স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ: কানাডা–আমেরিকার অর্থনৈতিতে কেমন প্রভাব পড়বে

কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন, যার মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকো আছে। ওভাল অফিসে স্বাক্ষরিত দুটি প্রেসিডেন্টীয় ঘোষণার মাধ্যমে ট্রাম্প স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে কোনো দেশ বা সংস্থার জন্য কোনো ব্যতিক্রম রাখা হয়নি।

ট্রাম্প বলেন, ‘এটি একটি বড় বিষয়। এটি আমেরিকাকে আবার ধনী করার সূচনা।’ শুল্ক আরোপের কারণ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রসঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, এই শুল্ক আরোপের মূল উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামশিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া এবং জাতীয় অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার স্বার্থ রক্ষা করা।

ট্রাম্প আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কানাডীয় স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর নির্ভরশীলতাই প্রমাণ করে যে ‘কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হওয়া উচিত’, যা তিনি তিন মাস আগে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকেই দাবি করে আসছেন।

ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেন, ‘স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম শুল্ক বিদেশি ডাম্পিং বন্ধ করবে, দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করবে এবং আমেরিকার অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্পকে সুরক্ষিত করবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম সরবরাহকারী দেশ কানাডা। ২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকৃত অ্যালুমিনিয়ামের ৭৯ শতাংশই এসেছে কানাডা থেকে। কানাডা গত বছর ২৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমেরিকায় রপ্তানি করেছিল।

এই রপ্তানি কমে গেলে কানাডার কুইবেক, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, অন্টারিও এবং আলবার্টা প্রদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। শুধু অ্যালুমিনিয়াম ইন্ডাস্ট্রিতেই কানাডায় কাজ করছে ৯ হাজার ৫০০ জন।

স্টিলের ক্ষেত্রেও কানাডা শীর্ষ সরবরাহকারী। কানাডার স্টিল উৎপাদনকারীদের সংগঠন কানাডিয়ান স্টিল প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (সিএসপিএ) ও কানাডিয়ান চেম্বার অব কমার্স ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। কানাডার ইউনাইটেড স্টিল ওয়ার্কার্স (ইউএসডব্লিউ) ইউনিয়নের জাতীয় পরিচালক মের্টি ওয়ারেন বলেন, ‘ট্রাম্পের শুল্ক সরাসরি শ্রমিক ও সমাজের ওপর আঘাত। কানাডার উচিত সমান প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।’ ইউএসডব্লিউর আন্তর্জাতিক প্রেসিডেন্ট ডেভ ম্যাককল বলেন, ‘কানাডা কোনো সমস্যার কারণ নয়। এই শুল্ক উভয় দেশের শ্রমিকদের ক্ষতি করবে।’

এখন কানাডার জন্য কিছু প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যগুলোর ওপর পাল্টা শুল্ক বসানো আর কানাডার অভ্যন্তরীণ স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন আরও জোরদার করে নতুন বাণিজ্য দেশ খোঁজা, বিশেষ করে ইউরোপ ও এশিয়ায় দেশগুলোতে।

অন্যদিকে মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের খরচ বেড়ে যাবে, যা অটো, নির্মাণ ও অ্যারোস্পেস শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়তে পারে, কারণ কোম্পানিগুলো তাদের ব্যয় সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেবে। কানাডা ও অন্য দেশ যদি পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশ্ববাণিজ্য আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে, যা বিভিন্ন দেশের শিল্প ও বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যদি কানাডা, ইউরোপ বা এশিয়ার দেশগুলো পাল্টা শুল্ক বসায়, তাহলে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে। চীনের মতো দেশগুলো বিকল্প বাজার দখলের সুযোগ নিতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক প্রভাব কমাতে পারে।

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আবারও নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। এটি শুধু দুটি দেশের অর্থনীতিকে নয়, পুরো বিশ্ববাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, কানাডা এই পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। আগামী দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কীভাবে নতুন সমীকরণে প্রবেশ করে সেটা এখন দেখার বিষয়।