স্বাধীনতার অঙ্গীকার: দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ
আজ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস। প্রতিবারের মতো এবারও দিনটি উদ্যাপিত হবে, স্মরণ করা হবে বীর শহীদদের আত্মত্যাগ, উড়বে লাল-সবুজের গৌরবময় পতাকা।
৫৩ বছর ধরে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের নানা আয়োজন আমরা দেখে এসেছি—প্যারেড, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সম্মাননা প্রদান, দেশজুড়ে উৎসবের আমেজ। এসব আমাদের গর্বিত করে, অনুপ্রেরণা দেয়। তবে এবারের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে আরেকটু গভীরভাবে ভাবা দরকার—শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং সত্যিকারের স্বাধীনতার অর্থ কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে?
আমরা এবারের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারি। এমন কিছু করি যা শুধু আনুষ্ঠানিক নয়, যা হৃদয় ছুঁয়ে যায় এবং প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার চেতনাকে জাগিয়ে তোলে। হয়তো একটি গল্প, একটি দৃশ্য, একটি মুহূর্ত—যা গোটা জাতিকে নড়ে বসতে বাধ্য করবে।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
একটি চমকপ্রদ প্রতিবেদন তৈরি করি, যা শুধু তথ্য নয়, অনুভূতির ঢেউ তুলবে সবার মনে। এমন কিছু সৃষ্টি করি, যা স্বাধীনতার প্রকৃত উপলব্ধি জাগিয়ে তুলবে, যেন দেশবাসী বুঝতে পারে—এ স্বাধীনতা শুধু অতীতের স্মৃতি নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যতের শক্তি ও পথচলার দিশা।
একটি সত্যিকারের মহৎ উদ্যোগ শুরু করতে হলে প্রথমেই ভাবতে হবে—এই জাতির সবচেয়ে বড় সংকট কী এবং কীভাবে তা সমাধান করা যায়। কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, এমন কিছু করতে হবে, যা সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আনতে পারে, যা জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ সংকট হলো শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। যখন শিক্ষাব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়, তখন একটি জাতির ভবিষ্যৎও অন্ধকারে হারিয়ে যায়। তাই স্বাধীনতা দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে একটি সত্যিকারের শিক্ষাবিপ্লব শুরু করা যেতে পারে, যা হতে পারে জাতির জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য হবে শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরি করা, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা, দেশপ্রেম ও সৎ জীবনযাপনের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া, শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তোলা এবং একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা, যা শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে।
এই বিপ্লব শুরু করার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ব্যাপক প্রচারণা, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে চালানো যেতে পারে। স্বাধীনতা দিবসে ‘দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষা, দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা যেতে পারে, যেখানে ভিডিও, প্রবন্ধ ও সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে সরাসরি মাঠপর্যায়ে কাজ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা সভা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে তাদের সচেতন করে তোলা সম্ভব। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে।
এ ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে একটি দাবির আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, যার মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ড ও প্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বচ্ছ নিয়োগ ও পরীক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে দুর্নীতি থেকে মুক্ত একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কেবল একটি ক্যাম্পেইন নয়, এটি জাতির ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য বাস্তবধর্মী আন্দোলন হবে। যদি শিক্ষাক্ষেত্রে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে দেশের অন্যান্য খাতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। সত্যিকারের মুক্তি তখনই আসবে, যখন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি ন্যায়ভিত্তিক, জ্ঞানসমৃদ্ধ ও সৎ পরিবেশে শিক্ষালাভ করবে।
তাই এখনই সময়, আর দেরি নয়। এই উদ্যোগ স্বাধীনতার চেতনার বাস্তব প্রতিফলন হবে। সময় নষ্ট না করে আজই প্রচারণা শুরু করা যাক, সচেতনতা সৃষ্টি করা যাক, আন্দোলন গড়ে তোলা যাক। একসঙ্গে কাজ করলে এটি হতে পারে জাতির জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে বদলে দেবে।
এবারের স্বাধীনতা দিবস শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এক গভীর উপলব্ধির মুহূর্ত—রমজানের পবিত্রতা আর আত্মশুদ্ধির আহ্বানের সঙ্গে মিলিয়ে জাতির নতুন জাগরণের সময়।
এই ক্ষণ যেন শুধু অতীতের গৌরব স্মরণে সীমাবদ্ধ না থাকে; বরং তা হয়ে উঠুক ভবিষ্যতের জন্য নতুন সংকল্পের দিন। দুর্নীতিমুক্ত, সুশিক্ষিত, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি নিক সবাই। আমরা যেন শপথ নিই—এই দেশকে আর পেছনে ফিরে যেতে দেব না, স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ আমরা নিশ্চিত করব।
এই স্বাধীনতা দিবস হোক সত্যিকারের নবজাগরণের সূচনা, যেখানে আমরা কেবল স্বপ্ন দেখব না, বরং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাব।
লেখক: রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক