রূপকথা আর সাহিত্যে কানাডার ফুল

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিসগুলোর মধ্যে ফুল অন্যতম। ফুলের জন্য রয়েছে মানুষের অপরিসীম মুগ্ধতা। তাই সব পবিত্র ও সুন্দরের সঙ্গে ফুলের তুলনা করা হয়। পবিত্র কোরআনে বেহেশতের সৌন্দর্য বর্ণনায় ফুলের উল্লেখ করা হয়েছে। সব দেবতাকে তুষ্ট করতে ফুল দিয়েই পূজা হয়। কবির গানে প্রিয়ার জন্য থাকে ফুলের উপমা। সামাজিক সব আয়োজনে ফুলের জন্য রয়েছে বিশেষ স্থান। উন্নত দেশগুলোয় সিটি করপোরেশন সারা বছর ফুল দিয়ে শহর সজ্জার জন্য বড় বাজেট বরাদ্দ করে থাকে। শুধু তা–ই নয়, সামান্য আয়ের মানুষেরাও তাদের বাড়ির বাগান সাজিয়ে তোলে অনেক রকম ফুলে; যার জন্য ব্যয় হয় অনেক অর্থ ও শ্রম। কানাডা আসার পর ফুলে ফুলে সাজানো রাস্তা ও পার্ক আর মানুষের বাড়ির আঙিনা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। বাংলাদেশে দেখা অনেক ফুলের নাম আমি জানতাম এবং চিনতাম কিন্তু কানাডার এই হরেক রকম ফুল আমার জন্য ছিল নতুন। পরিজনহীন কানাডায় এত এত ফুলের নাম ও জাত এসব প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার কেউ না থাকলেও আমার হাতে ছিল স্মার্টফোন ও গুগল। আমি পথের ধারে, বিস্তীর্ণ প্রান্তরে বা কারও বাড়ির আঙিনায় ফুটে থাকা ফুলের ছবি তুলে গুগলের সাহায্য নিয়ে কয়েকটি ফুল সম্পর্কে কিছুটা জেনেছি। সেটা জানতে গিয়ে লক্ষ করেছি যে প্রায় প্রতিটি ফুল কোনো না কোনোভাবে কিছু পৌরাণিক উপকথার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সেই জানা থেকে কানাডার কিছু পরিচিত ফুলের কয়েকটি উপকথা আজ জানাচ্ছি।

শীতকালে কানাডার মাটি বরফে ঢেকে থাকে। সিটি করপোরেশন রাস্তার বরফ সরিয়ে চলাচল উপযোগী করে দিলেও বিস্তীর্ণ মাঠ ও আঙিনায় জমে থাকে বরফ। বসন্তের শুরুতে তাপমাত্রা বাড়লেই বরফ গলতে শুরু করে; বের হয়ে আসে বরফে চাপা পড়ে থাকা ঘাস ও পাথর। এ সময় পাতা ওঠার আগেই ক্রোকাস ফুল মাথা তুলতে শুরু করে। বেগুনি, হলুদ আর সাদা রঙের ক্রোকাস ফুল বেশি দেখতে পাওয়া যায়। ক্রোকাস ফুলের পরাগ দিয়ে তৈরি হয় পৃথিবীর সবচেয়ে দামি রং জাফরান। তাই ক্রোকাসের বাণিজ্যিক চাহিদা আছে এবং অনেক দেশেই ক্রোকাসের চাষ করা হয়। ক্রোকাস ফুলের জন্ম নিয়ে দুটি উপকথা আছে। বলা হয় যে ক্রোকাস নামের এক তরুণ আর বনের পরি স্মাইলেক্সের প্রেম হয়। স্মাইলেক্স পরি, পাখা মেলে উড়ে উড়ে বেড়ায়। ক্রোকাস থাকে একা ও নিঃসঙ্গ। মর্তের তরুণ আর স্বর্গের পরির ভালোবাসায় নেমে আসে বিষাদ। ক্রোকাস মাটির পৃথিবীর ভালোবাসায় সন্তুষ্ট করতে পারে না স্মাইলেক্সকে আর স্মাইলেক্সও সুখী রাখতে পারে না ক্রোকাসকে। কিন্তু দুজন দুজনকে আবার অনেক ভালোবাসে। এই অসম ভালোবাসা আর তাদের প্রতিদিনের ঝগড়া ও কান্না স্বর্গের দেবতা পর্যন্ত পৌঁছায় কিন্তু কোনো মীমাংসা করা সম্ভব হয় না। তাই দেবতা ক্রোকাসকে ফুলে পরিণত করে দেন আর স্মাইলেক্সকেও একধরনের জংলি লতায় পরিণত করে দেন। আরেকটি গল্পে বলা হয়, ক্রোকাসের সঙ্গে দেবতা হার্মিসের বন্ধুত্ব হয়। হার্মিস ছিলেন খেলাধুলায় খুব পটু। একদিন চাকতি নিক্ষেপ খেলার সময় হার্মিসের ছোড়া চাকতির আঘাতে ক্রোকাসের মৃত্যু হয়। অনুতপ্ত হার্মিস স্বর্গের দেবতাকে অনুরোধ করে ক্রোকাসকে ফুল বানিয়ে অমরত্ব দেন।

বরফের চাদর সরে যাওয়ার পর কানাডার মাটিতে ড্যাফোডিল ফুটতে শুরু করে। গাঢ় হলুদ, হালকা হলুদ, সাদা ও ক্রিম রঙের ড্যাফোডিল দেখা যায়। গ্রিক কবি হোমার থেকে শুরু করে অনেক কবি ও লেখক তাঁদের সাহিত্যে ড্যাফোডিলকে উপমা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ইংরেজ কবি রবার্ট হেরিক ‘টু ড্যাফোডিলস’ কবিতায় অল্প আয়ু নিয়ে টিকে থাকা ড্যাফোডিলের সঙ্গে মানুষের জীবনের তুলনা করেছেন।

ড্যাফোডিলের আরেক নাম নার্সিসি। নার্সিসি বা ড্যাফোডিল ফুলকে ঘিরে একটি সুপরিচিত গ্রিক মিথলজির গল্প আছে। নদীর দেবতা সিফিসাসের পুত্র নার্সিসাস খুব সুদর্শন ছিলেন। একদিন ইকো নামের এক পাহাড়ি জলপরি নার্সিসাসের প্রেমে পড়ে। কিন্তু নার্সিসাস ইকোর ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করেন। এতে ইকোর হৃদয় ভেঙে যায়। ইকোর কষ্টে ব্যথিত হয়ে প্রতিশোধের দেবী নেমেসিস নার্সিসাসকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং নদীর জলে নার্সিসাসকে তার নিজের প্রতিবিম্ব দেখার সুযোগ করে দেন। সে সময় আয়নার প্রচলন ছিল না। নার্সিসাস নিজেও জানত না সে কত সুদর্শন। নদীর জলে নিজের প্রতিফলন দেখে নার্সিসাস দিন–রাত সেই প্রতিবিম্বের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতেই মারা যান। এ জন্য ড্যাফোডিলকে নার্সিসাস বলা হয়। কারণ, তারা সাধারণত জলাশয় ও নদীর তীরে জন্মায়। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে ড্যাফোডিলরা যেভাবে মাটির দিকে তাদের ঘাড় বাঁকিয়ে তাকিয়ে থাকে, নার্সিসাসও সেভাবেই ঘাড় বাঁকিয়ে নিজের দিকেই তাকিয়ে থাকত। মনস্তাত্ত্বিক শব্দ নার্সিসিজম এ গল্প থেকে এসেছে। যারা নিজের সম্পর্কে খুব উঁচু ধারণা করে এবং সব সময় অন্যের মনোযোগ আশা করে, তাদেরই নার্সিসিস্ট বলা হয়।

