ভিভিড ফেস্টিভ্যালে আবারও জীবন্ত সিডনি

রাতের বেলায়ও মুখর সিডনির অপেরা হাউসের প্রাঙ্গণ
ছবি: লেখক

করোনার প্রকোপ কাটিয়ে দীর্ঘ দুই বছর পর আবার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে রঙের শহর (সিটি অব কালারস) সিডনি। সিডনির হারবার ব্রিজের পৃথিবীবিখ্যাত যে আতশবাজি দিয়ে বছরের শেষ এবং নতুন বছর শুরু করা হয়, সেখানে আলোর প্রদর্শনীতে সিডনিকে সিটি অব কালারস নামে উপস্থাপন করা হয়েছিল। বাস্তবেও সিডনি আসলেই রঙের শহর। এখানে ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি যেমন রং বদলায়, তেমনি ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন উৎসবের রঙে শহর বর্ণিল হয়ে ওঠে।

বারাঙ্গারুর রাস্তায় প্রদর্শিত হচ্ছে সৌরজগতের গ্রহগুলো
ছবি: লেখক

কিন্তু গত দুই বছর সিডনিতে যেন শীতনিদ্রায় (হাইবারনেশন) চলে গিয়েছিল করোনার প্রকোপে। অবশেষে এই বছর থেকে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এবং সিডনি বিভিন্ন উৎসবের রঙে নিজেকে আবার রাঙিয়ে নিচ্ছে। বছরব্যাপী বিভিন্ন উৎসব চলতেই থাকে। কিন্তু শীতকাল আসলে সিডনি শহর শীতের তীব্রতায় কেমন জানি ঝিমিয়ে পড়তে চায়। ঠিক তখনই আয়োজন করা হয় ‘ভিভিড সিডনি’ নামের আলোর উৎসবের।

ফেরি থেকে দেখা জীবন্ত সিডনি শহর এবং তার ছায়া
ছবি: লেখক

২০০৯ সাল থেকে এ উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। বর্ণিল আলোকচ্ছটা আর প্রাণচাঞ্চল্যকর মিউজিকে শীতের রাতের নির্জীব সিডনি শহর যেন প্রাণ ফিরে পায়। হাজারো দর্শনার্থীর ভিড়ে সিডনির পথঘাট মুখর হয়ে ওঠে। সারা শহরের খাবারের দোকানগুলোর সামনে ভিড় বাড়তে থাকে। আর মানুষ সারা শহর ঘুরে ঘুরে আলোকচ্ছটার ধাঁধা দেখতে থাকে। সিডনির বারাঙ্গারু, সেন্ট্রাল স্টেশন, সার্কুলার কিয়ে স্টেশন, দ্য রকস, ডারলিং হারবার, ডারলিং কোয়ার্টার, লুনা পার্ক, তরঙ্গা জু, ইউনিভার্সিটি অব সিডনি—প্রায় সব জায়গায়ই চলে আলোর এ খেলা।

একই ফ্রেমে জীবন্ত অপেরা হাউস এবং হারবার ব্রিজ
ছবি: লেখক

বিশাল ইমারতগুলোও যেন প্রাণ পায় আলোর স্পর্শে। একটু পরপর আবার সেই আলো রং বদলায়। এই রং বদলানো দেখে অনেক সময় শিশু–কিশোরেরা মনে করে এগুলো যেন আসলেই ইমারতের গায়ের রং। সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে আলোর এ খেলা। আর প্রতিবছরই এই খেলায় যোগ হয় নতুন নতুন মাত্রা। সারা শহর ঘুরলে মনে হবে আপনি যেন ছোটবেলায় দাদি–নানির কাছে শোনা রূপকথার কোনো গল্পের মায়ালোকে ঢুকে পড়েছেন।

