হারিকেন ডোরিয়ান: ফ্লোরিডার অভিজ্ঞতা
গতকাল (২ সেপ্টেম্বর) সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে ছিল লেবার ডের সাধারণ ছুটি। আর দেশটির ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ইমারজেন্সি ছুটি। কারণ ফ্লোরিডায় শক্তিশালী হারিকেন ‘ডোরিয়ান’ আঘাত হানার কথা ছিল।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস ধারণা করেছিল, এটি সরাসরি ফ্লোরিডার দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় (অরল্যান্ডো ও জ্যাকসনবেলে উপকূলে) ব্যাপক শক্তি নিয়ে (ক্যাটাগরি পাঁচ, গতিবেগ প্রায় ২৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টা) আঘাত হানতে পারে।
গত সপ্তাহে দক্ষিণ আটলান্টিকে উৎপত্তি হওয়া এই ঘূর্ণিঝড় পরে গতিপথ কিছুটা পরিবর্তন করে। গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা একটু কমে গেছে বলা যায়। ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ ক্যারোলিনার দিকে কিছুটা টার্ন করেছে। তবে আজ মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) হারিকেন ডোরিয়ানের প্রভাব এখানে পরিলক্ষিত হবে।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে গত রোববার হারিকেনটি ফ্লোরিডার দূরবর্তী বাহামা দ্বীপে আঘাত হেনেছে। তখন হারিকেনটি ছিল ক্যাটাগরি চার মাত্রার (গতিবেগ প্রায় ২০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা) এবং খুব শক্তিশালী। বাহামাতে প্রায় ১৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও পাঁচজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল স্থানীয় আবহাওয়া অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বেলা ১১টার দিকে হারিকেন ডোরিয়ানের গতিবেগ একেবারে কমে গিয়ে (প্রায় ২ কিলোমিটার/ঘণ্টা) আস্তে আস্তে এগোচ্ছে। তবে যেকোনো সময় এটা আবার ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। মোবাইলে বারবার হারিকেন ডোরিয়ান সম্পর্কে সতর্ক বার্তা আসছে। তাই এখানে প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।
২ সেপ্টেম্বর ফ্লোরিডার সেন্ট অগাস্টিনে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে আর বাতাস বয়েছে জোরে জোরে। এই অন্ধকার হয়ে এসেছে আবার আলো ফুটেছে। ফ্লোরিডার প্রায় সর্বত্রই রেড অ্যালার্ট। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় এলাকাসহ পাশের শহরগুলোতে। সাধারণ দোকান থেকে শুরু করে সবকিছু প্রায় বন্ধ। শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, পার্ক, ব্যাংক, মিউজিয়াম, স্কুল, কলেজ, অফিস সবকিছু বন্ধ। বিমানের লোকাল ফ্লাইটগুলোতে চলছে রেড অ্যালার্ট। শুধু আবহাওয়া অফিসগুলো খোলা ও ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে সেখানে। স্থানীয় প্রশাসন এখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। মানুষজন ইতিমধ্যে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) থেকেই মানুষ উপকূলীয় এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে। চার-পাঁচ দিনের জন্য সবাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিশেষ করে সবজি, খাওয়ার পানি, ওষুধপত্র, শুকনো খাবার (রুটি/ক্র্যাকাস) আগাম কিনে রেখেছেন। মানুষজন তাঁদের থাকার ঘরগুলো রক্ষা করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন। মোটা প্লাস্টিক/পাতলা কাঠ দিয়ে জানালাগুলো সেঁটে দিয়েছেন। দরজার সামনে বালির বস্তা দিয়ে প্রোটেকশন দিয়েছেন। অফিসগুলোতে দেখা গেছে আগাম ব্যাপক প্রস্তুতি। ধারণা করা হচ্ছে, এই হারিকেনের প্রভাবে ব্যাপক বন্যা হবে, তাই সবার আগাম প্রস্তুতি।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ফ্লোরিডায় প্রায় প্রতিবছরই এই ধরনের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনে থাকে। যেন এক ঘূর্ণিঝড় রাজ্য। তাই এখানকার লোকজন অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবে তাদের প্রস্তুতি ও প্রশাসনের তৎপরতা সত্যি চোখে পড়ার মতো। প্রকৃতি কত শক্তিশালী অথচ তারা এর সঙ্গে সুন্দর মানিয়ে চলছে।
---
ড. মো. আসাদুজ্জামান মিয়া: বিজ্ঞানী ও গবেষক, এনাসটাশিয়া মসকিটো কন্ট্রোল, সেন্ট অগাস্টিন, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং সহযোগী অধ্যাপক (ডেপুটেশন), পবিপ্রবি, বাংলাদেশ।