অলংকরণ: মাসুক হেলাল

যেখানে চাষ হয় শিম, বাঁধাকপি আর বরবটি,
মন পড়ে রয় লাউয়ের ডগায়, জংধরা টিনের ঘরে;
ফসলের গন্ধে মিশে থাকে আকাশ-বাতাস-মাটি
আড়ষ্ট হয়ে যাই কংক্রিটের মোটা দেয়ালের মাঝে,
পাকা রাস্তা, সিগন্যাল বাতি, ল্যাম্পপোস্ট আর গাড়ি।
চোখ নষ্ট করে দেয় সভ্যতা আর নিষ্ঠুর যান্ত্রিকতা।
ছোট্ট জীবনে যান্ত্রিকতার ভিড়ে একটি মুহূর্ত,
হাঁফ ছেড়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে ওই মাটির পথে,
পথে পথে লুঙ্গি পরে হেঁটে চলা আপন মানুষেরা।
থরেবিথরে সাজানো বিস্কুটের কৌটা আর পান,
সসপ্যানে দুধ-চা জ্বাল করা হয় যে মাটির চুলায়!
আহ! পোড়া লাকড়ির গন্ধ, এত্ত আপন হইতে পারে,
ফিরে পেতে চাই লোডশেডিং আর ঘন অন্ধকার।
সন্ধ্যা নামতেই মুহুর্মুহু আজানের ধ্বনি। আহা!
কালবৈশাখে আম কুড়ানো আর শিলাবৃষ্টি।
আহা রে জীবন! এত্ত সুখ ওই ভেসে যাওয়া বৃষ্টিতে!
কামরাঙা, বরই, সফেদা, কালোজামের মাঝে সুখ।
সাঁঝবাতির কাঁপা আলোয় বসে ভূতের গল্পে,
শিহরিত মুহূর্তে ঝিঁঝি পোকার ডাক! ভয়! ভয়!
টিনের কেরোসিন বাতির সলতে পোড়ার গন্ধ!
কেরোসিনের উটকো গন্ধও মিষ্টি হইতে পারে,
রসগোল্লাও ফিকে! মিষ্টি ওই কেরোসিন পোড়ায়!
কংক্রিটে বন্দী অসহায়ত্ব দূর পরবাসেই ঠাহর হয়,
গোবর আর ঘুঁটের গন্ধও এত আপন হইতে পারে!
ঘন বাঁশঝাড়ের জোনাকি পোকাও যেন আত্মার
মাঝে মিশে থাকা আমি, যে কিনা শহরে অসহায়।
হাওয়ায় দুলতে থাকা নৌকার জীবনেও এত্ত সুখ,
লাকড়ির চুলায় ভাত ফুটিয়ে খাওয়ায় কত না মজা।
ইলেকট্রিক চুলার ভাত, ট্যাপের পানিতে সুখ নাই,
গরমে টিউবওয়েলের শীতল পানিতে সকল সুখ!
পানাপুকুরে এপাড়–ওপাড় ডুব দিয়ে যে মজা,
সুইমিংপুল আর বাথটাবে সে সুখ কোথায়!
শ্যামলা-কালো রুগ্ণ মুখের ভিড়ে গল্পে গল্পে মুখর,
আপন ভাষা! যে ভাষায় ব্যথারাও কথা কয়,
লাগবে না—মোবাইল, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, চার্জার!
আবার ফিরে যেতে চাই, ওই মায়ায়, বটের ছায়ায়,
বাঁশের বেঞ্চে গামছা মাথার নিচে ঘুমোবার প্রয়াস!
যান্ত্রিকতামুক্ত ঘুম, প্রকৃতির কোলে মাথা পেতে রই,
কচুগাছ, ত্যালাকচুর পাতার ঝাড়, আকন্দ ফুল।
ঢোলকলমির ঝোপ ডাকে আমায়—ফিরে আয়!
আমাদের মাঝেই জীবন! অসহায় আমি নিরুপায়!
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রই, জীবন পেতে চাই!
কানে বাজে মুহুর্মুহু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন,
ইউটিউবের বিরক্তিকর বিজ্ঞাপনের শব্দে ঘেন্না!
আহা রে জীবন! আহা জীবন! আহা মাটি, মানুষ!