প্রাণের টানে

সিডনির বাঙালি মহলে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি: পূজা ও সংস্কৃতি’ এক পরিচিত নাম। ২০ বছর আগে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। বিদেশের মাটিতে দেশের আমেজ আর নিজের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিজের ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি পৌঁছে দেওয়ার এক অনন্য প্রয়াস নিয়ে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। তখন এই সংগঠনে বাংলাদেশি ছিল হাতেগোনা কয়েকজন।

প্রাণের টানে নিজের ভাষাভাষী মানুষের সবার একত্রে সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই সংগঠনকে নিয়ে যায় অনেক দুর। সোসাইটি শুধু পূজার আয়োজনের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি। রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জন্মজয়ন্তী, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, অ্যাশফিল্ড একুশে বইমেলা, পয়লা বৈশাখ সবকিছুতেই তাদের সরব পদচারণা। এ ছাড়া প্রথম থেকেই ‘নিবেদন’ নামে মুখপত্র প্রকাশ করে আসছে। ১৯৯৬ সালে এই সংগঠন যাত্রা শুরু করে এখনো পর্যন্ত সেই ধারা অক্ষুণ্ন রেখেছে।
সোসাইটির আরেকটি বড় উদ্যোগ হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা শেখার জন্য বাংলা ভাষা শিক্ষা স্কুল চালু। বর্তমানে দুই ব্যাচে বাংলা ভাষা, বাংলা গান, নাচ তবলা শেখানো হচ্ছে। পাশাপাশি সোসাইটি অনেক সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া ১৯৯৮ সালের বন্যা দুর্গতদের সাহায্যের জন্য তহবিল সংগ্রহ, ২০০৩ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালি ভিকটিমদের জন্য ব্লাড ডোনেশান, ২০০৫ সালে সুনামি আক্রান্তদের জন্য তহবিল সংগ্রহ, বাংলাদেশি ক্যানসার আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ ও সিডনির বৌদ্ধ অ্যাসোসিয়েশনের জন্য তহবিল সংগ্রহ ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে সোসাইটি তাদের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখে।

গত ১৮ মার্চ শনিবার হয়ে গেল এই সংগঠনের ২০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান। বরাবরের মতো অনেক বর্ণিল আর আনন্দময় ছিল আয়োজনটি। অনুষ্ঠানের প্রথমে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রথীন্দ্রনাথ ঢালি ও সভাপতি ড. স্বপন পাল মঞ্চে আসেন। তারা দুজন একে একে ডেকে নেন আমন্ত্রিত অতিথিদের। এরপর ছিল আমন্ত্রিত অতিথিদের বক্তব্য ও সান্ধ্যকালীন চা-চক্র।
বক্তৃতার পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই দেশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা কিছু কিশোর কিশোরীর সমবেত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। তারা পরিবেশন করে রবীন্দ্রসংগীত ও নৃত্য। তখন কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমরা হারিয়ে গিয়েছিলাম বাংলা মায়ের কোলে। ‘মেঘ বলেছে যাব যাব, রাত বলেছে যাই’ গানের সঙ্গে নাচ বর্ষণমুখর সন্ধ্যাকে দিয়েছিল এক অনন্য মাত্রা। এরপর একের পর এক গান, নাচ আর রিচির উপস্থাপনায় সত্যিই মনোমুগ্ধকর ছিল আয়োজনটি।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল অভিভাবকদের গানের অনুষ্ঠান ও কবিতা আবৃত্তি আর সেই সঙ্গে ছিল চমৎকার নাটক ‘স্বামী স্ত্রী সংবাদ’। আরও ছিল কৌতুক যা অনুষ্ঠানের আনন্দের মাত্রাকে দ্বিগুণ করে দেয়। বরাবরের মতো নির্মল চক্রবর্তী আর নন্দিতা কণ্ডুর সাবলীল উপস্থাপনা ছিল অনুষ্ঠানের প্রাণ। তৃতীয় ও শেষ পর্বে ছিল আমন্ত্রিত অতিথিদের গানের পরিবেশনা। সেই সঙ্গে ছিল রাতের খাবারের আয়োজন। অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ধ্রুব ভৌমিক।

প্রাণের টানে বাঙালির এই সম্মেলন কিছু সময়ের জন্য হলেও সবাইকে একই সুতায় বেঁধেছে। আর বাঁধবেই বা না কেন। এ যে আমাদের বাঙালির টান, প্রাণের টান। সেই টান অক্ষুণ্ন রাখুক বাংলাদেশ সোসাইটি সেই কামনা করি।