লস অ্যাঞ্জেলেসের ভ্রমণ ডায়েরি

করোনাকালের মধ্যেই দীর্ঘদিন পর আবার বিদেশ ভ্রমণ। দীর্ঘদিনের কোয়ারেন্টিন আর ঘরবন্দীর জীবন শেষে আমার এ ভ্রমণ ছিল বন্দী পাখিকে খাঁচামুক্ত করার মতো। বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘ পথ ভ্রমণ শেষ করে লস অ্যাঞ্জেলেসে পৌঁছামাত্র মাত্র সব ক্লান্তি কেটে গেল।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে যখন নামলাম, তখন খুব সকাল। ঘুমের ঘোর কাটেনি। আমেরিকান নারী পুলিশদের দেখে আমি কিছুটা বিস্মিত, সঙ্গে তাদের প্রশিক্ষিত জার্মান শেফার্ড কুকুরগুলো। কুকুরগুলো খুব সচেতন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমার কাছে কুকুরগুলো আমেরিকান মনে হলেও আমেরিকান নারী পুলিশদের মনে হয়েছে আফ্রিকান। ট্রলি নিয়ে হেঁটে যেতে যেতে বারবার খেই হারিয়ে ফেলছিলাম। আহা হলিউড! আমার মুভিপ্রেমী মন কতবার ছুটে গেছে চোখধাঁধানো শহর লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউডে। আনন্দ, বিনোদন, আভিজাত্য আর চলচ্চিত্রের প্রাণকেন্দ্র হলিউড। বাস্তবে এ আমি কী দেখছি! এরপর লম্বা বিশ্রাম।

বিশ্রাম শেষে রাতে বের হলাম ঘুরতে। দিনের হলিউড আর রাতের হলিউডে অনেক তফাত। এখানে এসে দেখে মনে হয় না পৃথিবীতে করোনা বলে কিছু আছে। মাস্ক ছাড়া জীবন মুক্ত জীবন। এমন পরিবেশ পেয়ে আমার মধ্যেও প্রাণচাঞ্চল্য জেগে উঠল। সবকিছু স্বাভাবিক, ঠিক যেন করোনা মহামারির আগের পৃথিবী। প্রায় শতভাগ টিকা দেওয়ায় এখানে সবকিছুই আগের মতো স্বাভাবিক। বাংলাদেশে এখন বিধিনিষেধ চলছে। তার কোনো ছোঁয়া এখানে নেই।

সারাটা পথ অনেক ভালো কিছুও ছিল। এর মধ্যে আমরা পৌঁছে গেছি হলিউড এলাকায়। আহা! আমার সেই স্বপ্নের হলিউড? টিনসেল টাউনের সেই হলিউড লেখা সাইন। কত রকমের ভিজিটর। চারদিকে রমরমা পরিবেশ।

লস অ্যাঞ্জেলেস ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের বৃহত্তম শহর এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। পর্যটকদের জন্য বিশ্বজুড়ে এই শহর জনপ্রিয়। এখানে অনেক ছবির শুটিং করা হয়। এ জন্য রাস্তায় বেরোলে দেখা হয়ে যেতে পারে ব্রাড পিট, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওদের সঙ্গে। দেখে মনে হয় লস অ্যাঞ্জেলেসে সমস্ত স্বপ্ন বাস্তব হয়, সম্ভবত এ কারণেই প্রতিবছর প্রায় এক মিলিয়ন ভ্রমণকারী এখানে আসেন।

লস অ্যাঞ্জেলেসে খেলাধুলা ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা রয়েছে, তাই প্রায় প্রতিটি পাবলিক জায়গায় ব্যায়ামের সরঞ্জামসহ একটি খেলার মাঠ রয়েছে। এখানে মিউজিশিয়ানরা নানা আয়োজন নিয়ে মেতে আছেন সব জায়গায়। বিখ্যাত বিখ্যাত ফ্যাশনেবল শপ এবং ক্যাফে রয়েছে এখানে। এটি হ্রদ শাইন বাগানের প্রবেশপথ। মাঝখানে একটি হ্রদসহ ছোট আরামদায়ক পার্ক। গ্রিফিথ অবজারভেটরিতে সূর্যাস্ত আপনার মন প্রশান্তিতে ভরিয়ে দেবে।

এরপর যাই দেশের সর্বাধিক বিখ্যাত পার্ক ইউনিভার্সাল স্টুডিওজ হলিউডে। এই অঞ্চল বিনোদনে ভরপুর। দর্শনার্থীর জন্য আছে টিকিট কিনে দেখার ব্যবস্থা। একদিকে রয়েছে সর্বাধিক আধুনিক ক্যারোসেল, রোলার কোস্টার, হাসি এবং ভয় পাওয়ার জায়গা, অন্যদিকে মুভি গ্যালাকটিকো। এখানে আপনার প্রিয় সিনেমা এবং টিভি শোগুলো দেখতে পাবেন। দেখার জন্য একটি বাধ্যতামূলক বিষয় হলো ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস (ইউসিএলএ)। এটি আমেরিকার সর্বাধিক বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যা এই শহরের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।

ক্যাসিনো লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের প্রধান আকর্ষণ। দুনিয়াজোড়া সবাই এসে এখানে ঢুঁ মেরে যাওয়া একবার চাই-ই। আমিও ঘুরে এলাম ক্যাসিনো থেকে। দুনিয়ার সব বয়সের নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের এমন মিলনস্থল সচরাচর চোখে পড়ে না। দেখলাম আর অবাক হলাম। তবে সবকিছুর পরও হলিউডের ম্যাক্স মিউজিয়াম, হলিউড সাইন, সমুদ্র, পাহাড়, চার্চ, বড় বড় ঐতিহাসিক ভবন, জমজমাট বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ—সবই ছুঁয়ে গেছে মন। কোনো একদিন সময় হলে স্মৃতিচারণা হবে হলিউডের যে স্মৃতিগুলো মনে দোলা দিয়ে গেছে, তা নিয়ে।

*লেখক: আরিফুর রহমান, লস অ্যাঞ্জেলেস