হিমু রঙের পাঞ্জাবি

এবারের ঈদেও হিমেলের হিমু কালারের চকচকে হলুদ পাঞ্জাবি পরার শখ অপূর্ণই রয়ে গেল।

বাংলা কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের একনিষ্ঠ একজন ভক্ত হিমেল। প্রিয় লেখকের যে কোনো বই একবার পড়তে বসলে তা শেষ না করে কখনই ওঠে না সে।
কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের রহস্যাবৃত ও কাল্পনিক দুটি চরিত্র হিমু আর মিসির আলী হিমেলের এতই প্রিয় যে, হিমুসমগ্র ও মিসির আলী চরিত্রের সবগুলো বই সেই কবে শেষ করে ফেলেছে তা সে নিজেও মনে করতে পারে না।
মিসির আলী যেহেতু বয়স্ক একজন যুক্তি-নির্ভর মানুষ, তাই চরিত্রটির অনেক কিছু তার ভালো লাগলেও হিমেল নিজেকে মিসির আলীর মতো একজন খাঁটি-যুক্তিবাদী বলে ভাবতে পারে না।
কারণ সে যুক্তি তর্কের ধার ধারে না। তার ধ্যান ধারণা হিমুর মতোই অ্যান্টি-লজিক। তার সব কাজের মধ্যেই কিছুটা পাগলাটে ও উদাসীনতা থাকে, থাকে ক্রেজিনেস।
যুক্তিসম্মত কথা বলে না সে কখনো।
সব যুক্তির বিরোধিতা করে নিজের জ্ঞান গরিমার কথা তুলে ধরতেই তার আনন্দ।

রাতে খালি পায়ে হাঁটছে হিমেল। প্রতীকী ছবি
রাতে খালি পায়ে হাঁটছে হিমেল। প্রতীকী ছবি

আগেপিছে সাত-পাঁচ ভেবে কোনো কাজ করতে পছন্দ করে না হিমেল। সে একজন উদাস প্রকৃতির মানুষ। হিমুর বৈশিষ্ট্যগুলি মনের ভেতর চুপিসারে উঁকি দেয় বলে হিমেল নিজের স্বভাবটাকে সেভাবেই প্রকাশ করতে চায়।
নব্বইয়ের দশকে যখন হিমেলের বয়স মাত্র তেরো, সবে টিনএজে পা রেখেছে, তখন হুমায়ূন আহমেদের হিমুকেন্দ্রিক প্রথম উপন্যাস ময়ূরাক্ষী সে শেষ করে। এরপর থেকে বিরামহীনভাবে চলতেই থাকে একের পর এক হিমু বই পড়া।
২০১১ সালে প্রবাসে দেশান্তরী হওয়ার আগে হিমুর আছে জল বইটা এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলে সে। ক্ষুধার্ত পেটে গোগ্রাসে ভাত গেলার মতোন করে।
হিমু চরিত্রটি বাংলাদেশের বেশির ভাগ তরুণদের একটি প্রিয় চরিত্রে পরিণত হওয়ার পর থেকে সব তরুণদের মতো হিমেলের ভেতরেও হিমু হিমু ভাব জেগে ওঠে।
তরুণ প্রজন্মের অন্যান্যদের মতো হিমেল নিজেকেও হিমু ভাবতে শুরু করে।
হিমেলের চালচলনের ভেতর অবশ্য আগে থেকেই এক ব্যতিক্রমধর্মী বিভ্রান্তিকর আচরণ পরিলক্ষিত হতো। বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিতে মানুষজনকে বিভ্রান্ত করে সে বড়ই মজা পেত।
তার মতে কাউকে বিভ্রান্ত করতে পারলেই যেন বিরাট এক আনন্দ।
ছোটবেলায় স্কুলের সহপাঠীদের সে বোকা বানিয়ে হকচকিয়ে দিত। তার স্বকীয় এক ধরনের ঐন্দ্রজালিক মানসিক শক্তির প্রয়োগ দেখিয়ে সবাইকে অবাক করে দিতে পারত। অনেক সময় তার কাল্পনিক ভবিষ্যদ্বাণী হঠাৎ​ করে ফলেও যেত। তখন সকলেই অবাক হয়ে তাকে বাহবা দিত।
কিন্তু মাঝেমধ্যে তার কর্মকাণ্ডে অনেকে বিরক্তও হতো। কাছের বন্ধুরাসহ আত্মীয়স্বজন হিমেলের নানা খামখেয়ালিপনা যুক্তি-বিরোধী মতামতের প্রতিক্রিয়ায় শুধু বিরক্তই নয় মাঝে মাঝে রাগান্বিতও হতো। আর হিমেল তাতে খুব মজা পেত।
ছোট্টবেলা থেকেই এদিক সেদিক উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ানোসহ অকাজে অহেতুক সময় পার করা অনেক কাজের অতি প্রিয় একটি কাজ ছিল তার।
মা কিছু কিনতে পাঠালে সে বাজারের রাস্তায় ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে বানর খেলা দেখত। বানরওয়ালা স্থান বদলিয়ে অন্যখানে গেলে সে-ও ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের পিছু পিছু আহাম্মকের মতো ঘুরত।
কখনো ফুটপাতের তাবিজ–কবজ বিক্রির হকারদের কেরিকেচার দেখতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকত শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
তারপর যখন বাড়ি ফিরত দেখা যেত মার কাজকর্ম সব শেষ। মার গালাগালি খেয়ে আবারও ছুটত বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে ডাংগুলি নয়তো মার্বেল খেলতে অথবা অপ্রয়োজনে হেঁটে হেঁটে বেড়াত রাস্তা ধরে মাইলের পর মাইল। এসব হলো হিমেলের বাল্যকালের কথা।

