প্রবাসে ইফতার ও রেস্তোরাঁ চিত্র

রমজান ত্যাগের মাস। আর রোজা মানে সংযম। সারা দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা। অভুক্ত মানুষের কষ্ট উপলব্ধির সুযোগ করে দেয় রোজা। তবে এটাও ঠিক, সারা দিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যায় রোজাদারের সুস্বাদু কিছু মুখে তোলার ইচ্ছে হয়। আবুধাবিতে বাঙালিদের গড়া রেস্টুরেন্টগুলো ইফতারির পসরা সাজিয়ে রাখে। প্রবাসী বাঙালিরা এসব জায়গা থেকে সুবিধামতো সময়ে সংগ্রহ করে নেন তাদের পছন্দের সামগ্রী। শুধু ইফতারি কেন, অন্য সময়েও এদের থাকে ভিন্ন ধরনের আয়োজন। সে কারণেই মর্যাদা নিয়ে এরা টিকে আছে ব্যবসায়।
দেশের মতো এখানে খোলা জায়গায় কোনো বেচাকেনার সুযোগ নেই। অন্তত এখানকার নিয়মকানুন তাই বলে। সে কারণে দোকানিরা ইফতারির সম্ভার সাজিয়ে রাখেন তাদের রেস্তোরাঁর ভেতরে। আবুধাবি-মোসাফফা—সব জায়গায় তাদের বিক্রি শুরু হয়ে যায় সূর্য পশ্চিম দিকে হেললেই।
প্রবাসী বেশির ভাগই এখন রেস্তোরাঁ থেকে ইফতারি নিয়ে যান। যারা পরিবার নিয়ে আছেন তাদেরও অনেকে বাইরের দ্বারস্থ হন। এতে দুটো সুবিধা। একদিকে তারা রকমারি পণ্য সহজে পাচ্ছেন। অন্যদিকে স্বাচ্ছন্দ্যে তারা এসব সংগ্রহ করতে পারছেন।

রাজধানী আবুধাবির স্যান্ড মেরিন রেস্টুরেন্টসহ শিল্পনগরী মোসাফফার রেডচিলি রেস্তোরাঁ ও ডায়মন্ড রেস্টুরেন্টের পক্ষ থেকে এমন ধারণাই পান এই লেখক। রেস্তোরাঁয় চানা পেঁয়াজু, আলুনি, বেগুনি, সমুচা ইত্যাকার দ্রব্যের পসরা সাজিয়ে রাখা হয়। সেখানে থাকে তরমুজ, কলা, পেঁপে, আপেল-মোসাম্বিকের সমন্বয়ে তৈরি ফলার। যাঁরা রেস্তোরাঁয় বসে ইফতারি করেন তাঁদের টেবিলে সরবরাহ করা হয় সুস্বাদু মাঠা, লাবাং, রুহ আফজা জাতীয় পানীয়।
ইফতারি মৌসুমে বিশেষ কিছু সামগ্রীর আয়োজন করা হয় বাংলাদেশিদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এক একটি রেস্তোরাঁর স্বকীয়তাও প্রকাশ পায় এক একটি সামগ্রীর মধ্য দিয়ে।
স্যান্ড মেরিন রেস্টুরেন্টের মোহাম্মদ বেলালউদ্দিন বলেন, তাদের ডিম-পরোটা, শিক কাবাব-পরোটা অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এ সব রাতের খাবার। এ ছাড়া প্রতিদিন আয়োজন করা হয় আন্নি বিরিয়ানি। মোহাম্মদ হাসান যোগ করেন, তাদের আয়োজনের হালিম বরাবরের সুনাম ধরে রাখতে পেরেছে। আলাপের সময় দেখা গেল রেস্তোরাঁ কর্মীরা তখন ব্যস্ত ইফতারি দ্রব্য সাজাতে।

ডায়মন্ড রেস্টুরেন্টের তরুণ তত্ত্বাবধায়ক মাহমুদুল হাসান জানান, তাদের ভোজন পণ্যের মধ্যে গ্রাহকেরা দেশি স্বাদ খুঁজে পান। সে জন্যই বাঙালিরা এখানে এসে ভিড় জমান। বরিশাল ধুলায় মধ্যের চরের সন্তান দেলোয়ার হোসেন এখানকার প্রধান বাবুর্চি। তার কথায় মনে হলো, কাচ্চি বিরিয়ানি এই রেস্তোরাঁর সুনাম অর্জনের বড় কারণ। গৌরনদীর মাসুদ পরিবেশন কর্মী। তিনি বলেন, এখানকার গরম-গরম তন্দুর রুটির জন্য দূর-দূরান্ত থেকে গাড়ি চালিয়ে আসেন গ্রাহকেরা। ডায়মন্ড রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইউনুস দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানে পরিবেশনা ঈর্ষণীয় বলে মানুষের আকর্ষণ কেড়ে নিতে পেরেছে।
মোসাফফার রেড চিলি রেস্তোরাঁর যাত্রা দুই বছর আগে। তারা বনফুল নামে একটি কোম্পানির গ্রাহক। রসমালাই, মীর মোহন, চমচম-এদের নামকরা মিষ্টি। এ ছাড়া আছে তাদের নিজস্ব পণ্য। রেস্তোরাঁর ক্যাশিয়ার সোহেল রানা বলেন, এত দিনে প্রতিষ্ঠানটি একটি ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পেরেছে। নোয়াখালীর ছোট রাজাপুর গ্রামের গোলাম সরোয়ার রেড চিলির মিষ্টি তৈরির কারিগর। মিষ্টির সুন্দর সুন্দর পণ্য সংযোজনে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি ঢাকার বিক্রমপুর সুইটস, দেশবন্ধুতে চাকরি করেছেন। জানালেন, সেই অভিজ্ঞতাই তিনি কাজে লাগাচ্ছেন।
ডায়মন্ড, রেড চিলি, স্যান্ড মেরিন—সব রেস্তোরাঁর জন্যই ইফতারি হচ্ছে মৌসুমী আয়োজন। তাঁরা গ্রাহক বা ভোক্তার রুচির মূল্য দিয়ে বিভিন্ন রকম ভোজন সামগ্রীতে আনছেন নতুন নতুন মজা। রেস্তোরাঁর মধ্যেই ছোটখাটো আয়োজনের জন্য ভিন্ন হল রুম রয়েছে। এ রুমে ৫০-৬০ জনের বসার স্থানের সংকুলান হয়। এ ছাড়া তারা প্যাকেটে খাবার সরবরাহ করে থাকেন। ভিসাজনিত কারণে লোকবলের সমস্যা তাদের আছে। তারপরও এক সঙ্গে তিন শ প্যাকেটের কার্যাদেশ নিতে তাদের অসুবিধা হয় না।
বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাঙালিদের টান আছে এদের ওপর। আবার এরাও সেই মর্যাদাটি দেন গ্রাহকদের। তারা খদ্দের লক্ষ্মী এই বিশ্বাসটি লালন করেন হৃদয়ের গভীরে। দেশ মানুষ তখন এক হয়ে যায়। পারস্পরিক সম্পর্ক জীবন্ত থাকুক—এই কামনা।