প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ছে শাবিপ্রবির ৩২০ একরের বন্ধন

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি নাম সংক্ষেপ ‘সাস্ট’। এ সুবাদে শিক্ষার্থীদের আরেক সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ‘সাস্টিয়ান’। করোনার সংকটের পর এটাই ছিল যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী সাস্টিয়ানদের বড় মিলনমেলা। ১৩ আগস্ট দেড় শর বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এ আয়োজনে। মূল আয়োজনের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন কামরুল কাবিরী, মো. আবদুর রাজ্জাক ও তৌহিদ চৌধুরী। শিশুদের আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন ফয়সাল আজম ভাই, সঙ্গে আমি আর সোহান সারওয়ার ভাই। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল খেলাধুলার পাশাপাশি শিশুদের এ অনুষ্ঠানে পুরোপুরি যুক্ত করা। এ ধরনের অনুষ্ঠানে এক্সট্রোভার্ট শিশুদের নিয়ে সমস্যা হয় না, কিন্তু সমস্যা হয় ইন্ট্রোভার্ট শিশুদের নিয়ে। যেসব আয়োজনে পাবলিক পারফরম্যান্সের বিষয় থাকে, তাতে তারা অংশ নিতে একপ্রকার অনীহা বোধ করে। আবার অন্য কাউকে পুরস্কার নিতে দেখে কষ্ট পেলেও তা কাউকে বলতে পারে না। তাই আমরা সময় স্বল্পতার ব্যাপারটি মাথায় রেখে মোটামুটি তিনটি পর্ব রাখি। প্রথমত, নিজের ভাবনা প্রকল্প আকারে উপস্থাপন, সেখানে প্রতিযোগী তার চারপাশ নিয়ে কী ভাবছে, তা তার নিজস্ব উপায়ে প্রকাশ করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, পরিবেশ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কুইজ। তৃতীয়ত, সমবেত সংগীত ‘আমরা করব জয়’।

একেকটার চেয়ে একেকটা প্রকল্প অসাধারণ ছিল। কেউ বানিয়ে নিয়ে এসেছে আস্ত ড্রাগনের চোখ, কেউ বা মা–বাবার কাছে যে বাংলাদেশের কথা শোনে তার পতাকা, স্মৃতিসৌধ এঁকেছে, কেউবা পেনসিলে ফুটিয়ে তুলেছে বিড়ালছানার সঙ্গে ফড়িংয়ের রসায়ন, আবার কেউ সাম্প্রতিক গরম আবহাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে তা থেকে কিভাবে উদ্ধার পাওয়া যায়, তার কারণ খুঁজে বেড়িয়েছে পুস্তিকায়। সুখ খুঁজে বেড়ানো কবিও ছিল একজন। আর ছিল রোবট, ভূত বা শুধুই বিমূর্ত আঁকিবুঁকি! জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে গরম আবহাওয়া এবং এর প্রতিকার খুঁজে বের করার জন্য শেষ পর্যন্ত সেরা পুরস্কার পেয়েছে আলভিনা।

আমার দায়িত্ব ছিল কুইজ প্রতিযোগিতা পরিচালনা করা। তিনটি গ্রুপ করে দিই—পদ্মা, মেঘনা আর যমুনা। আসল উদ্দেশ্য তিন নদীর নাম শেখানো। তা ছাড়া আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্ম বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটুকু জানে, সে সম্পর্কে ধারণা পেতে পুরো একটা রাউন্ড বরাদ্দ ছিল। আশ্চর্যের বিষয়, এই রাউন্ডের সব প্রশ্নের উত্তর তিনটি গ্রুপই দিতে পেরেছে। তারা শুধু মা–বাবার কাছে বাংলাদেশের গল্প শুনেই ক্ষান্ত হয় না, বরং আরও বেশি কিছু জানতে পড়াশোনা করে। অনুষ্ঠানের শেষ দিকে যখন ইমতিয়াজ ভাই ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা’ গাইছিলেন আর সামনে বসে থাকা সবার আঁখি টলমল, তখন দেখেছি নতুন প্রজন্ম বুড়ো মানুষ ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেন কান্না করে, তা দেখে খুব একটা অবাক না হয়ে বরং নিজেরাও মন ভারী করে সেই দুঃখবোধ অনুভব করে। রাতে ফেরার সময় কুইজ বিজয়ী একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মন খারাপের কারণ। সে বলেছিল, ‘people makes land, we miss people’। বাংলাদেশী মানুষের বন্ধন ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রজন্মান্তরে এই বিলেতে, ভাবতে ভালোই লাগে।

লেখক: মো. মাহবুব হাসান, পিএইচডি গবেষক, কিংস কলেজ লন্ডন