স্কটল্যান্ডে যেভাবে নববর্ষ বরণ করা হয়
বছরের শেষ দিন পশ্চিমা দেশগুলোতে থার্টি ফার্স্ট ডে বা নিউইয়ার্স ইভ নামে পরিচিত। এই দিনটিকে ঘিরে সবার বেশ কৌতূহল থাকে। কে কীভাবে উদ্যাপন করবে, তা বেশ আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখা হয়।
যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত দেশ স্কটল্যান্ডে বছরের শেষ দিন উদ্যাপন এবং নববর্ষ বরণ এক বিশেষ উৎসব হিসেবে আয়োজিত হয়। তিন দিনব্যাপী এ বিশেষ উৎসব হগম্যানি ফেস্টিভ্যাল নামে পরিচিত, যা স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরায় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়।
নতুন বছরের প্রথম দিনকে এখানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটা ব্যাংক হলিডে বা রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন। এ ছাড়া এখানে কিছু সামাজিক রীতিও প্রচলিত আছে শত শত বছর ধরে।
বছরের শেষ দিনে এখানকার অধিবাসীরা নিজেদের ঘর-দুয়ার বিশেষভাবে পরিচ্ছন্ন করেন। যেহেতু শীতপ্রধান দেশ, তাই প্রত্যেকের ঘরেই একটি ফায়ারপ্লেস থাকে আগুন পোহানো কিংবা ঘর গরম রাখার জন্য। সেই ফায়ারপ্লেস এই দিন খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়।
নতুন বছরকে আলিঙ্গন করার আগে চলতি বছরকে ভালোভাবে সমাপ্ত করতে হয়। তাই এখানকার নিয়ম হলো কারও ব্যক্তিগত ঋণ থাকলে সেগুলো বছর শেষ হওয়ার আগেই পরিশোধ করা বা হালনাগাদ করা। স্থানীয় রীতিতে নববর্ষের প্রথম প্রহরে কারও বাড়িতে অতিথির আগমনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই নিয়ম ফার্স্ট ফুটিং হিসেবে পরিচিত। বছরের প্রথম মেহমান হিসেবে কারও বাড়িতে হাজির হওয়ার জন্য ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। নতুন মেহমানকে স্কটিশ কায়দায় পানীয় পরিবেশন করা হয় এবং উষ্ণ আতিথেয়তায় বরণ করা হয়।
অতিথিকে অবশ্য যেকোনো একটি উপহার নিয়ে আসতে হয়। একসময় যদিও অতিথি হিসেবে কাঙ্ক্ষিত ছিলেন একজন লম্বা, গাঢ় ও সুদর্শন কেউ, এখন অভ্যাগত যে কেউ সমান আতিথ্য পান।
অতিথি যে উপহার নিয়ে আসেন তাকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও প্রতিটি উপহার আলাদা অর্থ বহন করে। উপহার দ্রব্যের তালিকায় থাকা খাদ্যদ্রব্য যেমন স্কটিশ বান কিংবা শর্টব্রেড (বিস্কুট) কিংবা পানীয় (হুইস্কি) বহুল ব্যবহৃত। এ ছাড়া কয়লা কিংবা লবণও এককালে উপহার দ্রব্য হিসেবে পরিগণিত হতো। উপরন্তু, স্থানভেদে উপহার দ্রব্যের মধ্যে বৈচিত্র্যও দেখা যায়।
এ ছাড়া স্কটল্যান্ডের পার্বত্য অঞ্চলে একসময় কিছু বিশেষ রীতি পালন করা হতো, যা এখনো বিচ্ছিন্নভাবে চর্চা করা হয়। যেমন নববর্ষের প্রথম প্রহরে অগভীর নদীর পানি পান করা, ঘরে ছিটিয়ে দেওয়া ও গৃহপালিত পশুর ওপর ছিটিয়ে দেওয়া। এটাকে একধরনের ম্যাজিক মনে করা হয়। এরপর জুনিপার বৃক্ষের ডাল পুড়িয়ে ঘরে ধোঁয়া দেওয়া হয়, যাতে ঘর পরিষ্কার হয় এবং মন্দ আত্মা চলে যায়। কিছুক্ষণ পর ঘরের দরজা-জানালা খুলে দেওয়া হয়, যাতে নববর্ষের তাজা বায়ু ঘরে প্রবেশ করতে পারে এবং হুইস্কি পান করে এই পর্ব উদ্যাপন করা হয়।
করোনা অতিমারিতে গত দুই বছর স্কটল্যান্ডে হগম্যানি উদ্যাপন করা হয়নি। এ বছর তাই সফলভাবে বর্ষবরণ আয়োজনের জন্য কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সচেষ্ট ছিলেন। হগম্যানি ফেস্টিভ্যাল উদ্যাপন কমিটির পক্ষ থেকে বছরের শেষ দিন বিকেলে এডিনবরার চারটি পয়েন্টে সমকালীন সেরা শিল্পীদের অংশগ্রহণে ওপেন এয়ার কনসার্টের আয়োজন করা হয়। বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও এসব কনসার্টে হাজার হাজার দর্শকের সমাগম ঘটে।
এডিনবরা কাসলের নিচে প্রিন্সেস স্ট্রিট গার্ডেন্সে আয়োজন করা হয় বর্ষবরণের প্রধান অনুষ্ঠান। এখানে রাত নয়টা থেকে নববর্ষের প্রথম প্রহর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় কনসার্ট। অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয় যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্বের জনপ্রিয় পপ ডুয়াল পেট শপ বয়েজকে।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন লন্ডনের জনপ্রিয় ডিজে এল জো এবং স্কটল্যান্ডের রম্য উপস্থাপিকা সুসি ম্যাককাবে। নববর্ষের প্রথম প্রহরে এডিনবরা কাসলে অত্যাধুনিক আতশবাজির মাধ্যমে উদ্যাপন করা হয় সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
এ সময় উল্লসিত দর্শকেরা স্থানীয় রীতি অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে গোলাকার হয়ে স্কটিশ কবি রবার্ট বার্নসের অল্ড ল্যাং সিন নেচেগেয়ে বরণ করে নেন নতুন বছর। এ গানের কিয়দংশের অর্থ হলো পুরোনো বছর এবং পুরোনো বন্ধুকে আমরা যেন ভুলে না যাই।