বল্টুর ছক

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

মামা সুখবর আছে।
তা আমি তোমার ফোন পেয়েই বুঝতে পেরেছি। যা বলার, সংক্ষেপে বলো।
না মানে, ওই সাংবাদিকতার ওপর বেশ কয়েকটা পুরস্কার পেয়েছি।
ভালো। পাঁচ মাসে অর্জন তো খারাপ না। তবে আমি আশাবাদী, আগামী দুই–এক বছরের মধ্যে আরও অনেক টনকে টন পুরস্কার পাবে। তবে ভাগনে, ৩৫ বছর সাংবাদিকতা করলাম, কিন্তু ভাগ্যে একটা পুরস্কারও জোটেনি।
মামা লাইনে হাঁটতে হয়, সঠিক সময় সঠিক জায়গামতো পালিশ দিতে হয়।
তা, আর কী খবর বলো?
না মানে, বলছিলাম ভোটে দাঁড়াব।
ভোটে দাঁড়াইবা ভালো কথা। কিন্তু তোমাকে ভোট দিব কে! যতদূর জানি, তোমার না আছে এখানে বড় গোষ্ঠী, না আছে টাকা।
আরে না মামা, এখন তো ভোট করে সিন্ডিকেট। আমি একটা সিন্ডিকেট বানিয়েছি।
ভালো। তো কোনো পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
সভাপতি।
আমার তো মনে হয়, তুমি সাধারণ সম্পাদক পদে দাঁড়িয়ে কুদ্দুছের বাবাকে সভাপতি দিলে ভালো হয়। কারণ, উনি তো দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিটির জন্য কাজ করছেন।
মামা, সবাইকে দিয়ে সব কাজ হয় না।
তো কত সদস্যের কমিটি।
৩১ সদস্যের।
এর মধ্যে নারী সদস্য কয়জন?
একজনও না।
তাহলে কেমন হবে। নারীবাদীরা ধরবে না?

তো এক কাজ করি মামা, আমাদের পুবের বাড়ির মিঠামুখী খালা আছে না, ওনাকে দপ্তর সম্পাদক পদটা দিয়ে দিই। পানের বাটা নিয়ে অফিসে বসবেন আর বাবা জর্দা দিয়ে পানের খিলি বানিয়ে মুখে দিয়ে আমজনতার সঙ্গে টেলিফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলবেন।
আর মফিজ চাচাকে কোথায় দেবে? উনি তো মুরব্বি মানুষ।
ওনাকে আমাদের উপদেষ্টা বানাব। ওনার সঙ্গে আলাপ করব।
আর ওই কেবলা দা’কে কোথায় দিলে, যিনি সব কমিটিতেই থাকেন।
নতুন একটা পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, ওনাকে দিব ‘নিরাপদ টাকা সংরক্ষণ সম্পাদক’ পদে।
মানে শিয়ালের কাছে মুরগি জিম্মা।
তা ভাগ্নে বড় পদে যে নির্বাচন করছ, নির্বাচিত হওয়ার পর কিন্তু তোমাকে একটা বড় অসুখে ধরব।
সেটা কী বলেন! তো সেই রোগের নাম কী, মামা?
অসুখের নাম হচ্ছে, ‘পদ ছাড়ুম না’।
সেটা কী? একটু বুঝিয়ে বলবেন।

সেটা একেবারে জলবৎ তরলং। নির্বাচিত হওয়ার পর বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও নির্বাচন নেই, সভা নেই। পদ আঁকড়ে ধরে রাখতে এহেন কোনো কাজ নেই, পদলোভীরা করে না। যাতে সারা জীবন এই পদে থাকতে পারে, সেটাই হয়ে যায় তার একমাত্র কাজ। তাদের টানাহিঁচড়া করে বেজ্জত করে না নামানো পর্যন্ত তারা পদ আঁকড়ে থাকতে চায়। তো, তোমার এ অবস্থা আমি দেখতে চাই না।
না মামা, এমনটা হবে না।

ভোটের আগে অবশ্য এমনটাই বলতে হয়।
মামা, ভোট কীভাবে হবে, কে জিতবে, কে হারবে তার একটা ছক এঁকেছি।
এমন সময় টেলিফোনের লাইনটা কেটে গেল। মনে মনে ভাবলাম, ভাগনে ছক কেটে এগোচ্ছে। সেই ছকে ছক মিলিয়ে ছকের বারোটা বাজিয়ে ছক্কা মেরে ভাগনে আমার কতদূর এগিয়ে যাবে, সেটা দেখার প্রতীক্ষায় রইলাম।