২.

এরপর বড় হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর সেই উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরেফিরে বেড়ানোর স্বভাব না পাল্টালেও ধরনটা বদলাল হিমেলের।
সন্ধ্যা হলেই হিমুর মতো পকেটবিহীন একটা হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়ে ক্যাম্পাসের রাস্তায় রাস্তায় ভাবলেশহীন ভাবে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াত। দেখে মনেও হতো না যে, সে একজন ইউনিভার্সিটির ছাত্র। সেভ না করা চিবুকে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি সেইসঙ্গে উস্কোখুস্কো চুলে বিমর্ষ দেখাত তাকে। আর সারাক্ষণ নগ্ন পায়ে থাকত।
খালি পায়ে হাঁটার পেছনে তার যুক্তি দর্শন ছিল ভূমিতলের সঙ্গে মানব দেহের সংযোগ ঘটলে চোখের জ্যোতি বাড়ে, দিব্যদৃষ্টি খুলে যায়। অনাগত ভবিষ্যতের আভাস পাওয়া যায়।
শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলে থাকত সে।
প্রতিদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে হল থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যেত বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বপাড়া রোডে। সেখান থেকে একটু এগিয়ে বিজয়-সাগর ও পদ্ম-পুকুরের আশপাশে ক্ষণিক সময় কাটিয়ে সোজা এসে বসত আইনাল ভাই টি স্টলের বেঞ্চ নম্বর ফাইভে।
কিছু সময় আড্ডাগুলি মেরে কড়া এক কাপ চা খেয়ে মুন্নুজান হল রোড ধরে পৌঁছাত বেগম রোকেয়া হলের সামনে।
সেই হলে থাকত তার একাধারে সহপাঠী ও বান্ধবী রুমকি।
কিন্তু সেখানে সে রুমকির সঙ্গে দেখা করতে যেত না। রাতে এমনিতেই উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরেফিরে বেড়ানোর জন্য যেত।
রুমকির সঙ্গে দেখা করবে কি, রুমকি হিমেলের এই হিমু মার্কা ড্রেস একেবারেই পছন্দ করত না। ভাবলেশহীন ভাবে ঘুরে বেড়ানো রুমকির একদমই সহ্য হতো না।
কিন্তু অন্য মেয়েদের মাধ্যমে খবরটা ঠিকই রুমকির কানে চলে যেত।
মেয়েরা রুমকিকে বলত হিমেল ভাইকে দেখলাম-তোমার হিমুকে।
এ ভাবে একা একা উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরেঘুরে রাত দুপুরে ফিরে আসত হলে নিজের রুমে। তারপর ভোর রাত পর্যন্ত বসে থাকত পড়ার টেবিলে।
কী যে পড়ত সে, তা ওপরআলা ছাড়া দ্বিতীয় কেউ জানত না।