শীতের সব বরফ গলে যখন ভেসে ওঠে সবুজ প্রান্তর, তখন মাঠজুড়ে খলখলিয়ে হেসে ওঠে ড্যান্ডেলিয়ন। শুধু মাঠেই নয়, পাথরের খাঁজে, ফুটপাতের পাশে, বাড়ির আঙিনার অল্প মাটিতে দেখা মেলে ড্যান্ডেলিয়নের। সবুজ প্রান্তরে বোতামের চেয়ে অল্প বড় ড্যান্ডেলিয়ন ফুল হলুদ তারার মতো ফুটে থাকে। বসন্তের শুরুতে এই ফুল মৌমাছিদের জন্য মধুর সবচেয়ে বড় জোগানদার। ড্যান্ডেলিয়ন ফুলের চা হয় এবং ড্যান্ডেলিয়ন ফুলের পাতা খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। প্রাচীন আরবীয় ও চীনারা রক্ত, কিডনি ও লিভারবিষয়ক রোগে ড্যান্ডেলিয়ন ব্যবহার করত বলে জানা যায়। পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণ থাকলেও ড্যান্ডেলিয়নকে বাগানে রাখা হয় না। কারণ, ড্যান্ডেলিয়ন খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং মাটির সব পুষ্টি শেষ করে ফেলে। ফলে অন্য গাছ বাড়তে পারে না। শখের বাগানে স্থান না হলেও শিশুদের জন্য ড্যান্ডেলিয়ন অসামান্য খেলার উপকরণ। আদর করে শিশুরা ড্যান্ডেলিয়নের নাম দিয়েছে ‘পরির ঘড়ি’। কারণ, এ ফুলের পাপড়ি সকালে সূর্যের প্রথম আলোর সঙ্গে খোলে এবং সন্ধ্যায় আবার বন্ধ হয়ে যায়। প্রচলিত উপকথায় বিশ্বাস করা হয় যে কেউ যদি চোখ বন্ধ করে কোনো কিছু পাওয়ার আশা করে এক নিশ্বাসে একটি শুকনা ড্যান্ডেলিয়নের সব বীজ উড়িয়ে দিতে পারে, তবে তার ইচ্ছা পূর্ণ হয়। উইকা ধর্মের বাস্তুশাস্ত্রে বিশ্বাস করা হয় বাড়ির উত্তর–পূর্বে এ ফুল থাকলে শীতের বাতাস ঘরে আসে না। প্রাচীন উইকাদের এ বিশ্বাসটি আসলে বৈজ্ঞানিকভাবেও সত্য। কারণ, ড্যান্ডেলিয়ন ফুল ফোটার পরই শীত শেষ হয়ে গ্রীষ্মের সূচনা হয়।

মাঠজুড়ে বরফ ঠেলে যখন ক্রোকাস উঁকি দিচ্ছে, তখন কানাডার ঝোপগুলোয় ফুটে উঠছে ফোরসাইথিয়া। এই ফুলের রং হালকা হলুদ, দূর থেকে কিছুটা সোনালি মনে হয়। যখন ফুল ফোটে, তখন কোনো পাতা থাকে না এবং ফুলটি অনেক দিন ফুটে থাকে। এ সময় পুরো গাছটিকে সোনালি পাতার একটি গাছ বলে মনে হয়। অনেকেই সোনালি ফুলে ভরা ফোরসাইথিয়ার ডাল ফুলদানিতে রেখে ঘর সাজায়। এই গাছের তেমন কোনো যত্ন লাগে না বলে বাগানের বেড়া হিসেবেও অনেকে এ গাছটি লাগান। প্রবীণেরা বলে থাকেন ‘থ্রি স্নোস আফটার দ্য ফোরসাইথিয়া ব্লুমস’ অর্থাৎ এই ফুল ফোটার পরও আরও তিনবার বরফ পড়তে পারে। এই ফুল ও গাছ খুব কষ্টসহিষ্ণু, তাই বরফের আড়ালেও এই ফুল দিব্যি ফুটে থাকে। কোরিয়ায় ফোরসাইথিয়া ফুলের উৎসব হয়। সেখানে এই ফুলের ডাল দিয়ে তৈরি আজিং নামের বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। ভিক্টোরিয়া যুগে এই ফুলকে দূরদর্শিতার ও প্রত্যাশার প্রতীক মনে করা হতো। কানাডায় শীতকালে সূর্য তেমন দেখতে পাওয়া যায় না। তাই বসন্তের শুরুতে সোনালি ফোরসাইথিয়াকে সূর্যকিরণের মতো মনে হয়। এই ফুল দিয়ে বানানো চা সর্দি ও ঠান্ডার উপশমে ব্যবহার করা হয়।

