ভাষাসংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানাল ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল
‘আমরা ছাড়া কে পেরেছে মায়ের ভাষাকে এমন করে ভালোবাসতে। আমরা ছাড়া কে পেরেছে ভাষার জন্য প্রাণ বিলিয়ে দিতে’। মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গ করা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রতিবছরের মতো এবার ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল আয়োজন করেছিল অমর একুশের (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস) অনুষ্ঠান। গতকাল রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) স্কুল প্রাঙ্গণে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং কার্যকরী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থেকে ভাষাসংগ্রামীদের স্মরণ করেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় প্রভাতফেরির মাধ্যমে দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে। প্রভাতফেরিটি স্কুলের খেলার মাঠ থেকে শুরু হয়ে পুরো স্কুল প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারের বেদিমূলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
বেলা ১১টায় বাংলা স্কুল সাধারণ সম্পাদক কাজী আশফাক রহমান সবাইকে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২০২৩–এ স্বাগত জানান। তারপর সবাই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত গেয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। এ পর্যায়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি প্রসারে অসামান্য অবদান রাখা বিশিষ্ট সমাজকর্মী, ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি, শাহ আলম সৈয়দের হাতে একুশে সম্মাননা ২০২৩ তুলে দেওয়া হয়। শাহ আলম সৈয়দ বাংলাদেশে অবস্থান করায় অনুষ্ঠানের আগেই তাঁর বাড়িতে গিয়ে এ সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। একুশে সম্মাননা তুলে দেওয়ার সেই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য নাজমুল আহসান ও আবদুল জলিল এবং বাংলা স্কুল সভাপতি মসিউল আযম খান স্বপন। এর পরপরই সভাপতি মসিউল আযম খান স্বপনের সভাপতিত্বে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ‘একুশের চেতনা ও প্রবাসে বাংলা ভাষার চর্চা’বিষয়ক আলোচনায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন স্কুলের অভিভাবক ফারহানা রহমান ও সাবিহা নাজনিন। ব্যস্ততার কারণে অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকতে না পারলেও, শুভেচ্ছা বক্তব্য লিখে পাঠান স্থানীয় সংসদ সদস্য আনুলাক চানটিভং। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোচনা করেন দ্য গ্রেঞ্জ পাবলিক স্কুলের অধ্যক্ষ জোডি পেটারসন।
এই পর্ব শেষে বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একটি অনবদ্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে ভাষাসংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানায়। একক আবৃত্তি, একক গান, আবৃত্তি এবং সমবেত সংগীতের প্রতিটিতে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখে। পরিবেশনায় অংশ নেয় রুশনান, স্বপ্নীল, স্বাধীন, মারজান, জেইনা, জাহিয়া, সূহানা, মুহাইমিন, সাজফা, মুন্নাজ্জাহ, অনিরুদ্ধ, নাশভা, রুকসার, নাজিফা, নুসাইবা, মাহরুস, জারিফ, জারিফা, নুসাইবা হক, অর্ণা, রাইনা, সোহারদিতি, ইয়ারা, অস্কার, রাইয়ান, অলিভিয়া, আদিল, সিমরিন, ইয়াশফিন ও আদ্য।
মহান ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে একটি চমৎকার ক্ষুদ্র নাটিকা ছাত্রছাত্রীরা পরিবেশন করে, যা উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। ছাত্রছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের এ পর্ব অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। নাটিকার রচনা, নির্দেশনা ও পরিচালনা ছিলেন মসিউল আযম খান স্বপন। এ পর্বের শেষে অধ্যক্ষ রুমানা খান মোনার নেতৃত্বে শ্রেণি শিক্ষকেরা একটি আকর্ষণীয় দেশের গান পরিবেশন করেন। শিক্ষকেরা হলেন শায়লা ইয়াসমিন নুসরাত, অনিতা মণ্ডল, বিশাখা পাল ও নুসরাত মৌরি। এ পুরো পর্বটি পরিচালনা ও সঞ্চালনা করেন শ্রেণি শিক্ষক শায়লা ইয়াসমিন নূসরাত, অনিতা মণ্ডল, বিশাখা পাল ও নুসরাত মৌরী।
শেষ পর্বে পরিবেশনা নিয়ে আসেন সিডনির বরেণ্য শিল্পীরা। গানে গানে শ্রদ্ধা জানান আনিসুর রহমান, রোকসানা বেগম, দিনা ইভানা, লুৎফা খালেদ ও লোক সংগীত দল আরশিনগর। আরশিনগরের সদস্যরা হলেন তারিক, মাসুদ, তালাত, হিমেল ও শিপলু। কবিতায় শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন মৌমিতা চৌধুরী ও শাহিন শাহনেওয়াজ। কি–বোর্ডে ছিলেন মিঠু স্বপ্ন। পুরো অনুষ্ঠানে তবলায় সংগত করেন বিজয় সাহা। দোতারা ও বাঁশিতে ছিলেন তারিক আহমেদ। শব্দ নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেন স্কুলের কার্যকরী কমিটির সহসভাপতি ফয়সাল খালিদ শুভ ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য নাজমুল আহসান খান। আমন্ত্রিত অতিথি পর্বে সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন ফায়সাল খালিদ শুভ। কারিগরি নিয়ন্ত্রণে ছিলেন রাফায়েল রোজারিও। শহীদ মিনার নির্মাণ ও মঞ্চ সজ্জার দায়িত্ব পালন করেন ইয়াকুব, রাফায়েল, স্বপন, শুভ, শাহিন, মাসুদ ও তারিক। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ইয়াকুব আলী ও নুরুল ইসলাম শাহিন। আপ্যায়ন ছিলেন সংগীত, শাহীন, টপি, সম্প্রীতি, নূরীণ, সৃজা, রাত্রি, আলিশা, তাহিয়া, তানিয়া ও দৃপ্ত। পুরো আয়োজনজুড়ে বাংলা বইয়ের পসরা নিয়ে আসে প্রশান্ত পাড়ের প্রথম বাংলা বইয়ের দোকান প্রশান্তিকা প্রকাশনী। প্রধান সমন্বয়কারী নাজমুল আহসান খানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলা স্কুলের অমর একুশের (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস) এবারের আয়োজন বেলা দুইটার দিকে শেষ হয়।
ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল প্রতি রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সব বাংলা ভাষাভাষীর জন্য উন্মুক্ত থাকে।
**দূর পরবাসে লেখা ও ছবি পাঠাতে পারেন [email protected]–এ।