সিডনির সার্কুলার কিয়ের কাস্টমস হাউসের গায়ের আলোকসজ্জার একটি মুহূর্ত
ছবি: লেখক

দুই বছর গৃহবন্দী থাকার পর মানুষ এবার দলবেঁধে এ ভিভিড ফেস্টিভ্যালের আলোর খেলা দেখতে বেরিয়ে পড়েছে। ভিভিডের সর্বশেষ আয়োজন ছিল ২০১৯ সালে। সে বছর রেকর্ডসংখ্যক ২ দশমিক ৪ মিলিয়ে দর্শনার্থী ভিভিডের এ আলোর খেলা দেখেছিল। আশা করা হচ্ছে, এ বছর সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে। আর ভিভিডের ফলে পর্যটন খাতে একটা বিশাল বড় অঙ্কের অর্থ যোগ হয়। ২০১৯ সালে ১৭২ মিলিয়ন ডলার যোগ হয়েছিল ভিভিডের আয় থেকে।

ভিভিড সিডনি ফেস্টিভ্যাল পৃথিবীব্যাপী বিখ্যাত এক উৎসবের নাম। ভিভিড সিডনি আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যাল এবং ইভেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএফইএ) কর্তৃক স্বীকৃত এক নাম এবং ২০১৯ সালে ১৫টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার অর্জন করে। এ ছাড়া ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে সেরা পর্যটন ইভেন্টের স্বীকৃত পায়। নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) সরকারের ‘ডেস্টিনেশন যেন এস ডব্লিউ’ সংস্থাটি এই ভিভিড সিডনি ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে থাকে।

ভিভিডের আলোয় জীবন্ত অপেরা হাউস
ছবি: লেখক

আপনি সিডনির যেকোনো প্রান্ত থেকেই এ উৎসবে জোগদান করতে পারেন। সার্কুলার কিয়ে স্টেশনে নামলেই একই সঙ্গে সিডনির বিখ্যাত অপেরা হাউস এবং হারবার ব্রিজকে আলোকিত দেখতে পারবেন। এ ছাড়া আশপাশের ইমারতগুলোতে চলে বিভিন্ন প্রদর্শনী। এরপর আপনি ফেরিতে উঠে বারাঙ্গারুতে চলে যেতে পারেন। সেখান থেকে হেটে ডারলিং হারবারের রঙিন পানির নাচ দেখতে পারেন। ফেরিতে উঠলে পানিতে দেখা মেলে জীবন্ত অপেরা হাউসের ছায়া। এটা একটা অভূতপূর্ব দৃশ্য। জাহাগুলোও সেজে উঠে বর্ণিল সাজে। তাতে প্রদর্শন করা হয় ‘আই লাভ সিডনি’ এবং ‘ভিভিড সিডনি’র সাজের আলোকসজ্জা। আর সেগুলোতে চলে বিভিন্ন পার্টি। বাচ্চাদের জন্যও থাকে অনেক ইন্টার–অ্যাকটিভ ইভেন্ট, যেখানে বাচ্চারা অংশগ্রহণ করে।

এ ছাড়া শহরের দিকে তাকালে মনে হয় যেন পুরো শহরের ইমারতগুলো জেগে আছে। আর পানিতে তার ছায়া পড়ে তৈরি করে গল্পের মায়ালোক। বারাঙ্গারু এবং ডারলিং হারবারেও রয়েছে অনেক রকমের সজ্জা। এবার বারাঙ্গারুর পায়ে হাঁটা রাস্তাটাকে সাজানো হয়েছে সৌরজগতের আদলে। হাঁটার পথের মাথার ওপর শোভা পাচ্ছে সৌরজগতের একেকটা গ্রহ। আর শেষ মাথায় রয়েছে আদিকালের মহাকাশ স্টেশনের প্রদর্শনীর আদলে তৈরি স্ক্রিনে প্রদর্শনী। বাচ্চাদের জন্য এটা খুবই উপভোগ। তাহলে আর দেরি কেন। আপনিও সপরিবার বেরিয়ে পড়তে পারেন আলোকের এ মায়ার খেলা দেখতে।