ডেলটা ‘সুন্দরী’র কথাতেই রাজি হলাম

৫ আগস্ট আমার ভ্যানক্যুভারে (কানাডা) যাওয়ার কথা ছিল। ডেলটা ফ্লাইট, সকাল আটটা। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের নিয়ম অনুযায়ী তিন ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে যাওয়ার কথা। ভাবলাম, এত তাড়াতাড়ি গিয়ে কী হবে।

ছয়টায় পৌঁছালে হবে। সেই মতো ভোর সাড়ে পাঁচটায় উবার বুক করে একটু জলদি, মানে রাত ১১টায় ঘুমাতে যাই। গিন্নি আলপনা তখনো গুছিয়ে চলেছে, এদের গোছানোর কোনো শেষ নেই! জুলাইয়ের ৫ তারিখ লাসভেগাস থেকে আসার পর থেকেই স্যুটকেস গোছানো চলছে।

অ্যালার্মের শব্দে ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই মোবাইল দেখি, টেক্সট, ‘ফ্লাইট ক্যানসেল’। কারণ, আবহাওয়া। সঙ্গে আশ্বাস যে ‘চিন্তার কারণ নেই, আমরা তোমাদের পরবর্তী ফ্লাইট শিডিউল ঠিক করছি।’

গিন্নিও উঠে গেছে, তাকে আমিও বললাম, ‘চিন্তার কিছু নেই, গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো, আমিও আবার শুয়ে পড়ি।’ কোথায় ঘুম! পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ঘুমিয়েছি, ঘুম কি আসে? ডাক্তাররা বলেন, ঘুম না হলেও বিছানায় গড়াগড়ি করলেও শরীরের বিশ্রাম হয়। তাই বিছানায় এদিক-ওদিক করে শেষমেশ সকাল সাড়ে ছয়টায় বিছানা ত্যাগ করি।

আরও পড়ুন

হাত-মুখ ধুয়ে নিচে কিচেনে যাই, কিচ্ছু নেই। কারণ, ৯-১০ দিনের ট্যুর, আগের রাতে সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে, ফ্রিজ খালি। ওহ, না ফ্রেশ কলা ছিল, তা খেলাম। চা বানালাম, সঙ্গে মুড়ি, নাট নিয়ে কম্পিউটারে বসলাম। দেখলাম, নতুন শিডিউল দিয়েছে বেলা ১টা ২৯ মিনিট, মধ্যখানে এলোমেলো দুটি স্টপ। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। আমার ডেলটা অ্যাকাউন্টে ঢুকলাম, সেখানে ফ্লাইট বাছাই করার সুযোগ আছে। ট্রাই করলাম, হলো না। এ অন্য রকমের অশান্তি, কী করব।

সিদ্ধান্ত নিলাম, কল দেব। কল দেওয়ার চেষ্টা করলাম। টিকিট কিনতে চাইলে এদের ফোন সহজলভ্য, কিন্তু অন্য প্রয়োজনে এদের ফোন নম্বর জোগাড় করাটা সুন্দরী মেয়েদের ফোন নম্বর পাওয়ার মতোই কঠিন। কম্পিউটার আমি মোটামুটি ভালোই বুঝি। খোঁজাখুঁজি করে ফোন নম্বর বের করে খানিকটা গুরুত্বপূর্ণ মেম্বার লাইনে কল দিই। কয়েক মিনিট অটোমেটিক কথাবার্তার পর আমি নাছোড়বান্দা বুঝে কম্পিউটার বলে, ‘আমি রিপ্রেজেনটেটিভকে দিচ্ছি, তোমার অপেক্ষার সময় ১ ঘণ্টা ১৩ মিনিট।’ এরপর মিউজিক শুরু, কিছুক্ষণ শুনলাম, তারপর কেটে দিলাম।

