নারী দিবস ও রঙের শক্তি

৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতিবছরই এই দিনটি ঘুরে ঘুরে আসে। দিনবদল হয়। অনেক কিছু বদলে যায়। দেশে দেশে রাজা বদল হয়। রাজ্য বদলে যায়। বিজ্ঞান উন্নত থেকে আরও উন্নততর হয়। মানুষ চাঁদে পাড়ি জমানোর পর এখন চোখ মঙ্গলের দিকে। আমরা পৃথিবীর বুকে, ঘরের সোফায় বসে গরম কফিতে চুমুক দিতে দিতে দেখছি আমাদের অধরা, অছোঁয়া রক্তিম গ্রহের মাটি। হয়তো অচিরেই নীল আর্মস্ট্রংয়ের মতো কোনো এক নির্ভীক স্বপ্নজয়ী মানুষ পা রাখবেন মঙ্গলের পাথুরে জমিনে।

কিন্তু আমরা নারীরা আজও নারী স্বাধীনতা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। লড়ে যাচ্ছি পৃথিবীর বুকে একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে বাঁচার, পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে। যে আন্দোলন, যে দাবি তুলেছিলেন আমাদের পূর্বসূরি নারীরা। সেই আঠারো, উনিশ শতকের নারীরা। বেগম রোকেয়া, স্বর্ণকুমারী দেবী, জ্ঞানদা নন্দিনী, ভার্জিনিয়া উলফের মতো নারীরা তখনই এই আওয়াজ তুলেছিলেন।

আমাদের নারীদের এই অগ্রযাত্রা বড় মন্থর। কারণ, আমরা এক পা আগালে, পিছাই দশ পা। এই পেছনে টেনে ধরার কাজটা আর কেউ নয়, আমরা নারীরাই করি। সেই শ্বাশতকাল থেকেই ধর্মীয়, সামাজিক, পারিবারিক বিধিনিষেধ শেকল দিয়েছে নারীর পায়ে। জুজুর ভয় দেখিয়ে আটকে রেখেছে নারীর জয়যাত্রাকে।

আমরা সারা বিশ্বের নারীরা ৮ মার্চ উদ্‌যাপন করলাম নারী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক বিশ্ব নারী দিবসটি। আজকাল যেকোনো আন্দোলনই হয়ে উঠেছে বর্ণিল। আমরা ক্যানসার সচেতনতা দিবসটি পালন করি গোলাপি রঙ্গে। নারী মুক্তির স্লোগানটি নারী দিবসের সিগনেচার কালার শক্তিশালী ‘বেগুনি’ রঙে। এবার বেগুনিতে জেগে উঠেছে নারীরা।

রঙের মাঝে আছে প্রবল এক শক্তি। রং আমাদের মেজাজ, আবেগ ও আচরণকে প্রভাবিত করে। রং হতে পারে তথ্য ও বক্তব্যের উৎস। কোনো নির্দিষ্ট রঙের প্রতি কোনো ব্যক্তির প্রতিক্রিয়াও তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত হতে পারে। তবে রং বিজ্ঞান ও রঙের মনোবিজ্ঞান পাশাপাশিই রঙের এই ধারণাকে সমর্থন করে।

রঙের মধ্যকার সম্পর্ক, রং থেকে পাঠানো শক্তিশালী বার্তা নিয়ে বিপণন ও ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে অতীতে প্রচুর গবেষণা হয়েছে, আজও হচ্ছে!

‘সার্টোরিয়াল’ শব্দটি উপযুক্ত পোশাক, স্টাইল, কমনীয়তার সঙ্গে সম্পর্কিত। ‘সার্টোরিয়াল’ শব্দের উত্সটি লাতিন শব্দ ‘সার্তোর’ অর্থাৎ ‘দরজি থেকে এসেছে। এই শব্দটি উচ্চ স্তরের কারুশিল্পীদের তৈরি মননশীল, ক্ল্যাসিক ও কালজয়ী কেতাদুরস্ত পোশাকের বর্ণনা দিতে ব্যবহৃত হয়।

