বাংলা ভাষার বিকাশ ও তার বিশ্বায়ন

প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বাঙালি জাতির উৎপত্তির মতো তার ভাষার বিকাশ লাভও জটিল আর মিশ্রিত। এই দুয়ের আদিম পরিচয় শনাক্ত করতে তাই সোশ্যাল এনথ্রোপোলজিস্ট আর ভাষাবিদেরা বিচার-বিশ্লেষণের জন্য পেছনে ফিরে গিয়েছেন খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার বছর অবধি। যখন ভারতবর্ষজুড়ে বৈদিক আর্যদের আগমন ও সাংস্কৃতিক প্রভাব সম্পূর্ণ হয়ে ওঠেনি। যখন তার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বসবাস রয়েছে দ্রাবিড়, তিব্বতীয়-বার্মণ ও অস্ট্রোএশিয়াটিক জনগোষ্ঠীর।
যাই হোক, বাংলা বা বেঙ্গল শব্দের অরিজিন সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও পণ্ডিতদের অভিমত ১০০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে ভারতের পূর্বাঞ্চলজুড়ে ‘বাং’ নামের যে দ্রাবিড় ভাষাভাষী ট্রাইবদের বসবাস ছিল ‘বাংলা’ শব্দের উৎপত্তি তার থেকেই হয়েছে। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বাংলা ভাষার আদিমতম নিদর্শন হিসেবে সহজিয়া বৌদ্ধ সাধকদের যোগসাধনার গুহ্য বিষয় নিয়ে রচিত চর্যাগীতিকাগুলোকে চিহ্নিত করেছেন। সুরসহযোগে এই গীতিকাগুলো গীত হতো সাধকদের সাধন-ভজনের জন্য। এর বয়স আনুমানিক ১০০০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে।
সাহিত্যমূল্য সমন্বিত চর্যাগীতির এই অসাধারণ রচনাগুলো বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন মাত্র। যখন সবেমাত্র অন্যান্য ভাষা থেকে এক স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নিয়ে সে জন্মলাভ করতে শুরু করেছে। পরবর্তী কয়েক শতাব্দী ধরে আধুনিক বাংলা ভাষা ধীরে ধীরে বহু ভাষার দ্বারস্থ হতে হতেই সম্পূর্ণতা পেয়েছে। এর পরিপূর্ণ পরিশীলিত রূপায়ণ ঘটেছে ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে বেঙ্গল রেনেসাঁসের মধ্য দিয়ে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয় কুমার দত্ত, প্যারীচাঁদ মিত্র, মাইকেল মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং সবশেষে কবি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ইসলামের হাত ধরে।

প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত


বাংলা শব্দ বিশ্লেষণ করে ভাষাবিদেরা প্রমাণ করেছেন, ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলীয় আরও অনেক ভাষার মতো (যেমন আসামিজ, ওড়িয়া, ভোজপুরি, মৈথালি, মাঘী প্রভৃতি) মাগধী প্রাকৃতই বাংলা ভাষার জননী। মাগধী প্রাকৃতকে কেউ কেউ অর্ধমাগধী বলেও আখ্যায়িত করেছেন। প্রাচীন ভারতে এই ভাষার জন্মলাভ সংস্কৃত ও পালির ব্যবহার ক্ষয়িষ্ণু হওয়ার মূহূর্ত থেকে। মাগধী প্রাকৃত সংস্কৃত ও পালি ভাষার অপভ্রংশ রূপের সংমিশ্রণে তৈরি। প্রচলিত বিশ্বাস, বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক বুদ্ধ গৌতম এই ভাষাতেই কথা বলতেন। বৌদ্ধ সম্রাট মহামতি অশোক অর্ধ মাগধীকে সরকারি রাজভাষার মর্যাদা দান করায় এর প্রসার ক্রমে পূর্বাঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাচীন বাংলার আমজনতা অবশ্য সেকালে মাগধী প্রাকৃতের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের জন্য নিজস্বতম ভাষা ছিল। যার ওপর প্রভাব ফেলেছিল অনার্য দ্রাবিড় ভাষাভাষী গোষ্ঠীসহ, আদি অস্ট্রোএশিয়াটিক জনগোষ্ঠীর ভাষাগুলো। বাংলা ভাষার জননী তাই অর্ধ মাগধী হলেও বাঙালির মাতৃভাষা মিশ্রিত ভাষা হওয়ার কারণে অন্যান্য অনেক ভাষার কাছেই ঐতিহাসিকভাবে ঋণী। মধ্যযুগের শাক্ত, বৈষ্ণব ও রোমান্টিক সাহিত্যের বাংলা ভাষা সম্বন্ধেও একই কথা সত্য। তবে আধুনিক যুগে মানবতন্ত্রের জীবনমুখী সাহিত্য সৃষ্টির ভাষা হিসেবে বাঙালির মাতৃভাষার পর্যাপ্ত ঋণ ক্ল্যাসিক সংস্কৃত শব্দের কাছে। কারণ, ঊনবিংশ শতকের বাংলার নব জাগরণের ফলে বিভিন্ন সুসাহিত্যিক ও চিন্তাবিদদের অবদানে বাংলা ভাষা যে রাজকীয় রূপ পরিগ্রহ করেছিল, তার প্রধান বাহন ছিল ক্ল্যাসিক সংস্কৃত শব্দ।
বাংলা লৈখিক ভাষায়, বিশেষত সমৃদ্ধ সাহিত্য সৃষ্টির ভাষায় তৎসম এবং তদ্ভব শব্দের প্রাচুর্য রয়েছে সত্যি। তবে অন্যান্য বৈদেশিক ভাষার উপস্থিতিও অগ্রাহ্য করার মতো নয়। এর কারণ ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলা মুলুকসহ ভারতবর্ষ বারবার শাসিত হয়েছে বিভিন্ন

