‘এসেছিলে …সমুখের পথ দিয়ে’: রবীন্দ্রনাথের সুইডেন সফরের প্রামাণ্যচিত্র

১০ ডিসেম্বর, সুইডেনে নোবেল পুরস্কার বিতরণী দিবস। নোবেল দিবস এলেই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা চলে আসে আলোচনায়। ১৯১৩ সালে কবি প্রথম এশীয়, যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন। আরও অনেক অনেক পরে আরও কয়েকজন বাঙালি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। অমর্ত্য সেন ১৯৯৮ এ, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ এ, সর্ব  শেষে পেলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৯ এ।

১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার নিতে সুইডেন আসেননি। ওনার হয়ে তৎকালীন সুইডেন এ ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত পুরস্কারটি গ্রহণ করেন। কবি এসেছিলে অনেক পরে ১৯২১ সালে মে মাসে। এটি ছিল কবির প্রথম সুইডেন ভ্রমণ। আমেরিকা থেকে ভারতবর্ষে ফেরার পথে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন হয়ে উনি স্টকহোম আর উপাসালা শহরে এসেছিলেন। ভ্রমণের চেয়ে দায় ছিল বেশি। নোবেল পুরস্কার পেলে নোবেল ভাষণ দিতে হয়, সেটাই দিলেন এই ভ্রমণকালে। আমরা জানি যে রবীন্দ্রানাথ ঠাকুর সুইডেনে এসেছেন দুইবার। একবার, ১৯২১ সালে, আর দ্বিতীয়বার ১৯২৬ সালে।

রবীন্দ্রনাথ  ঠাকুরের স্থিরচিত্র সচরাচর দেখা যায়, প্রামাণ্যচিত্র বেশ বিরল। আরকিভে নিউজ রিল ঘেঁটে দুটি ভ্রমণের প্রামাণ্যচিত্রের খোঁজ পেলাম। নিচে সংযোজন করলাম।https: //www. filmarkivet. se/movies/veckorevy-1921-05-23/? fbclid=IwAR33QpQFH2LSEwPD-XwzLU-NGAOS-pSbNocp0bCvD0ALVps4W6iqXp_QGtU

প্রথম প্রামাণ্যচিত্রটি ১৯২১ সালের মে মাসের। ভিডিও ক্লিপের ১৩:২৩ -১৫:৫৫ মিনিট অংশে কবিকে দেখা যাচ্ছে। উনি প্রথমে স্টকহোম ভ্রমণ করেন। ১৪: ৩৭ মিনিটে কবিকে দেখা যাচ্ছে আর্চবিশপ সোদেরব্লুম–এর সঙ্গে । আর্চবিশপও  ১৯৩০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। আর্চবিশপ কবির এই ২৮ এ মের ভ্রমণের বিবরণ তার Sundar Singh’s Message (১৯২৩) গ্রন্থে লিখেছেন।

২য় যাত্রায় কবির সঙ্গে সঙ্গী ছিলেন লর্ড সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিনহা, প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ, ওনার স্ত্রী  নির্মল-কুমারী-মহলানবিশ। ভিডিও ক্লিপের ৭:৩৭-৮:০৮ মিনিটি অংশে কবিকে ওনার সফরসঙ্গীদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে।

ভিডিও ক্লিপে কবির সঙ্গে দেখা যাচ্ছে বিখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ এবং ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে সংযুক্ত প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশকে। কবির পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ওনার স্ত্রী, কবির খুব কাছের মানুষ এবং সচরাচরের সফর সঙ্গী নির্মলকুমারী মহলানবিশ।

এখানে উল্লেখযোগ্য যদিও প্রথম ক্লিপে ওনাকে মহান ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও দ্বিতীয় ক্লিপে ওনাকে ভারতের ‘ঋষি’ জন ডাকা হয়েছে। যখন ইউরোপ ডেকাডেন্স, শিল্প বিপ্লব আর প্রগতিবাদে হিমশিম খাচ্ছে, কবি ছিলেন নিজ গাম্ভীর্যে স্থির ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতিকৃতি। এভাবেই কবিকে আধো আলো–ছায়ায় আধো কবি, আধো-দার্শনিকের অবতার অবয়বে তদানিন্তন সুইডিশ সংবাদমাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছিল।

তথ্য  উৎস

ছবি ও প্রামাণ্য চিত্রের উৎস