আমেরিকায় প্রথমবার ফোর্ড, জিএম-স্টেলান্টিসেন কর্মীদের ধর্মঘটে প্রবাসীরা উদ্বিগ্ন
আমেরিকার ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো মিশিগানে অবস্থিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মোটর কোম্পানি ফোর্ড, জিএম, স্টেলান্টিসের কর্মীরা ধর্মঘট ঘোষণা করেছেন। ইউনিয়ন (ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স) ও অটোমেকাররা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় এই ধর্মঘট। ফোর্ড মোটর কোম্পানি, জেনারেল মোটরস এবং স্টেলান্টিসের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ১৪ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে শেষ হওয়ার পর ১৫ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘট ঘোষণা করে।
অটোমেকাররা সম্প্রতি ইউনিয়নের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছেন, যা কয়েক সপ্তাহ আগে ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু ইউনিয়ন তিনটি কোম্পানির প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্সের প্রেসিডেন্ট শন ফেইন বলেছেন, ‘আমরা আমাদের কর্মীদের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা একসঙ্গে তিনটি বিগ থ্রি-মোটর কোম্পানিতে ধর্মঘট ঘোষণা করেছি।
গত জুলাই মাসে আমরা আলোচনা শুরু করেছিলাম, কিন্তু আলোচনা ছিল খুব ধীরগতির। দর-কষাকষির প্রক্রিয়াটিতে তেমন এগোনো যায়নি, যে কারণে এই ধর্মঘট।’
ফেইন আরও বলেন, ‘আমরা (ইউনিয়ন) সীমিতসংখ্যক কারখানায় ধর্মঘট শুরু করেছি।’ ইউনিয়ন এটিকে একটি ‘স্ট্যান্ড আপ স্ট্রাইক’ বলে অভিহিত করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিএম, ফোর্ড ও স্টেলান্টিস রেকর্ড পরিমাণ লাভ করেছে; কিন্তু কর্মীদের জন্য ভালো বেতন দেয়নি, ইউনিয়ন হিসাব করে দেখেছে, যে বিগ থ্রি কোম্পানি ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে মোট ২১ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে এবং গত ১০ বছরে মুনাফা করেছে ২৫০ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু কর্মচারীদের মজুরি গত চার বছরে বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। জীবনযাত্রা ব্যয়, দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ইউনিয়ন ৪০ শতাংশের মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে।
সর্বশেষ প্রস্তাবে ফোর্ড সাড়ে চার বছরের জন্য ২০ শতাংশ, জেনারেল মোটরস চার বছরের জন্য ১৮ এবং স্টেলান্টিস ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু ফেইন বলেছেন, জীবনযাত্রা ব্যয়, দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির খরচের সঙ্গে এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফোর্ড, জিএম ও স্টেলান্টিস তিনটি মোটর কোম্পানিতে ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্সের ১ লাখ ৪৬ হাজার সদস্য রয়েছেন। ইউনিয়নের প্রায় সব অটোওয়ার্কার্স ৯৭ শতাংশ ধর্মঘটের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন, এই ধর্মঘট অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। মিশিগানের ডেট্রয়েটের ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের শিক্ষক ইফ রাইটমার বলেন, যদি এই ধর্মঘট বেশি দিন স্থায়ী হয়, তবে ছোট ছোট ফ্যাক্টরি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমনকি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এদিকে বৃহৎ তিনটি মোটর কোম্পানিতে ধর্মঘট শুরু হওয়ায় মিশিগান প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মিশিগানে প্রায় ৮০ হাজার বাঙালি বাস করেন। তাঁদের অধিকাংশই বিভিন্ন মোটর কোম্পানিতে চাকরি করেন। যদি এই ধর্মঘট বেশি দিন স্থায়ী হয়, তবে কোম্পানিগুলো কর্মীদের ছাঁটাই করবে। দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ জীবনযাত্রা ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ উদ্বিগ্ন।