কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি বিখ্যাত ছোটগল্পের নাম ‘হৈমন্তী’। আমরা যখন উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলাম, তখন আমাদের বাংলা প্রথম পত্রের পাঠ্যবইয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ছোটগল্পটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। যখন আমি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিই, তখন বয়স ১৮, এখন ২৫ বছর। যতই বয়স বাড়ছে, ততই দেশের সমাজব্যবস্থায় বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের অস্পৃশ্যতা আমার চোখের সামনে প্রকট আকারে ধরা দিচ্ছে।

২০১৮ সালে শিক্ষা ভিসায় মধ্য ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে পা রাখার সুযোগ পাই। ইউরোপের সমাজব্যবস্থা আমার চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। মূলত ফিজিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস ওপর ব্যাচেলর সম্পন্ন করতে স্লোভেনিয়াতে এসেছিলাম। মূল উদ্দেশ্য থেকে এখনো বেশ দূরে এবং এ কারণে পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের থেকে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের কটু কথা শুনতে হয়। তারপরও একটি দিক থেকে আমি সার্থক, ইউরোপের সমাজব্যবস্থা আমার মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাচেতনাকে আলোকিত করেছে। পুরো পৃথিবীকে আলাদাভাবে চিনতে শিখিয়েছে, এটাই আমার জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

আজকের দিনে বারবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘হৈমন্তী’ গল্পের একটি লাইন ঘুরেফিরে ভাবনার দুয়ারে ঘুরপাক খায়। লাইনটি ছিল ঠিক এ রকম—‘শিশিরের বয়স যথাসময়ে ষোলো হইল; কিন্তু সেটা স্বভাবের ষোলো, সমাজের ষোলো নহে।’ ১৯১৪ সালে প্রথম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সবুজপত্র’ পত্রিকায় তাঁর রচিত ছোটগল্প ‘হৈমন্তী’ প্রকাশ করেন। ১৯১৪ সাল থেকে শুরু করে আজকের ২০২২ সাল অর্থাৎ, ১০৮ বছর পরও তাঁর ছোটগল্পটি সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। বয়সের বা স্বভাবের ষোলো দ্বারা আমাদের বায়োলজিক্যাল ক্লককে ইঙ্গিত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত বয়স একটু একটু করে বাড়ছে। তাই স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষ একটা সময় ১৬ বছরে পা রাখে। প্রকৃতির নিয়মে বায়োলজিক্যাল ক্লক পরিচালিত হয়; কিন্তু সমাজের ১৬ মানে ভিন্ন কিছু। শিশির ছিল এ গল্পের মূল চরিত্র। প্রথমদিকে তাকে শিশির হিসেবে সম্বোধন করা হলেও গল্পের শেষ অংশে এসে জানা যায় যে তার প্রকৃত নাম ছিল হৈমন্তী। মেয়েদের সাপেক্ষে সমাজের ষোলো মানে এ বয়সের মধ্যে সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে, এমনকি এ বয়সে যদি সে সন্তানের মা হয়, সেটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। বাংলাদেশের শহর কিংবা মফস্বল অঞ্চলে বাল্যবিবাহের হার আগের তুলনায় কমে এসেছে। গ্রামাঞ্চলে এখনো বাল্যবিবাহের কথা শোনা যায়।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, বিয়ের জন্য পুরুষের ২১ এবং নারীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হতে হবে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে নারীরা চাইলে বিশেষ শর্তসাপেক্ষে ১৬ বছরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন। তাই এখন ষোলোর জায়গায় অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে পুরো বিষয়টিকে ইঙ্গিত করা হয়। ১০৮ বছর পরে এসেও মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেনি।

ইউরোপের সমাজব্যবস্থায় বেশির ভাগ মানুষ সম্পর্কে জড়ানোর আগে একে অন্যকে জানার চেষ্টা করে। ডেটিংয়ের ধারণাটি এভাবে এসেছে। একজন পুরুষ একজন নারীকে ডেটিংয়ের জন্য আহ্বান জানান, ওই নারীও তাঁর আহ্বানে সাড়া দিলেন। এর মানে হচ্ছে, এ দুজন একে অন্যের প্রতি আগ্রহী। ডেটিংয়ের মধ্য দিয়ে তাঁরা পরস্পরের কাছে আসার চেষ্টা করেন। কারও মধ্যে যদি এমন কোনো বিষয় থাকে, যেটা অন্যের কাছে খুব একটা পছন্দের নয়, ডেটিংয়ের সময় ওই ব্যক্তি এ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়ে যান। ফলে তিনি নিজেকে নতুনভাবে সাজানোর সুযোগ পান। একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে ডেটিং করার পর যখন দুজন বুঝতে পারেন যে তাঁরা একে অন্যের সঙ্গে থাকার উপযোগী, তখন তাঁরা সম্পর্কে জড়ানোর জন্য চিন্তাভাবনা করেন। এ ক্ষেত্রে কমিটমেন্ট একটি বড় বিষয়। কয়েক বছরের সফল সম্পর্ক শেষে তাঁরা বিয়ের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেন। সবাই যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তেমনটি নয়। ২০১৮ সালে একবার ভেনিসে ঘুরতে গিয়েছিলাম, আমার সঙ্গে ওই সময় এক ব্রিটিশ দম্পতির পরিচয় হয়েছিল। তাঁরা প্রায় ৩৩ বছর ধরে একত্রে বসবাস করছেন; কিন্তু এখনো তাঁরা অফিশিয়ালি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। তবে দীর্ঘদিনের এ দাম্পত্য জীবনকে ঘিরে তাঁরা বেশ খুশি।

