প্যারিসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

ইউনেসকো আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনায় অতিথিরা
ইউনেসকো আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনায় অতিথিরা

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এ উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে দূতাবাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। প্রবাসী বাংলাদেশি ও দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন।

বিকেলে দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে দূতাবাস প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের একটি বড় অংশজুড়ে ছিল অতিথিদের অংশগ্রহণে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর আলোচনা। আলোচনা পর্বে বক্তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রাম এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ গঠনে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। আলোচকেরা বাঙালির প্রতিটি সংগ্রামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে শহীদ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সময়কালে শহীদ দিবস পালন, ১৯৭১ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত স্বাধীনতা–পরবর্তী যুগে শহীদ দিবস পালন এবং ২০০০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন—প্রতিটি ক্ষেত্রই আলাদা গুরুত্ব বহন করে। তিনি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।

আলোচনার পর স্থানীয় শিল্পীরা একুশের গান ও কবিতা পরিবেশন করেন। সব শেষে উপস্থিত সবার অংশগ্রহণে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্ত হয়।

বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ
বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ

অনুষ্ঠানের এ পর্বে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসহ অন্য ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত এবং তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

এ ছাড়া রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন সকালে বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার পর ইউনেসকো আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আনুষ্ঠানিক আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন ছাড়াও ইউনেসকোর উপমহাপরিচালক (শিক্ষা) Stefania Giannini, ফ্রান্সে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত Juan Andrés Perello Rodríguez ও Organisation internationale de la Francophonie-এর পরিচালক Youma Fall বক্তব্য দেন।

রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন তাঁর বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আয়োজনে ইউনেসকো ঘোষিত থিম Indigenous languages matter for development, peace building and reconciliation-এর ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সেই দেশ যারা ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে, তাই মাতৃভাষার গুরুত্ব বাংলাদেশের কাছে অপরিসীম।

এরপর রাষ্ট্রদূত প্যারিসের দুটি ভিন্ন স্থানে প্রবাসী কর্তৃক আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ও অস্থায়ীভাবে স্থাপিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বিজ্ঞপ্তি