সিডনিতে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনে মুখ্যমন্ত্রী
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দঘন পরিবেশে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন করেছে সিডনির বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল। দিবসটি উদ্যাপনের প্রথম পর্বে গত ২৬ মার্চ সিডনির কনস্যুলেট প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. সাখাওয়াত হোসেন এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দিবসটি উদ্যাপনের দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিডনির একটি পাঁচ তারকা হোটেলে। স্বাধীনতা ও জাতীয় উদ্যাপনে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল। আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ক্রিস মিনস।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা সংসদ সদস্য মার্ক রেমন্ড স্পিকম্যান, পর্যটনমন্ত্রী সংসদ সদস্য জন গ্রাহাম, বহুসংস্কৃতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য স্টিফেন কাম্পার, কর্ম স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তামন্ত্রী সংসদ সদস্য সোফি কটিস, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী অনুলাক চানথিভংসহ আরও অনেক ছায়ামন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, কনসাল জেনারেল, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং আমন্ত্রিত বাংলাদেশ কমিউনিটি বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ান আর্মি ব্যান্ড বাদ্যযন্ত্রে বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এ সময় প্রবাসে রাষ্ট্রীয় সেনাদের সুসজ্জিত ব্যান্ডের বাদ্যযন্ত্রে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের এত সুন্দর উপস্থাপনে আমন্ত্রিত বাংলাদশিরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
এরপর প্রথমেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কনসাল জেনারেল মো. সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য প্রধান অতিথিসহ সব অতিথিকে ধন্যবাদ জানান। তাঁর বক্তব্য শেষে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার ওপর নির্মিত নিয়ে একটি বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর অতিথিদের মধ্যে প্রথমে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্রিস মিনস।
তিনি বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার বন্ধুত্বের আরও দৃঢ়তা কামনা করেন। অনুষ্ঠানের আরও বক্তব্য রাখেন রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা সংসদ সদস্য মার্ক রেমন্ড স্পিকম্যান এবং বহুসংস্কৃতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য স্টিফেন কাম্পার।
অনুষ্ঠানটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন সিডনি প্রবাসী প্রবীণ রাজনৈতিক-সামাজিক ব্যক্তিত্ব গামা আব্দুল কাদির। তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করি বাংলাদেশের জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যুক্ত হওয়ার। অনুষ্ঠানটি খুব সুন্দর হয়েছে। সবচে ভালো লেগেছে অনুষ্ঠানটি খুব গোছানো ছিল, বাহুল্য কিছু ছিল না বলে। আর অন্যদিকে, জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানগুলোতে মনে হয় যেন বাংলাদেশে আছি। আজকেও এর ব্যতিক্রম হয়নি, স্বাধীনতা দিবস উপভোগ করছি। ধন্যবাদ কনস্যুলেট জেনারেলকে এমন সুন্দর একটি সন্ধ্যা আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।’
অনুষ্ঠান নিয়ে আমন্ত্রিত অতিথি প্রবাসী বাংলাদেশি অস্ট্রালেশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল একাডেমির কর্ণধার শ্রাবন্তী আশরাফী বলেন, ‘চমৎকার একটি অনুষ্ঠান হয়েছে। একদম চোখ ধাঁধানো জমকালোও নয় আবার খুবই সাধারণ সাদাসিধেও নয়। অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশের সঙ্গে মানানসই একটি অনুষ্ঠান উপভোগ করেছি আমরা। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার আর্মির বাদ্যযন্ত্রে যখন “আমার সোনার বাংলা”র সুর বেজে উঠল, তখন খেয়াল করলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশিদের চোখে যেন এক আনন্দের উচ্ছ্বাসের ঝলক দেখা দিল।
আবার যখন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন এবং প্রধানমন্ত্রীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছিল, এ সময় মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য অস্ট্রেলীয় মূলধারার নেতাদের চেহারায় একরম বিস্ময় আর অবাক হওয়া দেখলাম, যেন এতদিন তাঁদের কল্পনায় বাংলাদেশের এমন কোনো দৃশ্যই ছিল না। ধন্যবাদ কনসাল জেনারেল ও সব কর্মকর্তাকে।’
অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার মূলধারায় বাংলাদেশকে তুলে ধরার প্রচেষ্টার কথা জানিয়েছেন কনসাল জেনারেল মো. সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানে রাজ্যের প্রিমিয়ার এসেছেন, বিভিন্ন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কূটনৈতিকরা এসেছেন, তাঁদের কাছে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশের উন্নয়নগুলো প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রথম বিশ্বের দেশ অস্ট্রেলিয়ার কাছে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বাড়াতে পেরেছি বলে আশা করছি।’
অন্যদিকে, অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণের এক পাশে বাংলাদেশের কৃষ্টি তুলে ধরে এমন সব জিনিসপত্র যেমন জামদানি শাড়ি, পোশাক, কারুকার্যসম্বলিত সিরামিকের জিনিসপত্র, রিকশা পেইন্টিং ইত্যাদি প্রদর্শন করা হয়। তা ছাড়া অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী রুপন্তী আকিদ। তাঁর সাবলীল সঞ্চালনা সবার প্রশংসা কুড়ায়।