ডেটিং কিংবা রিলেশনশিপের ক্ষেত্রে ইউরোপের বেশির ভাগ মানুষ যে ধারণা পোষণ করেন, আমার কাছে সেটিকে সবচেয়ে বেশি যথার্থ মনে হয়। যার সঙ্গে আমি বাকি জীবন অতিবাহিত করব, তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তাঁর ভালো লাগার বিষয়গুলো সম্পর্কে আমার সচেতন হতে হবে। একই ভাবে আমার মধ্যে যদি কোনো বিষয় থাকে যেটি তাঁর কাছে পছন্দের নয়, সে বিষয়টিকেও পরিহার করা জরুরি। মোটকথা, আমাদের দুজনকে এ বিষয়ে একমত হতে হবে যে আমরা বাকি জীবন একসঙ্গে কাটানোর জন্য উপযোগী কি না। আমি মনে করি, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে প্রত্যেক মানুষের ডেটিংয়ে যাওয়া উচিত এবং বিয়ের সঙ্গে যেহেতু কমিটমেন্টের বিষয়টি জড়িত, তাই অনেক ভেবেচিন্তে সময় নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা উচিত।

বেনেডিক্ট মার্কো নামক আমার এক বন্ধু আছে, তার বাস হাঙ্গেরিতে। মার্কো একবার বলেছিলেন, ‘ম্যান, ইউ শুড ডেট উইথ থ্রি গার্লস অ্যাট লিস্ট বিফোর ইউ গেট ম্যারিড।’ আজকের দিনে মনে হয় মার্কো আমাকে যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেটি যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত ছিল।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন মেয়ের বয়স ১৮ বছর হতে না হতে মা-বাবা থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজন তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে পড়েন। অন্যদিকে মোটামুটিভাবে যখন একজন ছেলে ২৪ কিংবা ২৫ বছরে পা রাখে, তখন থেকে তাকে বিয়ে করানোর জন্য পরিবার থেকে শুরু করে পাড়াপড়শি সবার কপালে ভাঁজ লেগে যায়। এটা ঠিক যে বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। তবে এ পরিবর্তনের সুফল এখনো আপামর জনসাধারণের কাছে পৌঁছায়নি। মানুষের মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারার খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি।

বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা অত্যন্ত রক্ষণশীল, ইউরোপের সাধারণ মানুষদের মতো আমরা এখনো উদার হতে পারিনি। বেশির ভাগ মা-বাবা সন্তানদের নিজেদের আঁচলে রাখতে পছন্দ করেন। সন্তানের আকাঙ্ক্ষা কিংবা স্বপ্নের কোনো মূল্য তাঁদের কাছে নেই। মা-বাবার কাছে সন্তান হচ্ছে শো অফের বস্তু।

সমাজের আট-দশজন মানুষের কাছে তাঁরা বলে বেড়াবেন যে তাঁদের সন্তান একজন চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলী অথবা বিসিএস ক্যাডার কিংবা সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং এর মধ্য দিয়ে তাঁরা সার্থকতা খুঁজে পান। আবার বিয়ের সময়ও আমার দেশের বাবা-মায়েরা প্রায় সময় সন্তানের মতামতের তোয়াক্কা না করে তাঁদের ইচ্ছাকে সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেন। মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে ছেলেকে ভালো কোনো পদে চাকরি করতে হবে, কিংবা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হতে হবে, ছেলের পরিবারের ঢাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাট থাকতে হবে। আবার দেখা যায় ছেলের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে মেয়েকে বনেদি ঘরের হতে হবে, মেয়েকে ধার্মিক ও পর্দানশিন হতে হবে। অথচ ইউরোপে কোনো মেয়ে যখন কোনো ছেলের সঙ্গে রিলেশনশিপে জড়াতে চায়, দুটি জিনিসকে তারা অগ্রাধিকার দেয়।

একটি হচ্ছে সততা এবং অন্যটি হচ্ছে কমিটমেন্ট। ছেলে ও মেয়ের উভয় পরখ করে দেখার চেষ্টা করবে যে তারা একসঙ্গে থাকার জন্য কতটুকু বদ্ধপরিকর এবং তারা একে অপরের জন্য ঠিক কতটা উপযোগী। কারও পারিবারিক কিংবা সামাজিক অবস্থা তাঁদের কাছে বিবেচনার বিষয় নয়। আর ইউরোপে সব শ্রেণির মানুষকে সমানভাবে সম্মান করা হয়। ইউরোপের সাধারণ মানুষ কোনো কাজকে খাটো করে দেখেন না।

