সাস্কাতুনে বাসুসের নবীনবরণ ও বিদায় সংবর্ধনা

অনুষ্ঠানের পোস্টারে ঐকতান কাব্য নাটকের শেষ দৃশ্য
অনুষ্ঠানের পোস্টারে ঐকতান কাব্য নাটকের শেষ দৃশ্য

কানাডার সাস্কাচেওয়ান প্রদেশের সাস্কাতুনে বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি অব সাস্কাচেওয়ানের (বাসুস) উদ্যোগে নবীনবরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাসুস প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ালেখার জন্য ইউনিভার্সিটি অব সাস্কাচেওয়ানে আসেন। ক্রমশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এবারও রেকর্ড পরিমাণ শিক্ষার্থী এখানে এসেছেন।

এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, যারাই সাস্কাতুনে আসেন (আন্ডারগ্রাড, মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামে), তারা যদি আসার আগে কোনো না কোনোভাবে এখানকার কারও সঙ্গে আগে থেকে যোগাযোগ করেন তাহলে বাসুস, বিকাশ বা সাস্কাতুনের বাংলাদেশি কমিউনিটি তাদের যেকোনো ধরনের সহায়তা প্রদান করে থাকে।

বাসুসের নতুন কার্যকরী কমিটির সদস্যরা
বাসুসের নতুন কার্যকরী কমিটির সদস্যরা

১৯ নভেম্বর শনিবার ইউনিভার্সিটি অব সাস্কাচেওয়ানের শিক্ষা ভবনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এই নবীনবরণ ও বিদায় সংবর্ধনা। এবারের অনুষ্ঠান ছিল একটু ভিন্নধর্মী। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিশেষভাবে এবারের আয়োজনে ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশ ও কানাডার জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই নবীনদের বরণ করে নেওয়া হয় ফুলেল শুভেচ্ছা ও মজার একটি খেলার মাধ্যমে। সব নবীনই ফ্যাশন প্রদর্শনীর ভঙ্গিতে এক এক করে মঞ্চে আসেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশি অধ্যাপক ও বিকাশের সভাপতি সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের হাতে বাসুস প্রদত্ত সম্মাননা ট্রফি তুলে দেন। এ পর্যায়ে বাসুসের নতুন কার্যকরী কমিটিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান সাংস্কৃতিক পর্ব। সুন্দর সুন্দর বেশ কয়েকটি পর্ব দিয়ে সাজানো হয়েছিল সাংস্কৃতিক পর্বটি। যার কয়েকটির কথা না বললেই নয়।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্যে তিনটি অংশ দর্শকদের বিশেষভাবে নজর কাড়ে। একটি ছিল নির্বাক অভিনয়। কথা ছাড়াও যে অভিনয় দিয়ে দর্শকদের পুরো বিষয়টি বোঝানো যায় এই নাটকটি তার একটি উদাহরণ। একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির মানিব্যাগ হারিয়ে যাওয়া এবং তা বিভিন্ন হাত ঘুরে আবার সেই ব্যক্তির কাছে ফিরে আসাই নাটকের মূল কাহিনি। প্রচণ্ড হাস্যরস সমৃদ্ধ নাটকটি দর্শকদের অভূতপূর্ব বিনোদন জুগিয়েছে। নির্বাক অভিনয় হাতবদল নাটকের রচয়িতা ও নির্দেশক ফাহমিদ। বিভিন্ন মজার মজার চরিত্রে অভিনয় করেন মাশরাফি, ফাহাদ, সুমি, অপূর্ব, মোশাররফ, অর্ণব, দীপ্ত, অনি ও শাওন।

ছায়াছন্দের দৃশ্য
ছায়াছন্দের দৃশ্য

এ পর্বে পরিবেশিত ছায়াছন্দ কিছুক্ষণের জন্য হলেও হলভর্তি দর্শকদের বাংলাদেশের বিটিভি প্রচারিত সেই ছায়াছন্দ অনুষ্ঠানে নিয়ে যায়। ছায়াছন্দ ছায়াছন্দ এই গানটি দিয়ে শুরু হওয়া এই অংশে অত্যন্ত জনপ্রিয় পাঁচটি বাংলা ছায়াছবির গান পরিবেশিত। গানের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে যারা অভিনয় ও নাচ পরিবেশন করেন তারা হলেন মাশরাফি, ফাহাদ, সুমি, অপূর্ব, মোশাররফ, অর্ণব, দীপ্ত, অনি ও শাওন। ছায়াছন্দের কোরিওগ্রাফি করেছেন প্রত্যাশা ও প্রজ্জল।
সবশেষে একটি অত্যন্ত আবেগঘন পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের ওপরে নির্মিত এই অংশটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। এটি একটি কাব্যনাট্য। যার নাম ঐকতান, যেটা কিনা অনুষ্ঠানের মূল নামকরণ ছিল। ঐকতানের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে মানবতার জাগরণে মুছে যাক সব বিভাজনের ক্রন্দন। নির্দেশনা ও কাব্যায়নে ফাহমিদ ও সুমি আর চরিত্র রূপায়ণে ছিলেন দীপ্ত, স্বাক্ষর, প্রত্যাশা, অপূর্ব, অর্ণব, রনি, আসিফ, শময়িতা, তাসনিয়া, সওগাত, সঞ্চি, স্বর্ণা ও মোশাররফ। আমাদের সমাজের বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও পেশার মানুষদের উপস্থাপন করে সবার মাঝে ঐকতানের আহ্বান জানানো হয়েছে। এই পর্বটি পরিবেশনার সময় সমস্ত হল জুড়ে পিনপতন নীরবতা পরিলক্ষিত হয়েছে।

হাতবদল নির্বাক নাটকের দৃশ্য
হাতবদল নির্বাক নাটকের দৃশ্য

অনুষ্ঠানে সাস্কাতুনের অন্যতম কণ্ঠশিল্পী রাজীব পোদ্দারের পাশাপাশি সংগীত পরিবেশন করেন। প্রত্যাশা, ফাহমিদ, শোভন ও সুমির প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় পুরো অনুষ্ঠানটি আরও বেশি উপভোগ্য হয়েছে।
সাস্কাচেওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্রাড, মাস্টার্স ও পিএইচডির শিক্ষার্থীরা ছাড়াও কর্মসূত্রে সাস্কাতুনে বসবাসরত বাসুসের অ্যালামনাই সদস্যরাও এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। শেষে উপস্থিত সকলকে সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়। বিদেশে ছাত্রাবস্থায় পড়ালেখা ও পার্টটাইম কাজের পাশাপাশি মাসব্যাপী রিহার্সাল করে এমন একটি নয়নাভিরাম অনুষ্ঠান উপহার দেওয়া সহজ কথা নয়। তার চেয়েও বড় কথা হলো আমাদের এই প্রজন্ম খুব ভালোভাবেই তাদের হৃদয়ে দেশপ্রেম ও স্বদেশি সংস্কৃতিকে ধারণ করে রেখেছে যা সত্যি বাহবা পাওয়ার যোগ্য।