প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন মারা যাওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করে ১৮৬৫ সালে আমেরিকান কবি ওয়াল্ট হুইটম্যানের লেখা ‘হোয়েন লিলাকস লাস্ট ইন দ্য ডোরিয়ার্ড ব্লুমড’ নামের দীর্ঘ কবিতাটি আমার মতো অনেককেই লিলাক ফুলের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে। বসন্তের শুরুতে প্রচণ্ড সুবাস ছড়িয়ে ফুটে ওঠে লিলাক। বেগুনি, হালকা বেগুনি, ম্যাজেন্টা ও সাদা রঙের লিলাক দেখা যায়। ভিক্টোরিয়ান যুগে রঙের ওপর ভিত্তি করে সাদা লিলাককে বিশুদ্ধতার প্রতীক; বেগুনিকে আধ্যাত্মিকতার প্রতীক; নীলকে সুখ ও শান্তির প্রতীক এবং ম্যাজেন্টাকে প্রেমের প্রতীক মনে করা হতো। মিথলজি আছে যে অর্ধেক মানব ও অর্ধেক পশু সাটিরস বনের সুন্দরী পরি সাইরিনজকে অশালীন প্রস্তাব দেয়। শক্তিশালী সাটিরস জোরজবরদস্তি করে সাইরিনজকে রাজি করার চেষ্টা করছিল। সাটিরসের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সাইরিনজ বনের দেবী আর্টিমিসের সাহায্য প্রার্থনা করে। আর্টিমিস সাইরিনজকে লিলাক ফুলে রূপান্তরিত করে দেন, যাতে সাটিরসের কুপ্রস্তাব থেকে সাইরিনজ নিজেকে রক্ষা করতে পারে। সে জন্য লিলাকের বৈজ্ঞানিক নাম সাইরিনজা ভালগারিস। অনেক বিখ্যাত চিত্রকর লিলাক ফুলের ছবি এঁকেছেন। ‘লিলাক বুশ’ নামের ভ্যান গঘের বিখ্যাত একটা ছবি আছে।

এবার আসি টিউলিপের কথায়। অমিতাভ আর রেখা অভিনীত ‘সিলসিলা’ সিনেমার ‘দেখা ইক স্বপ্ন মেরে’ গানের চিত্রায়নে লাল–হলুদ টিউলিপ ফুলের বিশাল বাগান দেখে হোক আর যেভাবেই হোক টিউলিপ ফুল সবার কাছেই খুব পরিচিত। টিউলিপ নামটি পার্সিয়ান শব্দ তুলিপা থেকে নেওয়া হয়েছে। তুলিপা অর্থ টুপি। টিউলিপ ফুলটি দেখতে কিছুটা টুপির মতো। টিউলিপ মানে বিশুদ্ধ ভালোবাসা। টিউলিপের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সবচেয়ে বেশি উপকথা। টার্কিশ উপকথা শিরি–ফরহাদের ভালোবাসার গল্পের শেষে শিরির মিথ্যা মৃত্যুর সংবাদে আকুল প্রেমিক ফরহাদ নিজেকে ঘোড়ার জিনে বেঁধে পাথরের আঘাতে আত্মহত্যা করে। পাথরের আঘাতে ঝরা ফরহাদের রক্তবিন্দু থেকে জন্ম হয় টিউলিপের। নেদারল্যান্ডের উপকথায় বলা হয় যে একবার তিন যোদ্ধা এক সুন্দরী মেয়ের প্রেমে পড়ে এবং তিনজনই মেয়েটিকে খুশি করতে চেষ্টা করে। প্রথমজন তাকে একটি মুকুট উপহার দেয়। দ্বিতীয়জন তাকে একটি তলোয়ার উপহার দেয় আর তৃতীয়জন তাকে প্রচুর সোনা উপহার দেয়। সুন্দরী মেয়েটি কাকে পছন্দ করবে বুঝতে না পেরে ফুলের রানির সাহায্য চায়। তারপর ফুলের রানি মেয়েটিকে একটি টিউলিপে রূপান্তরিত করে দেন।