হিমেল ও রুমকি। প্রতীকী ছবি
হিমেল ও রুমকি। প্রতীকী ছবি


বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পাঠ চুকলে রুমকি আচমকা এক অদ্ভুত কাজ করে বসল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেয়ে রুমকি বাবা-মার একরকম অমতেই এবং ছোট বোন চুমকির ঘোর বিরোধিতা সত্ত্বেও হিমেলের গলায় মালা পড়িয়ে তাকে বরণ করে নিল জীবনসঙ্গী হিসেবে।
অতঃপর ঢাকায় আইসিডিডিআরবিতে রুমকির একটা চাকরি জুটলে দুজনের নতুন সংসারের যাত্রা শুরু হলো নাখালপাড়ার এক ভাড়া করা বাসাতে।
বছর পার হতেই ঘর আলো করে এল ফুটফুটে মেয়ে রাইসা। হিমেল রাইসাকে খুব ভালোবাসত। নিজের প্রাণের চেয়েও।
ঢাকায় এসে হিমেলের বেকার জীবন রাস্তার যানজটের মতো তালগোল পাকিয়ে গেল। ঢাকার পরিবেশে তার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো।
জীবনকে তার নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় কিছু একটা হিসেবে মনে হতে লাগল।
ধীরে ধীরে ঢাকাকে সে অস্পষ্ট অদেখা এক মানবশূন্য শহর বলে গণ্য করা শুরু করল আর তাই নিজের চোখের জ্যোতি বাড়াতেই খালি পায়ে হাঁটাহাঁটির মাত্রা বাড়িয়ে দিল। হাঁটতে থাকল রাতের বেলায়-ও।
একদিন রাতে নাখালপাড়া থেকে হাঁটতে হাঁটতে পুরাতন এয়ারপোর্ট রোড ধরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ জাহাঙ্গীর গেট দিয়ে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অকারণে ঢুকতে গিয়ে গেটের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এক সিপাহির সঙ্গে অযথা বাগ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে সারা রাত সেখানকার বেঞ্চে বসে রাত কাঁটাতে হলো।
ওদিকে দুশ্চিন্তায় রাইসাকে নিয়ে রুমকির রাতটাও কাটল নির্ঘুম ভাবে।

৩.