প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

দেশের ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষী সুলতান, সম্রাটদের হাতে। বাংলা শব্দে তাই আরবি, পারসিয়ান, তুর্কি শব্দের যেমন অনুপ্রবেশ হয়েছে, তেমনি ষোড়শ শতক থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পর্তুগিজ, ডাচ, ফ্রেঞ্চ, ইংরেজের রাজ্যপাট শেষ না হওয়া অবধি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সন্নিবেশিত হয়েছে অনেক পশ্চিমা শব্দাব​লিও। বাংলা ভাষায় বিশ্বায়নের প্রশ্ন যদি তুলতে হয় তাহলে তার ক্রমবিকাশের ধারা বিশ্লেষণ করলে এমন কথা বলা যায়, বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণে প্রাচীনকাল থেকেই সীমিত পরিসরে ঘটে গিয়েছে তার বিশ্বায়ন। বর্তমানেও তার বিকাশ ও বিশ্বায়ন দুটোই ঘটে চলেছে দ্রুতগতিতে। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, একটি পরিপূর্ণ বিকশিত সমৃদ্ধিশালী ভাষার ক্ষেত্রে বিকাশ ও বিশ্বায়নের সুযোগ থাকে কি না? এর উত্তর: সভ্যতার ক্রমবিকাশ যেমন একটি চলমান প্রক্রিয়া, তেমনি সভ্যতা সংস্কৃতির ধারক হিসেবে ভাষার ক্রমবিকাশেরও থেমে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এখানে বিশ্বায়ন মানে বাঙালির নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষার চর্চা। অন্য ভাষাভাষীর ওপর তার প্রভাব বিস্তার ও একই সঙ্গে অন্য ভাষার শব্দপুঞ্জকেও ধীরে ধীরে নিজের মৌখিক কিংবা লিখিত মাতৃভাষায় আত্মস্থ করে নেওয়া।
ভাষার গ্লোবালাইজেশন, ভাষার ফিউশন প্রাচীনকালেও বহুবার হয়েছে অপ্রতিরোধ্যভাবে। এভাবেই পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছে নতুন নতুন উচ্চারণে, নতুন নতুন অপভ্রংশে নতুন নতুন মাতৃভাষা। প্রাচীনকালে ভাষা বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া চলেছে এক দেশের অন্য দেশকে বিজিত করার মাধ্যমে। ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে কিংবা ধর্ম প্রচারের প্রসারতায়। মধ্য যুগের শেষ পাদে, আধুনিক যুগের আরম্ভে সেটা হয়েছিল কলোনাইজেশনের ভেতর দিয়ে। বর্তমানে আরও অনেক ভাষার মতো বাংলা ভাষার সৃজন-প্রক্রিয়াও প্রবহমান রয়ে গেছে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে। আন্তর্জাতিক বিশ্বের লাখ লাখ বাঙালি জনতা ইন্টারনেটে এখন প্রতিদিন পাঠ করছেন বাংলা ভাষায় সংবাদপত্র। টেলিভিশন চ্যানেলে দেখছেন মাতৃভাষায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। দেশের বাইরে নিজেরা বাংলা ভাষার চর্চা করছেন প্রতিনিয়ত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সংযুক্ত করছেন তাদের শিকড় সংস্কৃতির সঙ্গে। প্রবাস জীবনের নানা উৎসব অনুষ্ঠানে বাঙালির ঐতিহ্য, বাঙালির কৃষ্টি যেমন চর্চিত হচ্ছে, তেমনি তার প্রভাব সীমিত আকারে হলেও প্রতিফলিত হচ্ছে বিভিন্ন দেশের নেটিভ জনগণের জীবন-মননেও।
বাংলা ভাষা বিশ্বে আজ একটি সুপরিচিত ভাষা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের ৬৯০৯টি ভাষার মধ্যে এর অবস্থান পঞ্চম স্থানে। কেননা, জনসংখ্যা রিপোর্ট অনুযায়ী সারা বিশ্বে বাঙালি জনসংখ্যা এখন প্রায় ২৭ কোটির কাছাকাছি। বাংলা বাংলাদেশের প্রধানতম ভাষা। এশিয়া মহাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ভাষা। পশ্চিম বাংলা, আসাম, ত্রিপুরা রাজ্যের বেশির ভাগই বাঙালি। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুটি দেশের জাতীয় সংগীত, ভারতের জাতীয় স্তোত্রও বাঙালি কবির বাংলা ভাষায় রচিত। কোটি কোটি মানুষের কণ্ঠে আবেগে ভালোবাসায় যা উচ্চারিত হয় প্রতিদিন।
বিশ্বায়নের কারণে অন্য সব সভ্যজাতির মাতৃভাষার মতো বাঙালির মাতৃভাষাতেও বিভিন্ন ভাষার সংযোজন ঘটে চলেছে নিরন্তর। কারণ যে জাতি বহির্বিশ্বে যত বেশি কর্মতৎপর, যত বেশি অন্যান্য জাতির সঙ্গে তার সংযোগ সাধন ও ভাবের আদান-প্রদান, তার মাতৃভাষার সঙ্গে, কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গে অন্যের ভাষার, অন্যের সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটে যাওয়া তত বেশি স্বাভাবিক। কিন্তু নিজের মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার আবেগ তাতে কখনো ব্যাহত হয়নি বাঙালির। তার চেতনায় জননীর পরেই জন্মভূমি ও মাতৃভাষার অবস্থান। ফিজিক্যাল ফর্ম যেমন কোনো বস্তু কিংবা ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট অস্তিত্বকে প্রতীয়মান করে, তেমনি ভাষার মাধ্যমেই মানুষ নির্দিষ্ট জাতি আর তার সংস্কৃতির ধারক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। যতকাল একটি জাতির মাতৃভাষা অস্তিত্বমান থাকে, ততকাল বেঁচে থাকে তার নিজস্ব সংস্কৃতি। যতকাল সেই সংস্কৃতিকে জাতি ধারণ করে থাকে, মাতৃসমা মাতৃভূমির অস্তিত্বও মানুষ টিকিয়ে রাখে ততকাল। মাতৃভাষা তাই কেবল মনোভাব প্রকাশের মাধ্যম নয়। সভ্য পৃথিবীর বুকে জাতির অস্তিত্বমান থাকারও একটি প্রধানতম শর্ত তাই।
সেই কারণেই ভারত বিভাজনের পরে পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ও পরবর্তী সময়ে খাজা নাজিমউদ্দীন উর্দুকেই যখন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সরকারি ভাষা করার ঘোষণা দেন, প্রতিবাদ করেছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সচেতন সুধীসমাজ। এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল গণসমাবেশ আর আন্দোলনের কঠোর কঠিন সূচনাপর্ব। অধ্যাপক নূরুল হক ভুঁইয়া, পার্লামেন্টের সদস্য শামসুল হকসহ আরও অনেকে মেজরিটি বাঙালির মাতৃভাষার বিরুদ্ধে এই অবিবেচক অবিচারকে মেনে নিতে পারেননি। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার বিপক্ষে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। পার্লামেন্টে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সদৃঢ় প্রস্তাব তুলেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, মাতৃভাষায় কথা বলার, সরকারিভাবে ব্যবহার করার অধিকার বাঙালির জন্মগত। তাঁর প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছিলেন তৎকালীন পূর্ব বাংলার বিশিষ্ট আইনপ্রণেতা প্রেমহরি বর্মণ, ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত ও শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে এই আন্দোলনেরই ট্র্যাজিক প্রকাশ ঘটে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, জব্বারদের বুকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে। পূর্ব বাংলার বাইরে মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য কঠিন কঠোর সংগ্রাম করেছেন আসাম প্রদেশের অগণিত বাঙালি জনতাও। যার বিয়োগান্তক পরিণতি দেখি ১৯৬১ সালের ১৯ মে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে পুলিশের গুলিতে ১১ বাঙালির আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে। তাঁদের এই আত্ম বলিদান বিফলে যায়নি। ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের মূল্যায়ন হয়েছে ভাষা শহীদ দিবসকে জাতিসংঘের ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দানের ভেতর দিয়ে।

প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত


ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে মধ্যযুগের জীবনপদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে বাঙালি জাতি জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন জীবনের উজ্জীবনে লালিত হয়েছিল বারবার। আপন পরিচয়ের প্রতি, আপন কৃষ্টি ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য, মাতৃভাষার লালন ও সমৃদ্ধি সাধনের স্বপ্নে এক অপ্রতিরোধ্য ভালোবাসার আকর্ষণ জন্মেছিল তার চেতনায়। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে সেই স্বপ্নই পরিণতি পেল, সুল​লিত বাংলাভাষায় জাতিসংঘের জনসমুদ্রে দুই বাঙালি প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা দানে। এঁদের একজন বাঙালির জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। অপরজন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। লিখিত কিংবা মৌখিক ভাষা যেহেতু মানব মনের বিচিত্র ভাব আদান-প্রদান ও অস্তিত্ব বিকাশের সুনির্দিষ্ট মাধ্যম, সভ্য জগতে তাই শ্রদ্ধাসহকারে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে মাতৃভাষা মূল্যায়নের সফলতর প্রচেষ্টা। শ্রদ্ধাবোধ ও বিশ্বমানবের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা স্থাপনের দাবিতে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিটির আইন অনুযায়ী যে ল্যাঙ্গুয়েজ পলিসি প্রচলিত রয়েছে, সেখানে মানুষের মাতৃভাষা ব্যবহারের অধিকার জন্মগত অধিকার হিসেবেই স্বীকৃতিলাভ করেছে তাই। বাংলা ভাষা এই হাজার হাজার মাতৃভাষার সমারোহে বিশ্বের দরবারে আজ অলংকৃত করে রেখেছে একটি গৌরবময় আসন। বাঙালির বাংলা ভাষা বিকশিত হতে হতে, বিশ্বায়িত হতে হতে বাঙালির ভালোবাসায়, বাঙালির চৈতন্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে মহাসমারোহে। ছড়িয়ে পড়েছে গোটা জগতের কোণে কোণে, বাঙলির অস্তিত্ব বিকাশের মহানতম প্রতিভূ হয়ে।

দীপিকা ঘোষ
যুক্তরাষ্ট্র