গ্রিক মিথলজির গল্পটি একটু ভিন্ন। এখানে শরৎকালের দেবতা টিউলিপ নামের এক মেয়ের প্রেমে পড়ে। কিন্তু বেচারি টিউলিপ এই অসম প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে দেবতা তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে। ফলে টিউলিপ দেবী আর্টিমিসের আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং আর্টিমিস তাকে টিউলিপে রূপান্তরিত করেন। ইংরেজ উপকথায় টিউলিপ নিয়ে আরেকটি গল্প আছে; যেখানে বলা হয় যে এক বৃদ্ধা তার বাড়িতে একাকী বাস করতেন এবং নিজের বাগানে ফোটা টিউলিপ নিয়ে বাড়িতে সাজাতেন। এক রাতে গান আর বাচ্চাদের হাসির শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেলে তিনি দেখতে পান যে তাঁর বাগানের প্রতিটি টিউলিপের পাশে একটি ছোট্ট পরি মা দাঁড়িয়ে তার শিশুকে টিউলিপ ফুলে বসিয়ে দোলাচ্ছেন আর গান গাইছেন এবং পরির শিশুরা আনন্দে হাসছে। তার পর থেকে তিনি তার বাগানের টিউলিপ আর ছিঁড়তেন না। কারণ, প্রতি রাতে পরিরা তাদের শিশুদের নিয়ে টিউলিপ বাগানে খেলতে আসে। হ্যান্স ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসেনের রূপকথায় টিউলিপ ফুলে জন্ম নেয় সুন্দর ছোট্ট মেয়ে থামবেলিনা।

টিউলিপের সামাজিক ব্যবহার খুব উল্লেখযোগ্য। উপহারের জন্য টিউলিপ খুব চমৎকার। তাই বসন্তের শুরুতে ফুলের দোকানগুলো বিভিন্ন রকম টিউলিপ তোড়ায় সেজে ওঠে। রংভেদে এসব টিউলিপের ভিন্ন ভিন্ন অর্থও হয়। যেমন লাল আর বেগুনি টিউলিপ ভালোবাসা; আর হলুদ টিউলিপ বন্ধুত্ব প্রকাশ করে। দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইতে হলে সাদা টিউলিপ যথার্থ; আর কাউকে অভিনন্দন জানানোর জন্য গোলাপি টিউলিপ দেওয়া হয়।

পৃথিবীর সব সৌন্দর্যকে ফুলের সঙ্গে তুলনা করা হলেও ফুলের তুলনা শুধুই ফুল। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি’/দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী’... চরণ দুটি আমরা ছেলেবেলায় ভাবসম্প্রসারণ করে লিখেছি ভালোবাসার প্রকাশে, শ্রদ্ধার অর্ঘে, পূজার নিবেদনে ও সামাজিক বিনোদন ও সজ্জাভূষণে ফুলের কোনো বিকল্প নেই। মুসলিম হাদিসে (৫৬৮৭) ফুলকে শ্রেষ্ঠ উপহার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘কেউ যেন ফুল উপহার প্রত্যাখ্যান না করে।’ ফুলের চেয়ে সুন্দর, ফুলের চেয়ে রঙিন, ফুলের চেয়ে পবিত্র ও ফুলের চেয়ে মূল্যবান প্রকৃতির দান বুঝি আর নেই। তাই ফুলকে ঘিরে প্রতিনিয়ত রচিত হয় সাহিত্য আর উপকথা। আর ফুলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই গল্পগুলো সাহিত্যের অসামান্য সম্পদ।

ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিজ্ঞানীরাও ফুল নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। তৈরি করেছেন হাইব্রিড গোলাপ, টিউলিপ, চন্দ্রমল্লিকাসহ আরও অনেক প্রজাতির ফুল; যার একমাত্র কাজ সৌন্দর্য বৃদ্ধি।

*দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]