লজ্জা ভাঙার লজ্জা
বাংলাদেশি নির্লজ্জ আর ইউরোপের নির্লজ্জ এক নয়। ইউরোপে এসে বাঙালিরা প্রথম যেটা হারায়, সেটা হলো, লজ্জা কিংবা চোখের পর্দা। আমার পরিষ্কার মনে আছে, যেদিন প্রথম আমস্টারডাম শহরে ঘর থেকে বের হয়ে বাস স্টপে দাঁড়ালাম, দেখি ওখানে দুজন ছেলে–মেয়ে অবলীলায় চুমু খাচ্ছে। আমি খুব লজ্জা নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম। মাঝেমধ্যে চোরা চোখে দেখছিলাম না, এমন নয়। এখন ওসব অনুভূতি কোথায় চলে গেছে। এখানকার রাস্তার বিজ্ঞাপনেও প্রচুর যৌনতার ছড়াছড়ি...দেখে দেখে আপনার চোখ ভোঁতা হয়ে যেতে বাধ্য।
দেশে থাকতে কোনো বাসায় খেতে বললেই খেতে বসে যেতাম না ক্ষুধা থাকলেও। ওই সময় বিষয়টিকে শিষ্টাচার হিসেবেই দেখা হতো। একই ভাবধারা বজায় রেখে এখানে প্রথম যে বাঙালির বাসায় গেলাম, তিনি খেতে সাধলেন, আমি ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও মানা করলাম। উনি আর সাধলেন না। সবাই অবলীলায় আমার সামনে বসে খেল। কেউ দ্বিতীয়বার ডাকল না। বাংলাদেশের মানুষ বোধ হয় এখনো ঠিক এ রকম হয়ে ওঠেনি। সাধাসাধি করে খাওয়ায়।
ইউরোপপ্রবাসী বাঙালিরা শরীর নিয়ে গল্প করে কোনো সংকোচ ছাড়াই। প্রথম দিকে শুনতে লজ্জা লাগত, এখন তো লজ্জা লাগেই না বরং মাঝেমধ্যে অংশগ্রহণ করি সম্ভবত। কখন যে লজ্জা বা সংকোচ নিজের মধ্যে থেকে উধাও হয়েছে, টেরই পাইনি। এখানকার বাঙালিরা যেটাকে স্বাভাবিক আলাপ ভাবেন, দেশে কিন্তু সেটাকে তা মনে করা হয় না। এবং বিষয়টি এখান থেকে দেশে গেলে আমি অন্তত টের পাই। একবার দেশে গিয়ে একজন বয়স্ক লোকের সঙ্গে গল্প করতে গিয়ে বদ অভ্যাস নিয়ে কথা হলো। উনি সুন্দর করে বললেন, তাঁর কোনো বদ অভ্যাস নেই।
আমি হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করলাম, মেয়েদের স্কুল–কলেজের সামনে চায়ের দোকানে বসে চা খাওয়ার ছলে মেয়েমানুষও দেখেন না? বুঝতে একটু সময় নিলেন, এরপর হাসতে হাসতে তাঁর মাটিতে গড়াগড়ি দেওয়ার অবস্থা হয়েছিল। বললেন, শুনেছি ইউরোপে মানুষ খুব সহজেই আলগা কথা বলে ফেলে, আজ বাস্তবে দেখলাম। আমি গম্ভীর ভঙ্গিতে বললাম, এটা তো প্রশ্নের উত্তর হলো না? উনি উত্তর দেননি। হেসেই গেছেন।
তবে আমাদের এ চক্ষুলজ্জা কিন্তু একদিনে ভেঙে যায়নি। পরিবর্তনটা ধীরে ধীরে হয়। অনেকের জন্য এ লজ্জা ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারটি খুব কষ্টের। কিন্তু যখন ভেঙে যায়, তখন তো সব...
ইউরোপীয়ান নির্লজ্জের একটা বিবরণ দিই। তখন বিএএসএফ নামের একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। রাতের শিফটে কাজ। ওখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও আছে। অনেকেই মাটির নিচে ডিউটি করেন। তাঁদের নিচে নামতে একবার এবং ডিউটি শেষ করে একবার—দুইবার গোসল করতে হয় তেজস্ক্রিয়ের কারণে। অনেক বাথরুম–টয়লেট সেখানে। একদিন হাত–মুখ ধুতে বাথরুমে ঢুকে দেখি বয়স্ক এক লোক সম্পূর্ণ উলঙ্গ! গোসল করে বের হয়ে খোলা বাথরুমে বেসিনের সামনে শেভ করছেন আর গান গাইছেন। হতভম্ব আমি বের হয়ে যাব, তিনি আমাকে ডেকে বললেন, আমি হোমো না, তুমি তোমার কাজ করতে পার। আমি কান লাল করে বেরিয়ে গিয়েছিলাম...