আবার নিজেই চেষ্টা করলাম। কাজ হচ্ছিল না, কাল সকাল ছাড়া তেমন কোনো ফ্লাইট পাচ্ছিলাম না। বুঝলাম, রিপ্রেজেনটেটিভের সঙ্গে কথা বলতেই হবে। আবার কল দিলাম। অপেক্ষার সময় ৫৬ মিনিট। কী আর করা, টেলিফোনে মিউজিক বাজছে, আমি টুকটাক অন্যান্য কাজ সারলাম। এর মধ্যে দেখি ১ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। এবার মনোযোগী হলাম, কোনো অবস্থাতেই কল মিস করা যাবে না? ফাইনালি ১ ঘণ্টা ১৬ মিনিট ১৩ সেকেন্ডে ডেলটা সুন্দরী কথা বললেন।

‘গুড মর্নিং, হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?’ ‘গুড মর্নিং, আমার ফ্লাইট ক্যানসেল হয়েছে, তুমি আমাকে নতুন ফ্লাইট শিডিউল দিতে পারো?’ শুনে দুঃখ প্রকাশ করে সুন্দরী জানালেন, তিনি আমার জন্য ফ্লাইট খুঁজছেন, তবে আজ না পেলে কাল হলে চলবে কি না, জানতে চাইলেন। বললাম, ‘তুমি আজ ফ্লাইট খুঁজো, না পেলে কী আর করা! তিনি আমাকে আবার হোল্ডে রেখে ফ্লাইট খুঁজতে গেলেন। এবার বেশিক্ষণ না, একটু পরেই এসে বললেন, ‘আজ ফ্লাইট দিতে পারলাম না, কাল সকালে দিতে পারি।’

বললাম, ‘কাল তো আমি নিজেই কম্পিউটারে নিতে পারি, তুমি আবার চেষ্টা করো আজ দিতে পারো কি না।’ ওই নারী একটু ইতস্তত করলে বললাম, ‘দেখো, আমি ডেলটার ব্যাপারে ফেডআপ।’

এবার তিনি মনোযোগী হলেন। বললেন, ‘সরি।’ বললাম, ‘তোমরা আমাকে রাত ১টা ৫৯ মিনিটে টেক্সট করেছ ওয়েদার খারাপের কারণে ফ্লাইট বাতিল। অথচ নিউইয়র্ক, টরন্টো বা ভ্যানক্যুভারে আবহাওয়া মোটেও খারাপ নয়।’ তিনি একটু আপত্তি করলে জানালাম, ‘আমি ইতিমধ্যে টরন্টো ও ভ্যানক্যুভারে কথা বলেছি, সেখানে আবহাওয়া ভালো। তোমরা মিথ্যা বলেছ, তোমাদের অভ্যন্তরীণ কারণে তোমরা ফ্লাইট ক্যানসেল করেছ, আমরা যাত্রীরা ভুগছি।’

এরপর তিনি আবার ফ্লাইট খুঁজতে মনোনিবেশ করলেন। আবার মিউজিক। একটু পরে এসে জানালেন, ‘আজ কোনো ফ্লাইট নেই, কাল সকালের ফ্লাইট দেব?’ ফ্লাইট দেখলাম সকাল সাড়ে ৭টায় ছেড়ে দুপুর ১২টা ৫৩ মিনিটে ভ্যানক্যুভার পৌঁছাবে।

কম্পিউটারে ইতিমধ্যে তারা আমায় যে ফ্লাইট দিয়েছে, তা ১৯ ঘণ্টার, মধ্যখানে দুটি স্টপ। তদুপরি রাত্রি জাগরণ। ইতিমধ্যে আমার একমাত্র পত্নী আলপনা এসে পাশে বসেছে, শনিবারের ফ্লাইটে সায় দিল। কবিগুরুর উল্টো ভাবলাম, ‘সতীর পুণ্যে পতির পুণ্য’, আমিও সায় দিলাম। শুনিবার সকালের ফ্লাইট নিলাম, একটি দিন অযথা গেল।