প্রবাসে দুর্গা–অর্চনা

শরতে আজ কোন্‌ অতিথি এল প্রাণের দ্বারে।
আনন্দগান গা রে হৃদয়, আনন্দগান গা রে।।

বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। শরৎকালে সর্বজনীনভাবে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে উদ্‌যাপন করা হয়। আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটি নবমবারের মতো উদ্‌যাপন করেছিল সর্বজনীন দুর্গোৎসব। অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, মধ্যাহ্নভোজ, সন্ধ্যারতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—সবকিছু মিলিয়ে যেন ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বাঙালির মিলনমেলা, প্রাণের মেলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব।

ঢাকের আওয়াজ, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনিতে পূজার প্রাঙ্গণ এক অনাবিল স্নিগ্ধতায় ভরে ওঠে। মা দুর্গাকে বরণ করার মধ্য দিয়ে মূল পূজা শুরু হয়। ধূপের গন্ধ, পুরোহিতের দুর্গা আরাধনার মন্ত্র উচ্চারণ—এ পরিবেশ প্রবাসে থেকেও বাংলার সংস্কৃতি ও ধর্মকে ধারণ করাতে সক্ষম হয়েছিল গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটি।

প্রবাসে বসবাসরত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাঙালি সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে তুলে ধরা এবং তাকে মনেপ্রাণে ধারণ করবার ক্ষেত্রে গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটি সর্বাত্মক চেষ্টা করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আয়োজন করেছিল সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাকে তিনটি মূল পর্বে ভাগ করা হয়েছিল। প্রথম পর্বে ছিল বাংলা কবিতা, গান, গীতিনাট্য, নাচসহ শিশুদের অনবদ্য উপস্থাপনা। দ্বিতীয় পর্বে সংগঠন ও ওই এলাকার স্বনামধন্য শিল্পীদের পরিবেশনা। তৃতীয় পর্বে অতিথি শিল্পীদের পরিবেশনা। অতিথি শিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্ণব বিশ্বাস ও সংগীতশিল্পী ইসরাত চৌধুরী শর্মী।

দশমীর বিদায়বেলায় ধুনচিনাচ ও সিঁদুরখেলা ছাড়া দুর্গাপূজা যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে ধুনচিনাচের সঙ্গে সিঁদুরখেলা গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটির এই দুর্গোৎসব বাঙালির মিলনমেলায় পরিণত করে। এ মিলনমেলা এটাই প্রমাণ করে, ধর্ম যার যার উৎসব সবার।

কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের চিরচেনা পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে। পুরো বিশ্ব আবার মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় পুরো দুর্গোৎসবের আয়োজনে গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটি সিডিসির গাইডলাইন মেনে চলেছে।

তারা সর্বাত্মকভাবে গুরুত্ব দিয়েছে সবার সুরক্ষাকে। মহামারির এই ক্ষণে গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটির আরেকটি সাফল্যমণ্ডিত দুর্গোৎসব আয়োজন প্রবাসে বসবাসরত বাঙালির প্রাণে আনন্দের সঞ্চার করেছে। এ বিশাল আয়োজনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আসছে বছর আবার হবে—সেই প্রত্যাশায় গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটি।