যেখানে মনে পড়ে দেশের কথা

যারা আমেরিকায় থাকেন তারা সবাই কমবেশি জানেন পাহাড়ের রাজ্য বলা হয় ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াকে। চারদিকে এত সুন্দর সবুজ পাহাড় খুব কম স্টেটে দেখা যায়। অবশ্য আমি যেখানে থাকি সেটাও পাহাড় আর সবুজে ঘেরা। যা হোক আমরা আটজন সেই ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে পৌঁছালাম। আমরা সাতজন বাংলাদেশি আর একজন আমাদের ভারতীয় বন্ধু।
যাওয়ার পথ এত আঁকাবাঁকা যেন আমাদের বান্দরবানের কথা মনে করিয়ে দেয়। গাড়ি চালাচ্ছিলাম আমি। মনের অজান্তেই বারবার আমার দেশের কথা মনে পড়ছিল। এমন সরু রাস্তা আর বাঁক শুধু আমাদের দেশেই আছে বলে জানতাম এত দিন। এখন দেখি আমেরিকার মতো দেশেও রাস্তার এই অবস্থা।

আমরা আমাদের থাকার জন্য মাউন্টেনের ভেতর কেবিনের ব্যবস্থা করেছিলাম। এই দেশে কত রকম ব্যবস্থা আছে না দেখলে বোঝা যায় না। চারদিকে জঙ্গল মাঝখানে পাঁচটা কেবিন। অন্য রকম অনুভূতি। আমরা আশা করেছিলাম রাতে দুই-একটা ভালুক দেখব। সেটা হয়নি। শুধু হরিণ দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো।
পরদিন সকালে আমরা রওনা দিলাম পার্কের ভেতরে ঝরনা দেখতে। ব্ল্যাক ওয়াটার ফলসে তিন রঙের পানি পড়ে। এত সুন্দর ঝরনা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আসলে এই জায়গা আরও সুন্দর লাগে অক্টোবরের মাঝামাঝি এলে। তখন fall burst শুরু হয়। যারা জানেন না তাদের জানাচ্ছি, fall burst-এর সময় চারদিকে এত সুন্দর রং দেখা যায় যা কল্পনার রাজ্যকেও হার মানায়।

ঝরনা দেখার পর আমরা সবাই বোটিং করার জন্য রেডি হলাম। সেখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম সব নৌকা একদিন আগে থেকেই ভাড়া হয়ে গেছে। কী আর করার সবার মন খারাপ করা ছাড়া আর উপায় নাই। সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে রাতেই আমরা বার-বি-কিউ করব। কথায় আছে মন ভালো করার জন্য সব থেকে ভালো উপায় হলো খাওয়া দাওয়া। আর বাংলাদেশি হলে তো খাওয়া দাওয়ায় একটা উৎসব চলেই আসে। আমরা রাতে আমাদের কেবিনের পেছনে চিংড়ি বার-বি-কিউ করলাম। অনেক দিন পর সত্যিকার কাঠের আগুনে রান্না, মজাটাই আলাদা।
পরদিন সকালে আমরা সবাই আমাদের প্রিয় ক্রিকেট টিমের জার্সি পরলাম। আমাদের ক্রিকেট টিম আমাদের গর্ব। টাইম ডিফারেন্স কারণে সারা রাত জেগে খেলা দেখি। তারপর সকালে অফিসে যাই। কোনো কষ্ট লাগে না যদি আমরা জিতি। হেরে গেলেও আমরা আমাদের টিমকে সমর্থন দিয়ে যাবই যাব।

ফেরার পথে আমরা গেলাম নিউ রিভার জর্জ ব্রিজে। এত সুন্দর সেতু যা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এই সুন্দর আসলে এর উদ্ভাবন ও স্থাপত্য কৌশলের জন্য। সেতুর পাশ দিয়ে সরু রোদ একদম নদীর কাছে নিয়ে যাবে। পাথুরে নদীতে তীব্র স্রোত। ওয়াটার রাফটিং জন্য পারফেক্ট। সন্ধ্যা হওয়াতে আমরা রওনা দিলাম আমাদের বাসার উদ্দেশে। ফেরার পথে আরেকবার উপভোগ করলাম সন্ধ্যার পাহাড় ও মেঘের এক অপূর্ব রূপ।
আমরা সব সময় বলি আমাদের দেশ সবুজের দেশ। এখানে বেড়াতে এসে বারবার আমাদের দেশের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। এখনো কি আমাদের দেশে এই সবুজ আছে?