বেশ কয়েক বছরের চেষ্টায় প্রিন্সিপাল অ্যাপ্লিক্যান্ট হিসেবে আবেদন করে পরিবারসহ রুমকির অভিবাসন মিলল কানাডায়। অভিবাসী হয়ে টরন্টো এসে বাসা নিল কেনেডি রোডের এক টাউন হাউসে।
নারীস্থান হিসেবে পরিচিত কানাডায় নারী বলে রুমকির একটা চাকরি সহজে মিললেও হিমেল কিন্তু সেই বেকারই রয়ে গেল।
কাজের অভিজ্ঞতার এক অদ্ভুত অজুহাতে এমপ্লয়ররা তাকে চরকির মতো ঘুরাতে লাগল। বেচারা জীবনযুদ্ধে হারা সৈনিকের মতো ক্লান্তিতে দিগ্‌বিদিক ছুটতে লাগল।
অবশেষে না পেরে কাজ জোগাড় করে দেওয়ার এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিতে নাম লেখাল।
তাতে করে কখনো খণ্ড কখনোবা পূর্ণকালীন কাজ মিলল। কিন্তু কাজগুলি ছিল অত্যন্ত পরিশ্রমের। অধিকন্তু এজেন্সির মাধ্যমে কাজ হওয়ায় সপ্তাহের তিন দিন কাজ থাকলেও বাকি দুদিন অফ থাকত।
তার পাগলাটে স্বভাব কানাডায় এসেও যে পাল্টায়নি তার প্রমাণ দু-একটা ঘটনায় প্রমাণিত হলো।
এ রকম কাজের এক অফ-ডেতে মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে হিমেল ফিরছিল বাসায়।
এল্‌সমেয়ার রোডে ওভার স্পিডে তার টয়োটা ক্যামরি ড্রাইভ করছিল সে। এল্‌সমেয়ার স্টেশনের ওপরে ব্রিজ থেকে রাস্তার ঢাল বেয়ে নামার সময় গ্যাস প্যাডেলে জোরে পা দিয়ে স্পিড আরও বাড়িয়ে দিল।
উদ্দেশ্য সামনের ইন্টারসেকশনের গ্রিন সিগনালটা দেখা যাচ্ছে, সেটা যেন অনায়াসে পার হয়ে যেতে পারে এই চোটে।
কিন্তু ইন্টারসেকশনটা ক্রস করার পরেই খেয়াল করল যে, পেছনে একটা টার্নিং করা পুলিশ কার পপ পপ করে ওকে পুল ওভার করতে নির্দেশ দিচ্ছে।
হিমেল সিগনাল দিয়ে একেবারে ডান পাশের লেনে পার্ক করল ইমার্জেন্সি ইন্ডিকেটরসহ।
পরে লক্ষ্য করল পুলিশ মামুর গাড়িটাও পেছনে এসে থামল।
তারপর রিয়ার ভিউ মিররে দেখল এ-তো মামু নয়, কাল ড্রেসে হৃষ্টপুষ্ট একজন নারী পুলিশ অফিসার। মনে মনে ভাবল এবার কি তাহলে মামির দর্শন পাওয়া যাবে।
অফিসার ওর কাছে এসে বলল, স্যার আপনি তো ষাটের জোনে আশি কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। বিষয়টা কি? আমি কি আপনার লাইসেন্স, ওনারশিপ ও ইনস্যুরেন্স এর কাগজপত্র দেখতে পারি?
হিমেল একটু আমতা-আমতা করে বলল, সরি-আমি তো এত জোরে গাড়ি চালাইনি তবে ওই ব্রিজের ঢালটায় নামতে গিয়ে স্পিড হয়তো একটু বেড়ে গিয়েছিল।
অফিসার চোখ দিয়ে ইশারা করে দেখালেন, তার জন্য তো ওই ব্রেকটা আছে।
তারপর কাগজপত্রগুলো নিয়ে অফিসার নিজের গাড়িতে গিয়ে বসলেন।
মিনিট দশেক পর ফিরে এসে একটা বাহান্ন ডলারের ওভার স্পিডের টিকিট ধরিয়ে বললেন ড্রাইভিং রেকর্ড ভালো থাকার সুবাদে এই অল্প পরিমাণ ফাইন করা হলো এবং কোনো পয়েন্ট ডিমেরিট করা হয়নি।
এ ছাড়া ফাইন টিকিট পাওয়ার পর একজন ড্রাইভারের কী কী করণীয় থাকে টিকিটের পেছনের লেখা দেখিয়ে সংক্ষেপ আকারে তা বয়ান করলেন।
হিমেল অনুরোধ করল প্রথমবার বলে অন্তত এবারকার মতো মাপ করা যায় কি-না।
অফিসার বললেন, নো স্যার। কোর্টে যান, মহামান্য জজ সাহেব মাপ করলেও করতে পারেন।
হিমেল মনে মনে স্থির করে ফেলল, ফাইন তো সে দেবেই না বরং কোর্টে গিয়ে ডিফেন্ড করবে।
একদিন কোর্টে গিয়ে নির্দোষ প্রমাণের কেস ফাইল করলে কোর্টের ক্লার্ক শুনানির তারিখ দিলেন পরবর্তী ছয় মাস পরে।
এর-ই মধ্যে মাহে রমজান শুরু হলো।
রোজার মাসে সাইড-ওয়াক দিয়ে হেঁটে সময় পার করতে হিমেলের ভালোই লাগে।

বাড়ির সদর দরজার সামনে চুমকির পাঠানো পার্শেল
বাড়ির সদর দরজার সামনে চুমকির পাঠানো পার্শেল

