আল বাইকের সেই বানরুটি ও সস, প্রবাস জীবনের টিকে থাকার লড়াই

হঠাৎ করেই ৮-৯ বছর পুরোনো স্মৃতিতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। উপলক্ষ ছিল আল বাইকের একটি বানরুটি আর সসের ছবি। এই সাধারণ খাবার দুটো আমার প্রবাস জীবনের এক বিশেষ অধ্যায়ের প্রতীক। স্মৃতিটা ২০১৬ সালের আশপাশের। তখন সৌদি আরবে নতুন শ্রম আইনের কারণে অনেক প্রবাসীর মতো আমার জীবনও বদলে যাচ্ছিল। আমি ২০১২ সাল থেকে একটি কোম্পানিতে ভালো বেতনে কর্মরত ছিলাম এবং ২০১৫ সালের দিকে একটি ভালো পদে উন্নীত হয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৬ সালের নতুন ‘সৌদিকরণ’ আইনের ফলে নির্দিষ্ট কিছু পদে প্রবাসীদের কাজ করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর শুরু হয় টিকে থাকার এক নতুন লড়াই। ভালো চাকরি হারিয়ে জীবন ধারণের জন্য নানা কাজ করতে হয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল ফুড ডেলিভারি। ডিউটি শেষে বাড়তি আয়ের জন্য সন্ধ্যায় এই কাজ করতাম। আল বাইক সৌদি আরবের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সাশ্রয়ী একটি খাবারের দোকান। এর চিকেন ব্রোস্ট দারুণ জনপ্রিয়। তখন চার পিস চিকেন, বানরুটি আর সসসহ প্যাকেজের দাম ছিল মাত্র ১৩ রিয়াল (বর্তমানে ৩ রিয়াল বেড়েছে)। সন্ধ্যার দিকে আল বাইকের অর্ডার বেশি আসত এবং ডেলিভারির জন্য ৩০-৪০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো।

দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

এই অপেক্ষার সময়ে ক্ষুধা পেলে অদ্ভুত এক কাজ করতাম। আল বাইকের কাউন্টারে কর্মরত ৮০% বাংলাদেশি কর্মীদের থেকে আমি বিনা মূল্যে সেই বানরুটি আর সস চেয়ে নিতাম। পকেটে টাকা (রিয়াল) ছিল না এমন নয়, কিন্তু প্রতি মাসে খরচের হিসাব মেলাতে গিয়ে হাত যেন আপনা থেকেই গুটিয়ে আসত। মাস শেষের আর্থিক টানাপোড়েনের কথা ভেবে সেই ফ্রি বানরুটি আর সস খেয়েই সন্ধ্যার ক্ষুধা মেটাতাম। গাড়িতে বসে বা অপেক্ষারত অবস্থায় খেয়ে নিতাম।

এই বানরুটির গল্প শেয়ার করতে গিয়ে প্রবাস জীবনের অনেক না বলা কথা মনে পড়ে গেল। ২০১৬ সালের পর থেকে আমার মতো হাজারো প্রবাসী কোনোরকমে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ এই লড়াইয়ে সফল হয়ে নতুন পথ খুঁজে পেয়েছেন, কেউবা প্রবাস জীবনকে চিরতরে বিদায় জানিয়েছেন। প্রবাস জীবন মানেই রঙিন স্বপ্ন নয়, এর অন্য পিঠে লুকিয়ে থাকে এমন হাজারো সংগ্রামের গল্প। ভালো থাকুন সব প্রবাসী, তাঁদের স্বপ্নগুলো বেঁচে থাকুক।