জেদ্দায় ‘৩য় ফ্যাশন অ্যান্ড টেক্স এক্সপো ২০২৫’: বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের উপস্থিতি
বিশ্বজুড়ে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের উৎপাদক, পরিবেশক, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক এবং রপ্তানিকারকদের সমবেত করে জেদ্দায় শুরু হয়েছে ‘৩য় ফ্যাশন অ্যান্ড টেক্স এক্সপো ২০২৫’। বৈশ্বিক শিল্পোদ্যোক্তাদের এক মঞ্চে এনেছে এই এক্সপো। গত বৃহস্পতিবার দেশটির বন্দরনগরী জেদ্দার জেদ্দা এক্সিবিশন অ্যান্ড কনভেনশন হলে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৪ দিনের এই আন্তর্জাতিক মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
জেদ্দা চেম্বারের বোর্ড মেম্বার মর্শাইল আল ওতাইবী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধন করেন। এবারের এক্সপোতে স্বাগতিক সৌদি আরব ছাড়াও বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৬টি দেশ অংশগ্রহণ করছে। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরছে। মেলা প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশ রপ্তানি ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, জেদ্দার সহায়তায় এবারের মেলায় বাংলাদেশের ১২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। স্থানীয় উদ্যোক্তা ও আমদানিকারকদের সঙ্গে বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের সুনির্দিষ্ট চাহিদা মেটানোর লক্ষ্য নিয়েই এই আন্তর্জাতিক মেলাটি শুরু হয়েছে। এই প্রদর্শনীতে পোশাক, সামগ্রী, ফ্যাশন, গিফটওয়্যার এবং টেক্সটাইল খাতের শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
৮০০০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে জেদ্দা আন্তর্জাতিক এক্সিবিশন অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত মেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নার্গিস মোর্শেদা, বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর সৈয়দা নাহিদা হাবিবা, জেদ্দা কনস্যুলেটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং জেদ্দায় অবস্থানরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ও কমিউনিটির নেতারা ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
কনসাল জেনারেল আশা প্রকাশ করেন, এই জাতীয় আয়োজন ব্যবসা ও বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ হতে অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তারা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ব বাজারে তুলে ধরার সুযোগ পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, এই এক্সপো থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বিশাল বাজার ধরা সম্ভব। প্রথম দিনেই বেশ কিছু অর্ডার পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ। শুধু বায়ারদের আকৃষ্ট করাই লক্ষ্য নয়, একই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবের নারীনীতি শিথিল হওয়ায় এবারই প্রথম বাংলাদেশের কয়েকজন নারী উদ্যোক্তাও আন্তর্জাতিক এই ‘৩য় ফ্যাশন অ্যান্ড টেক্স এক্সপো’–তে অংশ নিয়েছেন এবং তারা বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান।
সৌদি আরবে বসবাসরত ৩০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজারটিতে রেমিট্যান্স প্রেরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশিয় পণ্যের ব্যবহারের মাধ্যমে রপ্তানি আয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম পোশাকের পণ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে এই মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্প ও ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারীরা একদিকে তাদের পণ্যের গুণগত মান, ডিজাইন ও প্যাকেজিং প্রদর্শন করতে পারছেন, অন্যদিকে এটি পারস্পরিক সংযোগ স্থাপনসহ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসারের সুযোগ এনে দেবে।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]