিক বিজয় আগে কখনো দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র। আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনে ‘দ্য নিউ মেগা-হোয়াইট হাউসে’ ট্রাম্প কী করবেন, এ নিয়ে সারা দেশের সমর্থকদের কাছে মতামত চেয়েছেন। আর কুইক রেসপন্স ই–মেইল নিয়ে ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে খুশির বন্যা।

ট্রাম্প ন্যাশনাল কমিটি ও রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি যৌথভাবে সমর্থকদের মধ্যে এ ই-মেইল করছেন। এতে সমর্থকদের প্রশ্ন করা হয়েছে, প্রথম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাতটি বিষয় থেকে কোনটি আপনার প্রথম চাওয়া—১. শাটডাউন দ্য বর্ডার, ২. ডিপোটিং অল ইলিগলস, ৩. ইর‍্যাডিক্টিং মার্ক্সইজম, ৪. রেসটোরিং ল অ্যান্ড অর্ডার, ৫. মেকিং আমেরিকা এনার্জি ইন্ডিপেনডেন্ট এগেইন, ৬.প্রটেক্টিং আওয়ার চিলড্রেন ফ্রম লেফট-উইং জেন্ডার ইনসেনিটি এবং ৭. ডিফেনডিং ফ্রি স্পিস।

এদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক ও অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এক্সে লিখেছেন, ‘অসাধারণ রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন এবং নিষ্পত্তিমূলক বিজয়ের জন্য আমাদের ৪৫ ও ৪৭তম প্রেসিডেন্টকে অনেক অভিনন্দন।’ যিনি ২০১৬ সালে ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন। উইসকনসিন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত গ্লেন গ্রোথম্যান রিপাবলিকানের মার্কিন প্রতিনিধি সম্প্রতি হাউস অব কমেন্সে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘নভেম্বরে ট্রাম্প বিজয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষদের নির্মূল করার জন্য ক্ষুব্ধ নারীবাদী আন্দোলন—আমাদের পথে ফিরে আসবে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প জনপ্রিয়তার শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে লাল গোলাপ শুভেচ্ছায় সিক্ত হবেন। ৬ নভেম্বর সকালে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একটি অভূতপূর্ব এবং শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছে।’ ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (মেগা) আন্দোলনের কারণে আজকের নিরঙ্কুশ বিজয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্প কতটা সাহস নিয়ে জনগণের দেওয়া ম্যান্ডেট ব্যবহার করতে চান।

‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (মেগা ) আন্দোলনের স্পিরিট হলো মার্কিনিদের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্র একসময় একটি মহান দেশ ছিল; কিন্তু বিদেশিরা এসে এ মর্যাদায় আঘাত করেছেন। এর পেছনে অভিবাসন, বহু-সংস্কৃতিবাদ এবং বিশ্বায়নের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতির একত্রকরণকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্বাসের জায়গায় এ (মেগা) চেতনাকে আবার ফিরিয়ে আনতে চার বছরের মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে এগোবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মেগা আন্দোলনের সমর্থকেরা মনে করেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুরক্ষা বাঁধ তৈরি করা হবে। ট্রাম্পের ভাষায়, সত্যিই এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বর্ণযুগ।

যুক্তরাষ্ট্রীয় বংশোদ্ভূত তাত্ত্বিক সমালোচক মাইক গঞ্জালেজ বলেন, গত এক দশকে ক্রিটিক্যাল রেস থিওরি যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবনে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, ২০২২ সালের মে মাসে জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় সারা যুক্তরাষ্ট্র ‘ব্ল্যাক লাইফ মেটার’ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, যা দ্রুত ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল, যার ফলে ক্রিটিক্যাল রেস থিওরি আমেরিকান মেইনস্ট্রিমে ঢুকে পড়েছে।

সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্ট ও এপির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ২০২৪ অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যারন আসেমোগলু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী। সাধারণ আমেরিকানদের ব্যয়ক্ষমতা বিশ্বব্যাপী গড়ের ৮ গুণ, মধ্যম চীনাদের আয়ের ৫ গুণেরও বেশি, সাধারণ জার্মানদের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি এবং মধ্যম জাপানিদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অতুলনীয় ক্ষমতা রয়েছে। তবু হ্যাঁ, যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হতে পারে। কীভাবে এটি ঘটতে পারে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর সবচেয়ে লালিত পরিকল্পনা অভিবাসীদের বিতাড়িত করা এবং সব জায়গা থেকে আমদানির বিরুদ্ধে শুল্ক বাড়ানো। যদিও এই পূর্বাভাস মারাত্মক হতে পারে—একজন অর্থনীতিবিদের ঝুঁকিগুলোর মধ্যে ‘একটি হতাশা’ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।