হলিউড তারকা বেন অ্যাফ্লেক ও মার্কিন গায়িকা জেনিফার লোপেজ কয়েক দিন আগে বিয়ে করেন। বেন অ্যাফ্লেকের বয়স ৪৯ আর লোপেজের ৫২। বাংলাদেশে ২০ বা ২৫-এর পর ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য বিয়ের বিষয়টি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেই সমাজের ষোলোর মতো, ত্রিশ পার মানেই বার্ধক্যে উপনীত হওয়া। আবার বেন অ্যাফ্লেকের চেয়ে লোপেজ বয়সে প্রায় তিন বছরের বড়, বাংলাদেশের সমাজে এমনটিও কল্পনা করা দুরূহ। বেশির ভাগ মা-বাবা তাঁদের ছেলেদের জন্য এমন মেয়েকে খোঁজেন, যে বয়সে তার তুলনায় কনিষ্ঠ। প্রেমিকের তুলনায় প্রেমিকা বয়সে বড়, এ ধরনের কথাও বাংলাদেশে খুব একটা শোনা যায় না। আবার পারিবারিকভাবে যদি বিয়ের আয়োজন করা হয়, তাহলে দেখা যায়, অনেকে নিজ অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চান। বাংলাদেশে এমন অনেক জেলা আছে, যেসব জেলার মানুষ অন্য কোনো জেলার মানুষদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চান না। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের চিন্তাধারা থেকে অনেকে বের হয়ে এসেছেন।

বাংলাদেশে বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর। একটু আগে বলেছি যে বাংলাদেশে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের বয়স ত্রিশ পার হয়ে গেলে অনেক সময় তাদের জন্য বিয়েতে বসাটা কঠিন হয়ে যায়। আবার ত্রিশ পার হয়ে গেলে সরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ নেই। শুধু সরকারি চাকরি নয়, অনেক সময় অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরির সার্কুলারে আবেদনের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ত্রিশ বছর লেখা থাকে।

ইউরোপের দেশগুলোতে বয়সকে কেবল একটি সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্লোভেনিয়াতে আমার বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কয়েক শিক্ষার্থী আছেন, যাদের বয়স ৪০-এর বেশি এবং এ বয়সে তাঁরা নতুন করে ব্যাচেলর প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছেন। ইতালির এক গণমাধ্যমে জানতে পারলাম, কয়েক দিন আগে জিওসেপ্পে প্যাটেরনো নামের ৯৮ বছর বয়সী এক ভদ্রলোক ইউনিভার্সিটি অব পালেরমো থেকে ইতিহাস ও দর্শনের ওপর মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বাংলাদেশে এমনটি কল্পনা করা দুরূহ। শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বয়সের বাধ্যবাধকতা নেই। বিষয়টি আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ মুখে স্বীকার করে; কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই।

নোয়াম চমস্কির বর্তমান বয়স ৯৪। এ বয়সেও তিনি অত্যন্ত করিতকর্মা। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত বই লিখছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রায় তাঁর সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে তাঁকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানায়। ১৯৯৪ সালে নেলসন ম্যান্ডেলা যখন দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৭৫। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যকে ভুলে সব শ্রেণির মানুষকে এক করতে সমর্থ হয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার গণতান্ত্রিক অবকাঠামো বেশ শক্তিশালী।

এমনকি পুরো আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে শিল্পোন্নত দেশের নামও দক্ষিণ আফ্রিকা। নেলসন ম্যান্ডেলার দূরদর্শিতার কারণে আজকে দক্ষিণ আফ্রিকা এত দ্রুত উন্নতি করতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বর্তমান বয়স ৭৯। আজকের দিনে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বরাজনীতির মোড়ল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করছেন। নোয়াম চমস্কি, নেলসন ম্যান্ডেলা কিংবা জো বাইডেন কারও ক্ষেত্রে বয়স প্রতিবন্ধকতা হতে পারেনি। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর “যৌবনের গান” প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন—

‘বার্ধক্যকে সব সময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। বহু যুবককে দেখিয়াছি, যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধক্যের কঙ্কাল মূর্তি। আবার বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি, যাহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মতো প্রদীপ্ত যৌবন। তরুণ নামের জয়-মুকুট শুধু তাহারই, যাহার শক্তি অপরিমাণ, গতিবেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, তেজ নির্মেঘ আষাঢ় মধ্যাহ্নের মার্তণ্ডপ্রায়, বিপুল যাহার আশা, ক্লান্তিহীন যাহার উৎসাহ, বিরাট যাহার ঔদার্য, অফুরন্ত যাহার প্রাণ, অটল যাহার সাধনা, মৃত্যু যাহার মুঠিতলে।’

একবিংশ শতাব্দীর এ যুগে আমরা যেখানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলছি, সেখানে আমরা মানসিকভাবে নিজেদের কতটুকু পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি? আমাদের চিন্তাভাবনা কিংবা দৃষ্টিভঙ্গিতে কতটুকু পরিবর্তন এসেছে? নৈতিকভাবে আমরা কতটুকু সৎ থাকতে পেরেছি? আমার মনে হয় এ প্রশ্নগুলো নিয়ে এখন নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে।

  • লেখক; রাকিব হাসান রাফি, শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া।