প্রবাসের কর্মক্ষেত্র

প্রাণী জগতে মানুষই সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। পরিবেশের পাশাপাশি পরিবর্তিত প্রতিবেশও তাকে মানিয়ে নিতে হয়। এই ধরনের ভিন্ন পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয় প্রবাসে এলে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষ যখন আমেরিকায় বাস করতে আসে তখন তার সামনে বহু চ্যালেঞ্জ চলে আসে। প্রকৃতি, আবহাওয়া, জীবনযাপনের ধরন, সবই বলতে গেলে আলাদা। বাংলাদেশ থেকে আসা পুরুষদের জন্য এই পরিবেশ মানিয়ে নেওয়া; এর মধ্যে জীবনসংগ্রাম চালানো হয়তো কিছুটা সহজ। কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম কিংবা মফস্বল থেকে যে নারী তাঁর স্বামী কিংবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এখানে এসেছেন এবং জীবিকার তাগিদে তাঁকে কাজ করতে হচ্ছে, তাঁকে নিশ্চিতভাবেই একটা বড় ধরনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
বাংলাদেশে যে নারী ছিলেন গৃহবধূ, প্রবাসে এসে তাঁদের অনেককেই ধরতে হয়েছে পরিবারের হাল। হয়তো চালাতে হচ্ছে ট্যাক্সি, হয়তো বিপণি বিতানে কাজ করতে হচ্ছে রাত দিন। স্বামী-সংসার সামাল দিয়ে কাজ করা অনেক নারীর কাজ দেখলে ধারণা করা যাবে না, দেশে কী জীবন তাঁরা ফেলে এসেছেন। দেশে অনেকেই ছিলেন অনেক অবস্থাপন্ন। কখনো কাজ
করতে হয়নি। কিন্তু কর্ম সংস্কৃতির দেশ আমেরিকায় এসে এসব গৃহবধূ
উপার্জন করছেন।
প্রবাসী নারীর অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে তাঁদের এই সংগ্রামকে স্যালুট জানাতেই হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের উৎসাহ দেওয়া দরকার, আর এ উৎসাহ আসতে হবে অবশ্যই তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে। অদম্য অভিযাত্রায় নিয়োজিত নারীদের নিজের কর্মক্ষেত্র নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বরং এই কাজকে স্বাবলম্বনের হাতিয়ার হিসেবে মেনে নিয়ে তাঁদের এগিয়ে যেতে হবে। তাঁদের বুঝতে হবে বড় কাজ, ছোট কাজ—এসব নিয়ে দ্বিধা করা পশ্চাৎপদ মনোভাবেরই প্রতিফলন। কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনগুলো এই অদম্য নারীদের এগিয়ে যাওয়া সহজ করতে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারও যদি দূতাবাসের মাধ্যমে তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসে সেটিও প্রবাসী নারীর কর্মক্ষেত্রকে অনেক সম্প্রসারিত করতে সক্ষম হবে।
বাঙালি গৃহবধূদের এই জীবন সংগ্রামকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তি জীবনের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। পরিশ্রমী জীবনে যেন তিনি পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ পান সে ব্যবস্থা পরিবারের সদস্যদের করতেই হবে। সর্বপরি তিনিও একজন মানুষ, এ কথা ভুললে চলবে না।