উন্নয়ন

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

যেকোন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের চিত্র প্রতিফলিত হয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা আর পরিবহনব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে। এগুলো উন্নয়নের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হয় সমাজ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা। সিঙ্গাপুর একসময় দুর্নীতি ও অপরাধপ্রবণ গরিব দেশ ছিল। এর উন্নয়ন ঘটে তিনটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে, একটা রুল ফলো করা হয়, তার নাম হচ্ছে M.P.H যা নিম্নরূপে সজ্ঞায়িত করা হয়—
      - Meritocracy
         (মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি বেসরকারি পদায়ন)
      - Pragmatism
        (ব্যবহারিক কাজের অনুশীলনের মাধ্যমে সফলতা অর্জন)
      - Honesty (সততা)।

সিঙ্গাপুর সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় তৃতীয় স্তম্ভের বাস্তবায়নে। যেটা অর্জন করার পর আজকের চকচকে সিঙ্গাপুর দেখা যায়। জাপানের পরিবহনব্যবস্থার কথা সবাই জানে বিশ্বের সেরাদের তালিকায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্যে একই অবস্থা। মূলস্তম্ভ ওই সততায়। যেখানে কয়েক দশক আগেও দুর্নীতি ছিল। বছরের পর বছর বিভিন্ন পলিসি খাটিয়ে সেটা নির্মূল করেছে। একটা সুন্দর এবং খুবই সহজ পলিসি এসব দেশের ক্রাইম ব্র্যাঞ্চগুলো অনুসরণ করে, সেটা হচ্ছে পুরস্কার এবং শাস্তি (Reward and Punishment) নীতি।

সেটা কেমন? উদাহরণ হিসেবে যত অপরাধ ক্রাইম পেট্রলগুলো শনাক্ত করবে তার ওপর ভিত্তি করে পদোন্নতি হবে, বেতন বাড়বে, যেটা Reward বলা হয়। অপরাধীকে অপরাধের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে শাস্তি দেওয়া হয়। যেমন গাড়ি দুর্ঘটনা হলে চালকের ট্রাফিক রুল অমান্য করাটা যদি শনাক্ত হয়, তাহলে তার ড্রাইভিং লাইসেন্সের পয়েন্ট কমবে, সঙ্গে জরিমানা। কারও লাইসেন্স সাময়িক বরাখাস্ত করে নিয়ে নিতে পারবে, যদি সব পয়েন্ট শেষ হয়। আমি নিজেই জাপানে লাইসেন্স নিয়ে নেওয়ার শাস্তি পেয়েছি তিন মাস। গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছি এবং দোষ ছিল আমার, পুলিশের সঙ্গে ইন্টারভিউয়ে ভিডিও ফুটেজে সেটা প্রমাণ হয়েছিল। পালাবার পথ নাই।

ফেসবুকে দেখলাম সবাই আমাদের দেশের নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কী সব ব্যাঙ লাফানো, পাখি ওড়া—এসব ভিডিও নিয়ে হাসাহাসি করছে। সঠিক তথ্য জানি না, ঘটনা কি। না জেনে মন্তব্য করা সাজে না। তবু শিক্ষাব্যবস্থা জাতিগঠনের অন্যতম উপাদান। এটা করা হয় একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থেকে। যেমন জাপান, ফিনল্যান্ড কিন্ডারগার্টেন কিংবা প্রাথমিক স্তরে শুধু আচার–ব্যবহার, নিয়ম–কানুন, কালচারাল অ্যাক্টিভিটিস—এগুলো শেখায়, তারপর ট্রাফিক রুল, যেকোন দুর্যোগে কীভাবে জীবন বাঁচাতে হয় (ভূমিকম্প, আগুন লাগলে) ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো শেখানোর উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট এবং ব্যবহারিক। আমাদের উচিত, এসবে মন দেওয়া; সাপ–ব্যাঙ সাজা না। এগুলো কাল্পনিক কিছু না যে সেজে দেখাতে হবে। পরিণত হতে হতে প্রকৃতি থেকেই শিখে যাবে।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

এসব দেশে হাতে–কলমে শেখার একটা অন্যতম পদ্ধতি হচ্ছে মাঠপরিদর্শন (field trip)। একটা নির্দিষ্ট বিরতিতে পালা করে মাঠপরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয় একদম কিন্ডারগার্টেন পর্যায় থেকে। মাধ্যমিক স্তরে একবারে মাঠে নিয়ে সবজি চাষ পর্যন্ত করানো হয়। এসব কাজ খুব দক্ষ শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালনা এবং পরিচর্যা করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসব দেশগুলোতে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় হওয়ার কোনো প্রথা নেই। ঘোষণাও করা হয় না। সবাইকে সমানভাবে দেখা হয় কিন্তু গ্রুপিং করে কাজ করানো হয় যাতে টিমওয়ার্কটা শিখতে পারে। এ জন্য ওরা সবাই একাকী না একত্রে গড়ে উঠতে পারে। আমাদের নতুন পদ্ধতিতে এসব কিছু থাকলে এগুলো খারাপ কোনো উপাদান না, যদি সেটার নির্দিষ্ট সুদূরপ্রসারী ভালো লক্ষ্য থাকে।

এ সাপ–ব্যাঙ পাখি সাজার উদ্দেশ্য যদি imaginative development হয়, তাহলে একটা ভালো পদ্ধতি আছে সেটা হচ্ছে puzzle। যেমন comprehension দিয়ে সেটার puzzle question করা। এই puzzle আমেরিকা-কানাডাতে ভীষণ জনপ্রিয়। এতে বাচ্চাদের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটে, জীবনের যেকোন সমস্যা সমাধানে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। কাউকে হেয় করার জন্য আমি এত কিছু লিখলাম না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার যেটা মনে হয়েছে, আমরা একটা জগাখিচুড়ি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহনব্যবস্থা বছরের পর বছর প্র্যাকটিস করছি। এটা সংশোধন করা দরকার, সত্যি একটা স্বচ্ছ ব্যবস্থা দরকার, যেটা সবাই জানবে–দেখবে–বুঝবে। তার একটা পরিষ্কার মানদণ্ড থাকা জরুরি।

*লেখক: টমাস রায়, সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কানাডা