মনে পড়ে অতীতের দিনগুলো

অভিবাসী জীবনে অনেক কিছুই মনে পড়ে, যা দেশে থাকাকালে মনের আড়ালেই ছিল। কোথায় পড়েছি জানি না, ‘বিয়ে করলে প্রেম মরে যায়’। এখানে লেখক হয়তো মানব মিলন বুঝিয়েছেন। কিন্তু বস্তু জগতেও তার মিল পাওয়া যায়।
যেমন লন্ডনে আসার পর আমাদের মাইজ্যা পুকুরের কথা শুধু মনে পড়ে। এ পুকুরকে যে এত ভালোবাসতাম তা অন্তরে মৃতের মতোই ছিল। ওখানে জাল ও বড়শি দিয়ে মাছ ধরা, এখন স্মৃতির মধুময় ভাবনা।
অনেক ছোট বয়সে শরতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে চিংড়ির দল ঘাটের কিনারে এসে কিলবিল করত আর আমরা ভাইর (ঝাজনি) দিয়ে চিংড়িগুলোকে ধরতাম।
বর্ষার দিনে পুকুর পানিতে টইটম্বুর করত। বন্ধুরা মিলে এই পানিতে লাফ ঝাঁপ খেলতাম। এ সময় কই মাছগুলো ডিম পাড়ত। কিছুদিনের মধ্যে কইয়ের পোনারা ঝাঁক বাঁধত। আমরা বড়শি দিয়ে কই ধরে মজা করে খেতাম।

একদিন বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে বের হলাম। হঠাৎ বৃষ্টির পর এই মাইজ্যা পুকুরে জাল মারা হলো। পুঁটি আর পুঁটি। এক খোপে প্রায় দুই কেজির মতো মাছ টেনে তুললেন বাবা।
মাঝে মাঝে এই পুকুরে অনেক কচুরিপানা হতো। বন্ধুরা মিলে পানিতে ডুব খেলা খেলতাম। লম্বা লম্বা কচুরিপানার কারণে লুকিয়ে থাকা বন্ধুকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ত। এতে খেলার আনন্দ আরও বেড়ে যেত।
শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি যখন কমে যেত, পানির নিচের কাদা পাড়ে ছুড়ে মেরে মেরে বাইন মাছ ধরতে কী যে আনন্দের ছিল! তখন শিং মাছ ধরা ছিল মহা অ্যাডভেঞ্চারের। সারা দিন পুকুরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত যেতাম। আর যখনই নরম কাদার নিচে পায়ে শিং মাছ অনুভব করতাম, অমনি সতর্ক হয়ে খুব সাবধানে ধরে আনতাম পানির ওপরে। এক দিন একটি শিং মাছের কাঁটার ব্যথা এখনো মনে পড়ে।
আমাদের এই পুকুর পাড় দেয়ালে ঘেরা। পড়ন্ত বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারার কথা কখনো ভোলার মতো নয়। আর এদিক সেদিক উঁকি মারা তো চলতই...।
মোহাম্মদ আবদুল মালেক: লন্ডন, যুক্তরাজ্য।