আহ্ হা রে, আমার বন্ধু হুমায়ূন আহমেদ
কখনো এই বুকস্টোরটিতে আসেনি
সম্প্রতি আমাদের (আমার বউ, ছোট্ট মেয়ে ও আমি) হাওয়াই দ্বীপ ভ্রমণ শেষ করে ফেরত পথে অংশ হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার লসঅ্যাঞ্জেলেসে দুদিন কাটিয়ে এলাম। আমাদের ছোট্ট মেয়ে ঋশিজা প্ল্যানমাফিক, লসঅ্যাঞ্জেলেসে ‘দ্য লাস্ট বুকস্টোর’–এ নিয়ে এল। অবাক করা এই বুকস্টোরটি।
ক্রিয়েটিভিটির সর্বোচ্চ নিদর্শন। শুধু বই দিয়েই সব আর্ট, ডিজাইন, এমনকি স্কাল্পচার করা হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার সর্ববৃহৎ নতুন এবং পুরাতন বইয়ের স্টোর। সেই সাথে ভিডিও রেকর্ডের কালেকশনও রয়েছে। ২২ হাজার বর্গফুটের দুটি তালাজুড়ে বই আর বই। এই বইয়ের সংখ্যাও প্রায় দুই শ পঞ্চাশ হাজার।
এই বুকস্টোরটির মালিক হলেন যশ স্পেন্সার। প্রথম দিকে তাঁর গাড়ি থেকে শুরু করে কাপড়চোপড়ের ব্যবসা ছিল। একসময় অ্যাক্সিডেন্টে দুটি পা অচল হয়ে যায়। জীবনের গতিও পরিবর্তন করে দেয়। ২০০৫ সালে এই বুকস্টোরটি চালু করে। এতে একটি রেস্তোরাঁ ও ক্যাফেও রয়েছে। অবশ্য অ্যাডমিশন ফি আছে। আমরা গিয়েছিলায় ক্রিসমাসের দিন। সেদিন ফ্রি অ্যাডমিশন ছিল।
হুমায়ূন আহমেদ ভাই এই বুকস্টোরটিতে যদি আসত, তাহলে আরও বেশ কয়েকটি মহাকাব্য লেখা হতো। কে জানে হয়তো বেঁচে থাকলে একদিন আসত বৈকি আর ইংরেজিতে উপন্যাস বা নাটক লিখে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পেতে পারত।
হুমায়ূন ভাইয়ের সাথে আমার বন্ধুত্বটা শুরু হয় ১৯৬৯ সাল থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে আমার দুই বছরের সিনিয়র ছিল।
একসঙ্গে শিক্ষকতাও করেছি। হুমায়ূন ভাইয়ের বাসায় অবাধ যাতায়াত ছিল। তখন ‘নন্দিত নরকে’ ও ‘শঙ্খনীল কারাগার’ লিখে বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয়। শুধু কি তা–ই? মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ত। হাজার হাজার চিঠি আসত তখন। হঠাৎ একদিন বলল ‘বিয়ে করছি’। নবম শ্রেণিতে পড়া বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। একদিন আমাদের টিচার্স ক্লাবে গুলতেকিন ভাবির সাথে বিয়েটাও হয়ে গেল।
তারপর আমি গেলাম কানাডার সাস্কাচেয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে আর হুমায়ূন ভাই গেল নর্থ ডাকোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমরা খুব কাছাকাছি সময়ে পিএইচডি করেছি। কানাডায় পিএইচডি করাকালেও ১৯৮০ সালে নর্থ ডাকোটায় হুমায়ূন ভাইয়ের বাসায় বেশ কয়েক দিন ছিলাম। তখন গুলতেকিন ভাবি ও একটি মেয়ে নিয়ে ছিল ছোট্ট সংসার।
মজার কথা, সেই মেয়েটির জন্মের খবর শুনে হুমায়ূন ভাই রিসার্চ ল্যাবেই দাঁড়িয়ে আজান দিয়েছিল। প্রথমে ল্যাবের সবাই অবাক। পরে সবাইকে সুখবরটা শেয়ার করে।
অদ্ভুত মানুষের জীবন। হুমায়ূন ভাইয়ের শরীরে ক্যানসারটা না–ও বাসা বাঁধতে পারত। তাহলে তাঁর কলম থেকে আরও কত লেখা বেরিয়ে আসত। অনেকটাই অল্প বয়সে চলে গেল। আমার অনেক স্মৃতি আছে। আপাতত এখানেই শেষ করছি। ইংরেজি নতুন বছরের (২০২৫) পাঠকদের জন্য শুভেচ্ছা রইল।
লেখক: জীবেন রায়, অধ্যাপক, মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয় ফর উইম্যান, কলম্বাস, মিসিসিপি, ইউএসএ
দূর পরবাস-এ গল্প, ভ্রমণকাহিনি, ভিডিও, ছবি, লেখা ও নানা আয়োজনের গল্প পাঠান [email protected]এ