ভালো থেকো বন্ধুজন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে লেখক (১৯৯০)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে লেখক (১৯৯০)

আমার প্রথম জীবনের বন্ধুদের অনেকের সঙ্গেই অনেক দিন যোগাযোগ নাই। নজরুল, রেজাউল (চাচা), আক্তার (মামা), হারুন (লিটন), বাবুল, হেলাল (বিশু) এরা সবাই আমার ছোটবেলার বন্ধু। শৈশব কৈশোরের আনন্দ-বেদনার দিনগুলো কেটেছে এদের সঙ্গেই। এদের অনেকেরই ফেসবুক নাই তাই হয়তো যোগাযোগ নাই। এদের সবার সঙ্গেই অনেক খণ্ড খণ্ড স্মৃতি। মজার ব্যাপার হলো এদের কারও কারও নিক নেম আমি এখনো অনেক ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করি। কাউকে মনে রাখার এর চেয়ে বড় উপায় বুঝি আর নাই।

আমার হাই স্কুলে যোগ হয় আরেক জন বন্ধু। সালাম। সে এখন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম করা অধ্যাপক। মজার ব্যাপার হলো, সালামের সঙ্গে স্কুলে পড়াকালে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগিতা ছিল। কিন্তু সেটা কখনোই আমাদের বন্ধুত্বকে খাটো করেনি।

সপরিবারে লেখক
সপরিবারে লেখক

কলেজে আমাদের একটি গ্রুপ ছিল। সবাই বলতো দ্য গ্রেট এইট। এই আটজন মিলে এহেন ভালো কাজ নাই যা করিনি। এই আটজনের একজন একদিন কলেজে না আসলে বাকি সাতজনের মাথা খারাপ হয়ে যেত। এই অক্টাপড গ্রুপের বাকি সদস্যরা ছিল রফিক, তারা, বাবুল, রাজ্জাক, মোশারফ, শামীম ও হায়দার। একমাত্র রফিক আমার ফেসবুকে আছে, যার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ হয়। বাকিরা কে কোথায় আছে জানি না। তবে এই আটজনের উদ্যোগে আমাদের চান্দাইকোনা কলেজ থেকে সর্ব প্রথম আমরা শিক্ষা সফরে গিয়েছিলাম। সেই মজার দিনগুলোর কথা কখনোই ভোলা সম্ভব না। কলেজের আরেক বন্ধু রইসউদ্দিন। যে কিনা আমার চেয়ে ৬ ইঞ্চি লম্বা হওয়া সত্ত্বেও কলেজের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যেমন খুশি তেমন সাজে আমার বউ সেজেছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালের সময়টাই আসলে আসল বন্ধুত্বের সময়। একে অপরকে জানার ও বোঝার অনেক সময় থাকে। কলেজের অক্টাপড থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে আমি পাই ন্যানোপড। মানে হলো আমরা নয়জন। আসলে আমরা ছিলাম সব মিলিয়ে ২৭ জন। বোঝাই যাচ্ছে বাকি ১৮ জন মেয়ে। জসিম, ইউসুফ, আজাদ, স্বপন, আমজাদ, পাশা, হারুন, আহাদ ও আমি। ইউসুফ, হারুন, আমজাদ ও আহাদ ছাড়া বাকি সবাই আমার বন্ধু তালিকায় আছেন। আমাদের বাকি ১৮ জন বন্ধুর একজন আমার বউ পুতুল। লিসা, মালা, নার্গিস, পিয়া, কাকলি, কুসুম, হ্যাপি, ফারহানা, শারমিন, মুন্নি (১), নুপুর, তুহিন, অনুজা, জুঁই, ডলি, শিল্পী ও মুন্নি (২) আমাদের বাকি ১৭ জন। সেই মধুর দিনগুলি আমাদের শ্রেষ্ঠতম সময়গুলোর মধ্যে অন্যতম। কত খণ্ড খণ্ড স্মৃতি সুদীর্ঘ সাত বছরে। এরা সবাই এমনি ভালো বন্ধু যে কাউকেই বেস্ট হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। ক্লাসমেট বউ হলে মনে হয় বন্ধুত্বের পাল্লাটা একটু ভারীই থাকে। তার বন্ধুরা যেহেতু আমারও বন্ধু, তাই তাদের সবার সঙ্গে সম্পর্কটাও জোরদার থাকে।
বন্ধু লিস্টে আরও কিছু সমসাময়িক বন্ধু যোগ হয়েছে। পুতুলের স্কুল-কলেজের বন্ধুরা। বিশেষ করে ঘোড়াশাল ও পলাশ ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরিতে বেড়ে ওঠা যারা পুতুলের বন্ধু তারা সবাই আমারও বন্ধু। এখন এমন হয়েছে তার বন্ধুদের সঙ্গে তার চেয়ে আমারই যোগাযোগ বেশি হয়।
আমার প্রবাসী জীবনে চমৎকার অনেকজন বন্ধু যোগ হয়েছেন। তারা সবাই এখন আমার পারিবারিক বন্ধু। জাপানে আছেন কাকলি আপা-মণির ভাই, কাজী-সিলভি, আলম-নিশুসহ আরও অনেকে। আমেরিকাতে শিপন-শুক্তি, বাদল, জাহাঙ্গীর ভাইসহ আরও অনেকে। কয়েকজন বন্ধু আছেন অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপে। সর্বশেষ বন্ধুর তালিকায় যারা যোগ হয়েছেন, যাদের ছাড়া আমি এক মুহূর্তও ভাবতে পারি না, চলতে পারি না এমনকি আমার বউ কোনো কিছু রান্না করলে যাদের ছাড়া খেতে কষ্ট হয়, তারা সবাই সাস্কাতুনের। নাম বলে শেষ করা যাবে না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন বন্ধুকে পেয়েছি সাস্কাতুনে। শাহিনা আর ঊর্মি, যাদের সঙ্গে একদিন দেখা না হলে মনে হয় দিনটাই অপূর্ণ রয়ে গেল।
সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমার সব সময়ের সবচেয়ে ভালো বন্ধু আমার বউ, আমার মেয়ে ও আমার ছেলে।
বন্ধু বন্ধুই। বন্ধু সেই যাকে আমি বকতে পারি, হাসাতে পারি, কাঁদাতে পারি যার কাছে অন্যায় আবদার করতে পারি। বন্ধু সেই, যে কিনা আমার মুখের দিকে তাকিয়েই আমার মন পড়তে পারে। বন্ধু সেই, যে সবকিছুর ঊর্ধ্বে সবার আগে সানন্দে গ্রহণ করে, আমি কি, আমি কে। বন্ধু সেই যাকে আমি মাঝরাতে ফোন করে বলতে পারি, জানিস আমার মনটা ভালো নেই। বন্ধু সেই, যে আমার অপমানে অপমানিত হয়, আমার গৌরবে গৌরবান্বিত হয়। বন্ধু সেই, আমি যখন যত দূরে থাকি, সে আমার তত বেশি কাছে থাকে। আমার সব বন্ধুরা ভালো থাকুক। আমার জীবনকে আরও অনেক বেশি সুন্দর করার জন্য আমার সব বন্ধুদের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের সবাইকে জানাই আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে অপরিসীম ভালোবাসা। বন্ধুরা ভালো থেকো। যে যেখানেই আছ, সুন্দরের উষ্ণতায় অনেক ভালো থেকো।