(পূর্ব প্রকাশের পর)
গলায় দিয়ে সোনার চেইন, বাঁধে একখান পেডি/ ঢোলা সাহেবি সুট-প্যান্ট পরে হয়ে যায় রেড৷
লেছরায়ে লেছরায়ে হাঁটে সাহেব দাঁড়ায় কোমর ভেঙে/ যথেষ্ট তার মিল পাওয়া যায় দাঁড়কাকের সঙ্গে ৷
বিমানের ভেতর উঠে সাহেব, ভাব ছড়িয়ে বসে/ ভাবের মাত্রা বেড়ে যায়, যখন বিমানবালা আসে
মুড নিয়ে ঢোলা-সাহেব এটা-ওটা চায়/ বিদুষী বিমানবালাকে যেন কাজের বুয়া পায়।
দেশে পৌঁছে চেকিং শেষে বন্দর ত্যাগ করে/ বাইরে বাপ-ভাই দাঁড়িয়ে থাকে লোহার শিক ধরে৷
ছুটে গিয়ে ভাইকে ধরে করে আলিঙ্গন/ বাবার বুকে ঢলে পড়ে করে ক্রন্দন৷
মায়ের কথা মনে পড়ে, বোন কেমন আছে/ জলদি করে চলো বাড়ি, ট্যাক্সি কিংবা বাসে৷
বহুদিন পরে খোকাবাবু দম টেনে লয়/ এক-আধটু ইংরেজ মেখে শুদ্ধ কথা কয়৷
দেশের পানে চেয়ে দেখে অনেক পরিবর্তন/ এরই ফাঁকে জীবন থেকে পাঁচটি বছর কর্তন
ঘর দেখে, বাড়ি দেখে, দেখে নতুন স্বপ্ন/ পরির কথা মনে করে আনমনে হয় মগ্ন
বাড়ি গেলে ছুটে আসে প্রতীক্ষারত মা/ বুকের মানিক জড়িয়ে ধরে একটু শান্তি পায়।
কত কথা মনে পড়ে, পুরোনো যত স্মৃতি/ পাড়াময় ঘুরতে বের হয় প্রাণে ছন্দগীতি৷
পরিকে শেষে দেখতে যায় পরে নতুন জামা/ আঙিনায় গেলে ছোট্ট খোকা ডাকে এসে মামা
চমকে উঠে চক্ষু তুলে দেখে সামনে পরি/ সবুজ একখান শাড়ি পরা লাল পাইড়ে জরি৷
কেমন আছ? বলার মতো সাহস পায় না আর/ ভাবে, যাকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল সে এখন কার?
এক মাস পরে বিয়ে করে টুকটুকে বউ দেখে/ ঋণের ভারে দুই মাস পরে প্রবাসে যায় রেখে৷
একা থাকে সাধের বউ ঘরের এক কোণে/ বুকটা সতীর ভেঙে পড়ে পতি বিহনে৷
মন কাঁদে, প্রাণ কাঁদে, কাঁদে তার হিয়া/ প্রণয়কাতর করে বন্ধু গেল যে ছাড়িয়া৷
প্রশ্ন জাগে মনের মাঝে শোধাতে না পারে/ বুকের ওপর পাথর রুষ্ট দেখাবে যে কারে৷
এমন সোনার যৌবন তার অঙ্গার হয়ে যায়/ মজবুত লোহার পিঞ্জরেও বেঁধে রাখা দায়৷
বদ্ধ ছিল নদীর জোয়ার মরা খালের মতো/ তটের বাঁধ ধসেনি কভু হেনেছে আঘাত শত৷
পতির ছোঁয়ার উত্তাল সাগর, খাল-নদী সব ভাসে/ আমানতের জিনিসগুলো ক্যামনে রাখবে ক্যাশে৷
পতিহীনা সতী নারীর মন বসে না ঘরে/ জানালা খুলে দেখলে নজরে পরপুরুষ পড়ে ৷
এমনি করে সোনার যৌবন কয়দিন রাখবে বেঁধে/ দিবানিশি আঁচল ভিজে নীরবে কেঁদে কেঁদে
ছটফট করে অন্তরাত্মা রইতে না-পারে ঘর? শেষে আরেকজন হয় আপন, আর আপন হয় পর৷
দিশেহারা হয়ে মা, লেখে জলদি করে আয় বাছা/ টাকা-পয়সার আর দরকার নাই৷
সবার বেলায় হয় না এমন কেউবা ঘরে থাকে/ শত ঝড়-ঝঞ্ঝা হলেও কেউবা ধৈর্য রাখে।
পতিবর ছেড়ে ঘর থাকে পরবাসে/ মনটা করে উড়ুউড়ু পাগলা বাতাসে ৷
মনে চলে উতল হাওয়া রঙিন মুখটা ভিড়ে/ রাত বিরাতে আনমনে সে কাঁথা-বালিশ ছিঁড়ে
বউকে দেশে ফেলে বিদেশ গিয়ে কাতরায়/ দিনে-রাতে-কর্মে সে শুধু বাঁপাশে হাতরায়৷
মনের পাখি না পেয়ে সে হা-হুতাশ করে/ দুনিয়াদারি গুঁড়িয়ে যায় সর্বনাশা ঝড়ে
আকাশ ভাঙে, পাহাড় ভাঙে, ফাটে বুকের জমিন/ প্রিয়াহীন দিনের পর দিন জীবনটা হয় বিলীন
ফোন করে সে যখন-তখন দিনে রাতে মিলে/ মাসের বেতন অনেকটা যায় টেলিফোনের বিলে।
এমনি করে জীবনটা তার জটিল হয়ে ওঠে/ বছর না পেরোতে আবার ঘরের পানে ছুটে
ছুটি পেলে ভাগ্যবান, পয়সা থাকলে ভালো/ বউয়ের টানে দেশে ফেরায় স্বজনদের মুখ কালো৷
পাঁচ বছরে এল একবার অনেক ডাকার পরে/ বিয়ের বছর যেতে না যেতে এসে পড়ল ঘরে৷
প্রিয়জনের তাচ্ছিল্য ভাব বিষের মতো বিঁধে/ ক্রমান্বয়ে সংসারে এসে অশান্তির দানা বাঁধে। (শেষ)