স্রোতের বিপরীত

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

—আরে বাবা বলছিতো, আমি খাব না। আমার ক্ষিধা নেই।

এই বলে চিৎকার দিল তাসমি। মিলা খেতে ডেকেছিল মাত্র। সবাই খাবার টেবিলে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। মিলা হতবাক। তাসমির মুড বোঝাই মুশকিল আজকাল।
—আমার ওপর রাগ করার কারণটা জানতে পারি কি?
কোনো উত্তর না পেয়ে ফিরে গেল মিলা খাবার টেবিলে। খেতে খেতে চিন্তা করল, মানুষ রাগ করলে খাবারের ওপর কেন রাগ করে। খাবার বন্ধ করে কেন? এর উত্তর জানা নেই। আবার মানুষ মারা যাওয়ার আগেও খাওয়া বন্ধ করে দেয়। এই চিন্তা করে কিছুটা মন খারাপ হয়ে গেল। মিলার ধারণা ওর ছোট বোন তাসমি প্রেমে পড়েছে। হ্যাঁ, সেখানেও ক্ষিধা নষ্ট।
কিছুদিন যাবৎ তাসমির মোবাইলে একটা এসএমএস আসছে অপরিচিত নম্বর থেকে। আব্বু জানলে লঙ্কাকাণ্ড।
খেতে খেতে আব্বু জিজ্ঞেস করলেন, তাসমির কি হয়েছে?
মিলার যেন কত দায়িত্ব! কি করে জানবে আর একজনের মন খারাপের কারণ? আম্মুর মাথায় এই মুহূর্তে মিলার বিয়ের চিন্তা ছাড়া আর কোনো কিছুই নেই। সবাইকে খাবার তুলে দিতে ব্যস্ত। মিলার হবু শ্বশুর বাড়ি থেকে ঘন ঘন ফোনের কারণে তিনি খুব খুশি। বিয়ের কোনো অনুষ্ঠান হবে না, এটা তাদের পক্ষ থেকে একরকমের জিদ। সেটা নিয়ে আব্বু কথা শুরু করলেন।
—দেশে আজকাল মানুষের মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। তাদের চিন্তাধারা অবশ্য অর্থনীতির উন্নতি আনতে পারে। কি বলো?
মিলা হতাশ হলো মনে মনে। তার বিয়ের বড় অনুষ্ঠান হবে। কত মানুষ আসবে। দেখবে, দাওয়াত পাবে। হইচই বিয়ে বাড়ির...।
—তোমার ইচ্ছেও নিশ্চয়ই এই রকম। আব্বু আবার বললেন। মিলা ইতস্তত করছে দেখে তিনি বললেন, কিছু মানুষের কথা বলার সুযোগ হবে, কৃপণতার কারণ দেখাবে। কিন্তু মিলা চিন্তা করো, গতানুগতিকভাবে মানুষ দেখানোর উদ্দেশ্যে যে বিয়ের অনুষ্ঠান, সেটা ছেলে পক্ষের অপছন্দ।
মিলা নিশ্চুপ। বান্ধবীরা কি বলবে, আত্মীয়স্বজন?
এমন সময় তাসমি ঢুকল ঘরে। খেতে বসল। চোখ ফোলা। অনেক কেঁদেছে। এই রহস্য বুঝতে দেরি আছে।
আম্মু তাসমির চোখের দিকে তাকালেন। বললেন, আজ তোমার পছন্দের খাবার, গরুর কলিজা ভুনা।
তাসমি হাসল। জিজ্ঞেস করল মিলাকে, তোমার বিয়ের তারিখ পাকা?
—কেন? আব্বু জিজ্ঞাসার চোখে তাকালেন। তারপর বললেন, না মানে, অনুষ্ঠান হবে না, ছেলে পক্ষ বিরক্ত হবে। তোমার মেজাজ কি সে জন্য খারাপ?
তাসমি একটু নড়ে বসল। বলল, না, না আব্বু। চাকরি পাচ্ছি না, আর কত দিন ঘরে বসে থাকব। আর মিলা আপার বিয়ের পর আমি বেশ একা হয়ে যাব।
আচ্ছা, এতে মিলা আশ্বস্ত হলো।
আম্মু এবার মুখ খুললেন। ছেলে পক্ষ অনুষ্ঠান করে খরচ করতে চায় না। তবে দেনমোহরের অর্থ কলেমা পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মিলার নামে দিতে চায়। এটা তো বড় মনের পরিচয়।
শুনে মিলা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।
তাসমি খাওয়া শেষ করে নিজের ঘরে গিয়ে বসল।
মিলা জানতে আগ্রহী ছোট বোনের মন খারাপের কারণ। তাসমির মোবাইল ফোন বাজছে। কিন্তু ধরছে না। মিলা ওর ঘরে ঢুকে আড়চোখে এসএমএস দেখল। বড় ধরনের টাকার পরিমাণ লেখা। এবার মিলা বেশ অস্থিরতায় পড়ল। ভাবল ওকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
—তাসমি তোমার মন খারাপ, নাকি মেজাজ খারাপ। মিলা জিজ্ঞেস করে।
—কেন জিজ্ঞেস করছ আপা? আমি দেশে থাকব না, চলে যাব দেশ ছেড়ে।
—খুলে বলো, কি হয়েছে?
চাকরি পেতে গেলে যে দেশে যোগ্যতা ছাড়াও টাকার প্রয়োজন, সেটা ঘুষ।
—ঘুষ! অসম্ভব। তবে সে জন্য দেশ ছাড়া হতে হবে?
—এই মানুষগুলোর কারণে যারা ঘুষ চাইতে পারে, যারা আমাদের আশপাশে, আমাদের সমাজ। আপু তোমার ভাগ্য ভালো। এমন পরিবারে যাচ্ছ যারা আজ সৎ পথে অর্জিত পয়সার কারণে অনুষ্ঠান করে খরচ করে পয়সা ওড়ানো মনে করে। ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।
মিলা ভীষণ শান্তি পেল ছোট বোনের কথা শুনে।