সুইং স্টেটে ভাগ্যনির্ধারণ
ডেমোক্র্যাটরা ভাবছেন, তাঁরা যদি অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে জয়ী হতে পারেন, তবে হয়তো হোয়াইট হাউস ও সিনেট দুটিই দখল করতে পারবেন। জো বাইডেনের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার বলেই ফেলেছেন, ‘আমরা যদি অ্যারিজোনায় জয় পাই, তবে প্রেসিডেন্সি জিতব। বাইডেন অ্যারিজোনা যাচ্ছেন, কিন্তু যাওয়ার আগে বিজ্ঞাপনে অ্যারিজোনা ভাসিয়ে ফেলছেন।
অ্যারিজোনার প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনের ইতিহাসটা একটু দেখা যাক! এই অঙ্গরাজ্য ঐতিহ্যগতভাবে লাল বা রিপাবলিকান। ১৯৫২ সাল থেকে এই অবস্থা। ১৯৭২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ১২টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শুধু একবার ১৯৯৬ সালে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী বিল ক্লিনটন জিতেছিলেন। ২০১২ সালে রিপাবলিকান মিট রমনি ৯ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে এই রাজ্যে জনপ্রিয় বারাক ওবামাকে হারিয়েছেন। ২০১৬ সালে ট্রাম্প এই রাজ্যে হিলারি ক্লিনটন থেকে ৩.৬ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হন (ট্রাম্প ৪৮.৭% ও হিলারি ৪৫.১%)।
ফ্লোরিডায় ট্রাম্প-বাইডেন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। নিউইয়র্ক নগরের সাবেক মেয়র মাইক ব্লুমবার্গ ট্রাম্পকে হারাতে বাইডেনের জন্য সেখানে ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালের প্রাইমারিতে পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পকে হারাতে তিনি ৫০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন। সব গচ্চা গেছে, ট্রাম্প জিতেছেন। ফ্লোরিডার অবস্থাটা দেখা যাক? বলা হয়, ফ্লোরিডায় যিনি জয় পান, তিনি হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ১৯৬৪ সাল থেকে এই রাজ্যে জয়ী প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ১২টি নির্বাচনে আটবার রিপাবলিকান, চার বার ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হয়েছেন। এই অঙ্গরাজ্যে জয়ী প্রার্থী খুব কম ভোটে জয়ী হন। বারাক ওবামা প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান মিট রমনিকে হারিয়েছেন মাত্র ০.৯ শতায় ভোট (ওবামা ৫০.০% ও রমনি ৪৯.১%)। ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারিকে হারিয়েছেন ১.২ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে। জর্জ বুশ জুনিয়র প্রথমবার এই রাজ্যে জেতেন। তবে বিতর্কিত সেই ভোটের ফলাফল আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল।
সচরাচর ১০/১২টি রাজ্যকে ‘সুইং স্টেট’ বা ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট বলা হয়ে থাকে। ডেমোক্রেটিক এক নেতার মতে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ভোট এবার এসব রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে। ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি চেয়ার থমাস পেরেস কয়েক দিন আগে বলেন, শুধু মিশিগানে ১ লাখ ২৫ হাজার ভারতীয় আমেরিকান ভোটার আছে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে আমরা ট্রাম্পের কাছে ১০ হাজার ৭০০ ভোটে হেরেছি। পেনসিলভানিয়াতেও ভারতীয় মার্কিন ভোট ১ লাখ ৫৬ হাজার। ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রায় ৪৩ হাজার ভোটে এই রাজ্যে জিতেছেন। উইসকনসিনে ভারতীয় ভোট ৩৭ হাজার। ট্রাম্প জিতেছিলেন ২১ হাজার ভোটে। থমাস পেরেসের মতে এবারও এসব স্টেটে ভারতীয় আমেরিকান ও এশীয় আমেরিকান ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জো বাইডেন হয়তো এসব কারণে কমলা হ্যারিসকে তাঁর রানিং-মেট করেছেন।
৩ নভেম্বর নির্বাচনের ফল নির্ধারিত হবে এসব সুইং অঙ্গরাজ্যের ভোটে। দুই প্রার্থীই তাই এসব রাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন। উইসকনসিনে অনেক ভোটার বলেছেন, তাঁরা বাইডেনকে চেনেন না? বাইডেন ক্যাম্পেইন মরিয়া ফ্লোরিডায় জিততে, তারা জানেন ফ্লোরিডা হাতছাড়া করা যাবে না। মিনেসোটা হয়তো ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকছে! ২০১৬ সালে ট্রাম্প অন্তত ১০টি স্টেটে জিতেছেন, যেখানে ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র ২ শতাংশ। এসব রাজ্যে ১২৫টি ইলেকটোরাল ভোট আছে। জয়ের জন্য দরকার ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট। ট্রাম্প গতবার জেতা ছয়টি রাজ্য—অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন ও নর্থ ক্যারোলিনা আবার জয়ের জন্য সর্বস্ব পণ করে মাঠে নেমেছেন। এসব স্টেটে ১০১টি ভোট আছে। একইভাবে বাইডেন ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটন জেতা ৪টি রাজ্য—মেইন, মিনেসোটা, নিউ হ্যাম্পশায়ার ও নেভাদা ধরে রাখতে সচেষ্ট, যেখানে ২৪টি ইলেকটোরাল ভোট আছে।
ওহাইও না জিতে রিপাবলিকানরা কখনো প্রেসিডেন্ট হননি। টেক্সাস নীল রাজ্য নয়, হওয়ার সম্ভাবনাও আপাতত নেই? বাইডেন টেক্সাস জিতলে তা হবে ট্রাম্পের জন্য বজ্রপাতের শামিল। নর্থ ক্যারোলিনার ১৫টি ভোট ট্রাম্পকে জিততেই হবে? উভয় প্রার্থী এ রাজ্যে ব্যাপক খরচ করছেন। নেভাদা লাল থেকে নীল হয়েছে, বারাক ওবামা-বাইডেন জুটি এই কাজটি করেছেন। এবারও কি নীল থাকবে? পেনসিলভানিয়ায় জিতে ট্রাম্প ২০১৬ সালে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ১৯৮৮ সালে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ জয়ী হওয়ার পর ট্রাম্প প্রথম রিপাবলিকান যিনি পেনসিলভানিয়া জেতেন। উইসকনসিনে হিলারি হেরেছেন ও ১৯৮৪ সালের পর ট্রাম্প একমাত্র রিপাবলিকান যিনি সেখানে জয় পেয়েছেন। মিশিগান ডেমোক্রেটিক ফেবারিট, ২০১৬ সালে ট্রাম্প জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। মিনেসোটা ২০১৬ সালে ১.৫ শতাংশ ভোটে হিলারিকে সমর্থন দিয়েছিল। ব্যবধান সামান্য, ভোট ১০টি? নিউ হ্যাম্পশায়ারের ৪টি ইলেকটোরাল ভোট আছে, ডেমোক্র্যাটরা গত চারটি নির্বাচনে জিতেছেন, এবার কি ট্রাম্প জিতবেন?