বিশেষ করে ইফতারির পর হালকা গরমের মধ্যে হাঁটতে বেশ লাগে। একা হাঁটতে হাঁটতে সে বহুদূর চলে যায়। শরীরে যেন কোনো ক্লান্তি শ্রান্তি নেই তার। হাঁটা তো তার পুরান অভ্যাস।
কানাডায় এসে সে অবশ্য কখনো খালি পায়ে বা পাঞ্জাবি গায়ে হাঁটাহাঁটি করেনি। হাঁটাহাঁটির সময় ফ্লিপ ফ্লপ স্যান্ডেল অন্তত পায়ে থাকে। সেটা আবার পরে রুমকির ভয়ে।
তবে জুমার নামাজে মাঝে মধ্যে পাঞ্জাবি পরে হাজির হয়। বিভিন্ন ডিজাইনের তার হরেক রঙের পাঞ্জাবি আছে। ছোট শ্যালিকা চুমকি ঢাকা থেকে প্রতি ঈদে একটা না একটা পাঞ্জাবি দুলা ভাইয়ের জন্য পাঠাবেই পাঠাবে।
হিমেল দেশে থাকতেও বিয়ের পর হিমু রঙের হলুদ পাঞ্জাবি পরার সুযোগ পায়নি রুমকির কারণে। বিদেশে এসে এবার শখ হলো হলদে কালারের হিমু পাঞ্জাবি ঈদের দিন পরবে।
তাই রোজার শুরুতেই রুমকিকে না জানিয়ে আগেভাগে চুমকিকে অর্ডার দিয়েছে ঢাকা থেকে একটা হিমু কালারের হলুদ পাঞ্জাবি পাঠানর জন্য। বহুদিন হলো হিমু কালারের পাঞ্জাবি তার পরা হয়নি।
কানাডায় আসার পর তো নয়ই।
চুমকিও বলেছে সে পাঠাচ্ছে।
ঈদের আর মাত্র কয়টা দিন বাকি।
হিমু রঙের পাঞ্জাবিটা এখনো এসে পৌঁছাল না। হিমেল ওদের স্থানীয় কানাডা পোস্টের আউটলেটে খোঁজ করেও কোনো হদিস করতে পারল না।
ওদিকে চুমকি পাঞ্জাবির পার্সেলটা যথাসময়ে ঢাকা জিপিও থেকে পোস্ট করার দিনক্ষণ কনফার্ম করেছে এবং ট্র্যাকিং নম্বরটাও দিয়ে দিয়েছে।
আগামীকাল ঈদ। ঈদের প্রথম জামাত সকাল সাড়ে ছয়টায় এবং দ্বিতীয়টি সকাল নয়টায়।
হিমেল অনলাইনে ট্র্যাকিং করে অবশেষে জানতে পারল পার্সেলটা কানাডার প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রদেশ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভার শহরের কানাডা বর্ডার সার্ভিসেসের অফিসে এসে পৌঁছেছে।
সেখানে রুটিন চেকআপ শেষ হলেই টরন্টো আসবে।
কি আর করা।
হিমু কালারের চকচকে হলুদ পাঞ্জাবিটা ঈদের দিন পরা হলো না তার।
ঈদের পরে রুমকিরা পরিবারের সকলে মিলে একদিনের জন্য শহরের একটু বাইরে গিয়েছিল।
ফিরে এসে হিমেল দেখতে পেল নিজেরদের হাউসটার বন্ধ থাকা মেইন ডোরের নিচে চুমকির হাতে অ্যাড্রেস লেখা পার্সেলের প্যাকেটটা পড়ে রয়েছে।
যার ওপর একটা স্টিকার সাঁটানো এবং তাতে লেখা, ওপেন্ড বাই কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস।
পুনশ্চ: ১৯ জুলাই আমাদের প্রিয় কথাসাহিত্যিক হ‌ুমায়ূন আহমেদের তৃতীয় প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আমার এই লেখালেখির ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু তাঁকে উৎসর্গ করলাম।
(লেখক কানাডার টরন্টোপ্রবাসী। ই-মেইল: [email protected])