উচিটা শহরে মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রদের ধরতে আইস অভিযান!
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্টাম্পের মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইনের (মেগা) আওতায় অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। কানসাস অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর উচিটাসহ বিভিন্ন শহরে কয়েক দিন ধরে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। বিশেষ করে পড়ালেখা করার উদ্দেশ্যে আসা ছাত্রছাত্রীরা এ অভিযানের শিকার। সপ্তাহের ছুটির দিন রোববারও অভিযান থেমে নেই। শহরের বিভিন্ন গ্যাস স্টেশন-গ্রোসারি শপ, লিকার শপে অভিযুক্ত ছাত্রছাত্রীদের খুঁজতে থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রোববার ছুটির দিন একজন ছাত্রকে কাজের জায়গায় না পেয়ে তাঁর বাসায় অভিযান চালায় আইস। এ সময় অভিযানের খবরে বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ এশিয়ান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়-শঙ্কা বিরাজ করে। জানা যায়, যেসব ছাত্রছাত্রী কোনো কারণে সংশ্লিষ্ট ইউনিভার্সিটি থেকে ড্রপআউট হয়ে স্ট্যাটাস হারিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এ অভিযান চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উচিটা স্টেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক ছাত্র জানান, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ এশিয়ার নানা দেশ থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা অন ক্যাম্পাস চাকরির বাইরে বিভিন্ন শপে কাজ করে থাকেন। এতে তাঁদের টিউশন ফি, থাকা-খাওয়াসহ প্রতিদিনের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকটা সহজ হয়ে থাকে। সমস্যা বাধে তখনই, যখন একজন ছাত্র তাঁর কোর্স শেষ করার পর চাকরি খুঁজতে যান। ফরেন স্টুডেন্টদের জন্য চাকরির বাজার খুব কষ্টকর। ফলে তাঁরা অড জব করে থাকেন। এ সময়টার কষ্ট, যা একজন ছাত্র ছাড়া কেউ বুঝবেন না। ছাত্রজীবন শেষ করে চাকরি না পেলে অনেক ছাত্র যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা স্ট্যাটাস হারিয়ে ফেলেন। তারপরও অনেকে হাল ছাড়েন না। অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে বিয়ে করে সে দেশের নাগরিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আবার অনেকে নিজের যোগ্যতায় চাকরিসহ যুক্তরাষ্ট্রে থাকার স্ট্যাটাস পেয়ে যান। একাধিক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করতে আসা ছাত্রছাত্রীদের সংশ্লিষ্ট দপ্তর একজন ছাত্রের গতিবিধি চিহ্নিত করতে চাইলে (আই-৯৪ রেকর্ড) চেক করলে সব ইনফরমেশন ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভেসে আসে।
এদিকে এই অভিযানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে স্ক্যামার গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মূলত একজন ছাত্রকে কিছুদিন পরপর (আই-৯৪) আপডেট চেক করতে হয়। সম্প্রতি উচিটা স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্র তাঁর (আই-৯৪) আপডেট করতে ভুলে গেছেন। এই ভুলের ফাঁদে ফেলে স্ক্যামার গ্রুপ তাঁর কাছ থেকে এক হাজার ডলার হাতিয়ে নেয়। সম্প্রতি ধর্ষণ ও সমকামিতার অভিযোগে উচিটা স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের ম্যাককিনলে হল থেকে মোহাম্মদ বরকত মিয়াকে সেজউইক কাউন্টি শেরিফ (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) গ্রেপ্তার করেছে। তিনি একজন ছাত্র এবং স্নাতক সহকারী। উচিটা স্টেট ইউনিভার্সিটি নিশ্চিত করেছে, তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। বিস্তারিত সেজউইক কাউন্টি শেরিফ অফিসের অনলাইন বুকিং শিটে দেওয়া আছে। ঘটনাটি নভেম্বর ২০২৪–এর। ঘটনাটি এ জন্য টেনে আনা, যাঁরা ছাত্র হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করতে আসেন তাঁদের মনে রাখা উচিত, এ দেশের নিয়মকানুন মেনে ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের বাইরে চলাফেরা দরকার। বাংলাদেশি একাধিক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে এসে মোহাম্মদ বরকত মিয়া উচিটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ছাত্র অবস্থায় ক্যাম্পাসের বাইরে উচিটা শহরে এশিয়ান গ্রোসারিতে কিছুদিন কাজ করেছেন, যা সচরাচর সব ছাত্রই করেন। এসব কাজ গোপনে করা হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভালো করেই জানে, যুক্তরাষ্ট্রে থার্ড আই (তৃতীয় নয়ন) সব সময় প্রবাসী লোকজনকে সতর্ক দৃষ্টিতে দেখে এবং যাঁদের অতীত রেকর্ড খারাপ, তাঁদেরও ওয়াচে রাখে। তারপরও অনেকে জেনে না–জেনে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে থাকেন। যা দেশের জন্য খুবই লজ্জাজনক। সেই সঙ্গে এসব ঘটনা বাংলাদেশ কমিউনিটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়ে যায়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সবাইকে আইন মেনে চলার পরামর্শ দেন।