সিডনিতে বিমান ধ্বংসের পরিকল্পনায় আইএস জড়িত
সিডনি বিমানবন্দরে ছাড়ার অপেক্ষায় থাকা ইতিহাদ এয়ারওয়েজের বিমানে আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) স্থাপন করে বিমান উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস (ইসলামিক স্টেট)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু ব্যক্তি। ইতিহাদ বিমানের গত ১৫ জুলাইয়ের ফ্লাইটে এক যাত্রীর লাগেজে হাই-অ্যান্ড মিলিটারি গ্রেডের এই বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল তার ভাই। তবে ওই যাত্রী এ ব্যাপারে কিছুই জানত না বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ।
সন্ত্রাসী হামলায় বিমান উড়িয়ে দেওয়ার সন্দেহভাজন পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে চারজনকে গত ২৯ জুলাই অস্ট্রেলিয়ায় আটক করে জয়েন্ট কাউন্টার টেররিজম। বিমান উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে এদের মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগও গঠন করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশের দাবি, ওই ব্যক্তিরা দুটি পরিকল্পনা করেছিল। এর একটি হলো বিমানে বিস্ফোরণ ঘটানো, আরেকটি হলো জনতার ভিড়ে অথবা পাবলিক পরিবহনে বিষাক্ত গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটানো।
আইএস-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত খালেদ খায়াত (৪৯) তাঁর ভাই আবুধাবি যাওয়ার সময় কিমা মাংস দিয়ে পেঁচিয়ে বিস্ফোরকটি একটি লাগেজে রেখে দিয়েছিল। তবে দৈবক্রমে অতিরিক্ত ওজন কিংবা অন্য কী এক কারণে যেন খায়াত সেই বোমা সমেত লাগেজ তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে আর পাঠায়নি। একেবারে শেষ মুহূর্তে কি কারণে খায়াত ওই পরিকল্পনা বাতিল করেছিল তা বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। তবে ২৯ ও ৩০ জুলাই তারিখের পুলিশের অভিযানের সময় পুলিশ বিস্ফোরক ডিভাইসের কিছু অংশ খুঁজে পায়।
এ ছাড়া, ১৫ জুলাই চক্রান্ত ব্যর্থ হওয়ার পর আইএস একটি রাসায়নিক বিপণন ডিভাইস তৈরি করতে এই সন্ত্রাসী অভিযুক্তদের নির্দেশাবলি পাঠায়। তাতে বলা হয়, জনাকীর্ণ স্থান বা পাবলিক পরিবহন ডিভাইস স্থাপন করে বিষাক্ত গ্যাস বিস্ফোরণ করার জন্য। কিন্তু আন্তর্জাতিক গুপ্তচর সংস্থা ২৬ জুলাই অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষকে এ সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানায়। সঙ্গে সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার আইন প্রয়োগকারী বাহিনী তৎপর হয়ে গত ২৯ জুলাই সিডনির সারিহিলস, লাকেম্বা, উইলিপার্ক ও পাঞ্চবৌল এলাকায় সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তখনই বিমান উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা সামনে আসে।
অস্ট্রেলীয় পুলিশের ডেপুটি কমিশনার মাইক ফেলান বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সংগঠিত সবচেয়ে অত্যাধুনিক পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে এটি একটি। তিনি জানান, বোমা বহনকারী লাগেজটি বিমানবন্দরে আনার পর তা কোনো নিরাপত্তা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যায়নি। তিনি আরও বলেন, আইএস-এর জ্যেষ্ঠ এক নেতা তুরস্ক থেকে বিস্ফোরক ও বিষাক্ত গ্যাস তৈরির উপকরণ ও ফর্মুলা পাঠিয়েছিলেন।
এ অভিযান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তখন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেছিলেন, এটি বড় ধরনের একটি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান ছিল। একটি বিমান উড়িয়ে দেওয়ার সন্ত্রাসী প্রচেষ্টাকে রুখে দেওয়া হয়েছে। জনগণকে নিরাপদ রাখাই আমাদের প্রথম প্রাধান্য।
তথ্যসূত্র: দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড