সমুদ্রের গর্জন আর নীলাভ আকাশ

রুপালী ভালোবাসার কাঙাল। যার স্বপ্ন ঘিরে থাকে শুধুই ভালো লাগা আর ভালোবাসা। ছোটবেলা থেকেই সমুদ্র সৈকত দেখার খুব ইচ্ছা ছিল রুপালীর। যদিও তার জন্ম চট্টগ্রামে। তবুও সমুদ্র দেখার সৌভাগ্য তার হয়ে ওঠেনি। আর সেই ইচ্ছা, স্বপ্ন সেদিন পূর্ণ হলো, যেদিন রুপালী বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেল।
স্বামীকে কী বলে যে ধন্যবাদ জানাবে রুপালী সে ভাষা যেন তার জানা নেই। নিঃসন্দেহে দিনটি ছিল জীবনের অন্যতম সুন্দর একটি দিন। রুপালী সমুদ্র পারে গিয়ে কল্পনার জাল বুনতে থাকে। অদ্ভুত গর্জনের সঙ্গে নীল জলের বিশাল ঢেউ দেখে স্তম্ভিত রুপালী। প্রকৃতি এত সুন্দর! বিধাতার কী অসাধারণ সৃষ্টি!
দেখতে গিয়ে বিচের পানি থেকে দূরে দূরে হাঁটতে থাকে। বাচ্চারা সব ছোটাছুটি করে হাঁটতে লাগল। এত সুন্দর সমুদ্রের বিশালতা। ঢেউয়ের উচ্ছ্বাস। পারে এসে আছরে পড়ছে। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে। সামনে কিছু নেই, দূর পর্যন্ত গর্জন। নীল ঢেউ আর ঝকঝকে আকাশে হৃদয় সম্পূর্ণ। জুতা খুলে ঢেউয়ের কাছে যায় রুপালী। প্রথম ঢেউ এসে পা ছুঁয়ে গেল। পা ছুঁয়ে যাচ্ছে আর বালি সরিয়ে নিচ্ছে পায়ের তলা থেকে। চারপাশে রাশি রাশি ঢেউ। ঢেউয়ের গর্জন।
আচ্ছা অনুভূতিগুলো কী এমনি হয় সমুদ্রের কাছে গেলে! ভীষণ অদ্ভুত আর অবিশ্বাস্য ভালো লাগার ছিল দিনটি। যুগলবন্দী লোকজন আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে। ছোট ছেলে-মেয়েরা বালি দিয়ে প্রাসাদ বানিয়ে খেলছে। কেউ বিচে বল খেলায় মগ্ন। কেউ কেউ সাইকেল চালিয়ে ঘুরছে। কী রকম অনুভূতি! কী পরিমাণ উচ্ছ্বাস। সবাই ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবি তুলছে। কেউ চেয়ারে পাশাপাশি বসে সূর্য স্নান করছে। ছাতার নিচে চাদর বিছিয়ে পিকনিকের মতো খাওয়া দাওয়া করছে। খালি পায়ে গরম বালির ওপর হেঁটে চলছে।
রুপালী শুধুই দেখছে। সবাই যেন সমুদ্রের পানির সৌন্দর্য উপভোগ নিয়ে ব্যস্ত। আর কিছু যেন অনুভব করতে পারছে না শুধু সমুদ্র ছাড়া। কিছু সময় পর অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল। রুপালী দেখল পায়ে আর ঢেউয়ের পানি এসে আছড়ে পড়ছে না! ভীষণ আশ্চর্য লাগল। ঢেউ সরে গেছে দূরে। এখন শুধু বালি ভেজা জায়গাটি জল শূন্য! সমুদ্র এত রহস্যময়!
যেখানে এতক্ষণ জল ছিল। ভাটার জন্য সেখানে এখন প্রবাল জেগে উঠেছে। রুপালি শুনেছিল জোয়ার ভাটার গল্প। একে ভাটা বলে। প্রবাল পা দিয়ে ছুঁয়ে দেখে। ভীষণ পিচ্ছিল। নিজের চোখে দেখে মুগ্ধ হওয়া।
বিচের যেখানে চোরাবালি আছে সেখানে যাওয়া নিষেধ। কিছুক্ষণ পর পর ঢেউ আসায় সব বালি যেন এক সঙ্গে সরে গেছে! কি অদ্ভুত দৃশ্য! অপরূপ মনভোলানো সমুদ্র! সমুদ্রের কাছে এলে মানুষের মন কী সমুদ্রের মতো বিশাল হয়ে যায়! নাকি সবকিছু মনে করিয়ে দেয়! রুপালি দৌড়ে গিয়ে স্বামীর কাছে আবদার করে জানতে চায়, বিচের পানি ছুঁয়ে আনন্দ করবে কি না। একটা যুগল ছবি তুলতে চায়।
উত্তর আসে, এ বড্ড ছেলেমি! এতসব করার সময় তার নেই। বিচে আসা মানে ছবি তোলা বা জল নিয়ে খেলা করা নয়। এতক্ষণের ভাবনার মায়াজাল ভেঙে চুরমার করে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে গেল। রুপালির কেন যেন মনে হলো, যার হাত ধরে আজ এই সমুদ্রের পাড়ে আসা-সে তো আমার নয়। মনের গহিনে লুকিয়ে রাখা প্রতিটি অনুভূতি, ভালোবাসার মিষ্টি প্রলাপ।
চিৎকার করে বলতে চায় রুপালি, খুব ভালো যে তোমাকে বেসেছি। তোমাকে খুব বেশি আপন করে চেয়েছি। কাছ থেকে পেতে চেয়েছি। আমার ইচ্ছেগুলো মন খুলে বলতে চেয়েছি তোমায়। যে কথাগুলো সাজিয়ে রেখেছি বুকের ভেতর অনেক যত্ন করে। শুধুই তোমার জন্য। ভাবতে চাই, তুমি আমারই।
রুপালী কিছু আর ভাবতে পারে না। শুধুই তখন সমুদ্রের গর্জন আর নীলাভ আকাশ দেখে।