প্রবাসে স্বদেশ ভাবনা

আবুল বাশার
আবুল বাশার

ঘরকুনো বাঙালি আজ ঘরের বাইরে। অচলায়তন ভেঙে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। জীবন ও জীবিকার তাগিদে ঘর ছেড়ে পরবাসে পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ সৌদি আরবপ্রবাসী। প্রায় বিশ লাখ কর্মজীবী বাংলাদেশি সৌদি আরবে। দেশটির কোনো কোনো স্থান মনে হয় যেন এক টুকরো বাংলাদেশ।
প্রবাসী বাংলাদেশি অনেকের আছে শিল্প-সাহিত্যের প্রতি ঝোক। এদেরই একজন আবুল বাশার বুলবুল। প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি সৌদি আরবপ্রবাসী। জেদ্দায় একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত বুলবুলের রয়েছে সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ। তিনি নিজেও কথাসাহিত্যিক। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে জেদ্দা ও রিয়াদ থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সাময়িকী ও স্মরণিকায় লিখেছেন গল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছড়া-কবিতা। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচ। এগুলো উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ ও ছড়া-কবিতা। এর মধ্যে একটি গত একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থটি কিশোর অ্যাডভেঞ্চার, নাম ‘ধলপহরে অভিযান’। তাঁর আরও কিছু পান্ডুলিপি জমা হয়ে আছে প্রকাশের অপেক্ষায়।

বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি, জেদ্দার অনুষ্ঠানে আবুল বাশার
বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি, জেদ্দার অনুষ্ঠানে আবুল বাশার


সৌদি আরবে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে আবুল বাশার পরিচিত কথাসাহিত্যিক ও সমাজকর্মী হিসেবে। তপ্ত মরুতে তিনি সজীব মরুদ্যানের মতো। সম্পাদনা করেন একটি সাময়িকী ‘রোদ্দুর’। সাহিত্যসংস্কৃতি ও সমাজভাবনা লালনের প্রত্যয়ে তাঁর একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার ফসল ‘রোদ্দুর’ সাহিত্য সাময়িকী। ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবসসমূহে প্রকাশিত হচ্ছে ‘রোদ্দুর’। এতে মূলতঃ সৌদি আরব প্রবাসী সাহিত্যিকসহ দেশের লেখকদের প্রকাশিত হয়।
রোদ্দুরের ভূমিকা তুলে ধরতে গিয়ে আবুল বাশার বলেন, প্রবাসী বিপুল সংখ্যক মানুষ দেশ থেকে অনেক দূরে। তবে তারা দীর্ঘ সময় সমাজ-সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। এখানে ইউরোপ-আমেরিকার মতো নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অথচ এখানে কর্মরত প্রবাসীরা ও তাদের সন্তানেরা না পারছে ঠিক মতো স্বদেশ-সংস্কৃতির চর্চা করতে, না পারছে এদেশের সংস্কৃতি আঁকরে ধরতে। ফলে এখানকার জীবন যাপন, না ঘরকা, না ঘাটকা। সমাজ-সংস্কৃতির এই বন্ধ্যাত্ব দূর করার এক টুকরো প্রয়াস রোদ্দুর সাহিত্য সাময়িকী। যেন প্রবাসে এক টুকরো স্বদেশ, প্রবাসীদের প্রত্যাশার আকাশে এক চিলতে রোদ্দুর।

আবুল বাশারের বইয়ের প্রচ্ছদ
আবুল বাশারের বইয়ের প্রচ্ছদ


একজন সমাজকর্মী হিসেবেও সমধিক পরিচিত আবুল বাশার। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি, জেদ্দার’ একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। জন্মলগ্ন থেকে এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলার সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি প্রবাসীদের মানবিক-আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসা সহায়তা, লাশ দাফন ও দেশে প্রেরণ ছাড়াও স্বদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। সমিতির বার্ষিক স্মরণিকা তিতাস-গোমতী-মেঘনার সম্পাদনা করেন আবুল বাশার।
সৌদি আরবে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের জন্যে ভাবেন ও কাজ করেন তিনি। রোদ্দুর সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশের পাশাপাশি আয়োজন করছেন রোদ্দুর বৈশাখি। সেই সঙ্গে কৃতী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান, গুণীজন সংবর্ধনাসহ জাতীয় দিবসগুলোতে অনুষ্ঠান-আয়োজনের মাধ্যমে প্রবাসে স্বদেশ রচনায় প্রয়াস পাচ্ছেন তিনি। প্রবাসে কর্মব্যস্ততা আর বৈরি পরিবেশ মোকাবিলা করে, সময়-শ্রম আর মেধা দিয়ে প্রবাস সমাজকে এগিয়ে নিতে নিরলস ভূমিকা রাখছেন আবুল বাশার।
বাহার উদ্দিন বকুল
জেদ্দা সৌদি আরব