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানেও সবার নজর কেড়েছিল বিশিষ্টজনের পোশাকের রং নির্বাচন এবং রং নির্বাচনের পেছনের গল্প। নতুন প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট লেডি, প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রথম সেকেন্ড জেন্টেলম্যান কী ধরনের পোশাক পরবেন এবং কোন কোন ডিজাইনার তা তৈরি করবেন, এসব নিয়ে বেশ আগে থেকেই টেলিভিশন, নিউজ ও পত্রিকাগুলো মুখর হয়ে উঠেছিল। কারণ, উদ্বোধনের দিন মার্কিন প্রশাসনের এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যে রং পরেন, তা ফ্যাশন জগৎ এবং রাজনীতির বিশ্বে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠায়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা এবং তাদের পরিধেয় পোশাক, তাদের ফ্যাশন সচেতনতা, পোশাকের রং নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং চিত্তাকর্ষক একটি বিষয়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেকের দিনে বিশ্ব মিডিয়া এবং আগ্রহী মানুষের নজর থাকে ক্যাপিটল হিলের দিকে।

চারদিকে গুঞ্জন ছিল, নতুন ‘কমান্ডার ইন চিফ’ তার এই বড়দিনে অভিজাত ফ্যাশন হাউস র‌্যালফ লরেনের স্যুট পরবেন। প্রকৃতপক্ষে, বুধবার বাইডেন র‌্যালফ লরেনের নেভি–ব্লু স্যুট, স্যুটের একই ফ্যাব্রিক থেকে তৈরি নেভি ব্লু মাস্ক, হালকা নীল রঙের নেকটাই এবং নেভি ব্লু ওভারকোট পরলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম ‘সেকেন্ড জেন্টেলম্যান’ হলেন ডগ এমহফ। তিনিও পরেছিলেন র‌্যালফ লরেনের তৈরি পোশাক। ডাবল-ব্রেস্টড ওভারকোটের নিচে ধূসর চ্যারকোল স্যুটে তার আভিজাত্য দৃশ্যমান হয়ে ফুটে উঠেছিল।

ইহুদি অভিবাসী পরিবারের সন্তান র‌্যালফের জন্ম ব্রঙ্কসে। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর কাজ, পোশাক, নকশা, বুননে প্রতিফলিত হয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্নপূরণ।

নতুন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিঃসন্দেহে তার সার্টোরিয়ালে ‘এ-গেম’ ফুটিয়ে তুলেছিলেন। ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন পরেছেন আলেকজান্দ্রা ওনিলের ডিজাইন করা সমুদ্র নীল উলেন টুইড কোট। ভেলভেট কাফের সঙ্গে তাঁর পোশাকের জমিন অলংকৃত হয়েছে সারাভস্কি ক্রিস্টালে। অভিষেকের দিন ফার্স্ট লেডির শরীরে সমুদ্র নীল জমিনের ওপর খোদিত ক্রিস্টালগুলো দিনের আলোতে চিকমিক করে যেন দ্যুতি ছড়াচ্ছিল। ওপরের নীল কোটের মতোই ম্যাচিং নীল শিফন বডিস এবং স্কেলোপড স্কার্ট ফার্স্ট লেডির পোশাকে এনেছে কারিশম্যাটিক সৌন্দর্য। জিল বাইডেন আরও পরেছিলেন একই নীল শেডে তৈরি মার্কারিয়ানের সিল্ক ফেসমাস্ক ও এক জোড়া ম্যাচিং গ্লাভস। অলংকার অনুষঙ্গ ছিল সাদা মুক্তা।

নিউইয়র্ক ভিত্তিক ডিজাইনার ওনিল ফ্যাশন হাউস ‘মার্কারিয়ান’–এর প্রতিষ্ঠাতা। এক বিজ্ঞপ্তিতে ফার্স্ট লেডির পোশাকের রং নির্বাচন সম্পর্কে ওনিল বলেন, ‘সমুদ্র নীল রংটি বেছে নেওয়া হয়েছিল বিশ্বাস, আত্মবিশ্বাস ও স্থায়িত্ব বোঝাতে।

আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম নবনির্বাচিত নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন কমলা হ্যারিস। অভিষেক অনুষ্ঠানে তার পোশাকটিও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাঁর এই ঐতিহাসিক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন বেগুনি রঙের পোশাক। উদ্বোধনী দিনের স্টাইলে কমলার বেগুনি রং নির্বাচনের পেছনে গভীর ও অর্থবহ চিন্তা ছিল। নিউইয়র্কভিত্তিক লস অ্যাঞ্জেলেস ব্যাটন রাউজের কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ ডিজাইনার ক্রিস্টোফার জন রজার্সের তৈরি পোশাক পরেছিলেন হ্যারিস। উদীয়মান কালো মার্কিন ডিজাইনারকে পুরস্কৃত করাই ছিল কমলার অভিপ্রায়।

সিএনএনের অ্যাবি ফিলিপের মতে, শার্লি চিশলম ছিলেন মার্কিন কংগ্রেসে নির্বাচিত প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী, যিনি ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট পদে লড়েছিলেন। তিনি লাল ও নীলের প্রতীকী ঐক্য বোঝাতে এই দুই রঙের মিশ্রণে তৈরি বেগুনি রঙের পোশাক পরে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। তা ছাড়া, গত চার বছরে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রেড স্টেট ও ব্লু স্টেট নামকরণ করে মার্কিনদের মধ্যে যে বিভেদের দেয়াল তৈরি করেছিলেন, সেখানে একতা আনতে লাল ও নীলের সংমিশ্রণের বেগুনি রংকে প্রাধান্য দিয়েছেন অভিষেকে অংশগ্রহণকারী অনেকেই। যা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সংহতির প্রতীক। অন্যদিকে লাল ও নীলের সমন্বয়ে সৃষ্ট মহাবিশ্বেও বেগুনি রঙ্গের সঙ্গে একটি দারুণ সাদৃশ্য রয়েছে।

হিলারি ক্লিনটন ডিজাইনার র‌্যালেফ লরেনের ডিজাইন করা বেগুনি প্যান্ট সুট পরেছিলেন। গলায় ছিল নজরকাড়া র‌্যালেফ লরেনেরই বেগুনি স্কার্ফ। কালো ওভারকোটের নিচে স্তরযুক্ত করে বিন্যস্ত ছিল স্কার্ফটি। হিলারি ক্লিনটন পিপল ম্যাগাজিনকে বলেন, তিনি বেগুনি পরেছিলেন কারণ এটি ঐক্যের প্রতীক। বেগুনি হলো লাল ও নীল রঙের মিশ্রন। এখানে বেগুনিকে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের ব্যবহৃত লাল এবং নীল রঙের প্রতীকী সংমিশ্রণ হিসেবে ভাবা হয়েছে। বেগুনি রং নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে এবং শার্লি চিশলমের সঙ্গেও যুক্ত।

সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ রিপাবলিকান হয়েও সংহতি দেখানোর জন্য নীল পোশাক পরেছিলেন। নীল হলো ডেমোক্রেটিক পার্টির রং।

লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক ডিজাইনার সার্জিও হাডসনের তৈরি বারগান্ডি রঙের স্যুট পরেছিলেন প্রখর ফ্যাশন সচেতন মিশেল ওবামা। তার কটি বেষ্টন করা বেল্টের সোনালি রঙের ওভার সাইজ ম্যাটালিক বকলেসটি ছিল চোখে পড়ার মতো। সঙ্গে একই বারগান্ডি শেডের লং কোট ছিল মানানসই।

ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন তরুণ কবি আমান্ডা গোরম্যানকে নির্বাচন করেছিলেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে তার স্বরচিত কবিতা আবৃত্তির জন্য। আমান্ডা তার ‘হিল উই ক্লাইম্ব’ নামক কবিতাটি তার সহজাত স্টাইলে আবৃত্তি করে সবার মন জয় করেন। ফ্যাশন হাউস প্রাদার তৈরি হলুদ রঙের ডাবল-ব্রেস্টের কোট, লাল সার্টিনের তৈরি চে গুয়েভারা ইন্সপাইরেশনাল হেডব্যান্ড, দামি পপলিন সাদা সার্ট ও কালো পেনসিল স্কার্টে সজ্জিত গোরম্যানের পরিশীলিত সৌন্দর্য ছিল চোখে পড়ার মতো। হলুদ হলো উষ্ণ, শক্ত ও আনন্দদায়ক রং।

হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সেদিন রঙের যে থিম অনুসরণ করেছিলেন, তা হলো টারকুইস বা ফিরোজা রং। ফিরোজা রং সজীবতা, নারীত্ব, শান্ত, পরিশীলিত, শক্তি, প্রজ্ঞা, নির্মলতা, সৃজনশীলতা, সংবেদনশীলতা, পরিপূর্ণতা, ভারসাম্য, সৌভাগ্য, আধ্যাত্মিক ভিত্তি, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, আনন্দ, প্রশান্তি, ধৈর্য, অন্তর্দৃষ্টি ও আনুগত্যের সঙ্গে যুক্ত।

তাইতো অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য তাঁর কোট, স্কার্ফ ও ম্যাচিং হিলে ফিরোজা রং বেছে নিয়েছিলেন ন্যান্সি। লেদারের তৈরি গ্লাভস, একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্রোচ এবং প্যাটার্নযুক্ত ফেসমাস্ক তার সাজসজ্জাকে সম্পূর্ণ করে তুলেছিল।

অভিষেক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন গায়িকা লেডি গাগা। টেক্সাসের ডিজাইনার ডেনিয়েল রোজবেরির নকশায় কাস্টম মেইড পোশাকটি পুরো অনুষ্ঠানে একটি নাটকীয় সংযোজন ঘটিয়েছিল। নেভি কাশ্মীরি জ্যাকেট ও ভলিউমিনাস লাল সিল্কের স্কার্টটি দৃষ্টি নন্দন ছিল। লাল রং হলো উষ্ণতা, উত্তেজনা, দীপ্তি ও রোমান্টিকতার প্রতীক। তবে তার কাশ্মীরি জ্যাকেটের বুকে ‘বড় আকারের পায়রা এবং পায়রার ঠোঁটে জলপাই শাখা’র ব্রোচটি ছিল আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পুরোনো কাল থেকেই পায়রা শান্তি ও সৌহার্দ্যের প্রতীক।

সাদা পোশাক ঐতিহাসিকভাবেই মার্কিন নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। ভোটাধিকার আন্দোলনকারী নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেই জেনিফার লোপেজ আপাদমস্তক সম্পূর্ণ সাদা পোশাক পরে অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সাদা হলো শান্তি ও পবিত্রতার প্রতীক। জে লো পরেন শ্যানেলের সোনালি বোতাম দেওয়া টুইড লং কোট, র‌্যাফেলড ব্লাউজ ও চওড়া ঘেরের প্যান্ট, মুক্তা বসানো ব্রেসলেট আর স্টেটমেন্ট ইয়ারিং। পনিটেল করা চুলে সম্পূর্ণ হয়েছিল তার সাজ।

এমনকি কমলা হ্যারিসের মেয়ে এলা এমহফও তাঁর ফ্যাশন সচেতনতায় সবার নজর কেড়েছেন। তার পরা মিউ মিউ কোটের সাদা কলার ছিল চমৎকার অলংকরণ। কমলার ছোট ছোট ভাগনিরাও ফ্যাশন প্যারেডে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন। ফ্যাশন বোদ্ধারা তাদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। হ্যারিস ও তার বোন মায়া শৈশবে যে ধরনের পোশাক পরেছেন, তাদের কাস্টম পোশাকে তার মিল রয়েছে।

বেগুনি হল স্বাধীনতা, মর্যাদা, আনুগত্য ও অবিচলতার রং। নতুন ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, সাবেক সেক্রেটারি অফ স্টেট হিলারি ক্লিনটন ও সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনকে সারা দিনই এই প্রতীকী রঙের পোশাকে দেখা গেছে।

বাইডেনের নাতি–নাতনিদের জন্য এটি ছিল একটি ‘ওয়াও ওয়াও মুহূর্ত’। সাদা, গোলাপি ও বাদামি পোশাকে ক্যাপিটল হিল থেকে দীপ্ত পদক্ষেপে বেরিয়ে আসা তরুণীরা ছিলেন নজরকাড়া সুন্দর। উত্তরসূরিরা কেবল কথায় নয়, তাঁদের চলন-বলন আর পোশাক-আশাকেও স্বদেশপ্রেমের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

সান দিয়েগো ভিত্তিক ফ্যাশন ডিজাইনার ও চিয়া ডরসি বলেন, ‘অভিষেক দিনের পোশাক পছন্দের ব্যাপারটি কৌশলগত।

নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রতীকী রঙের পোশাক পরিধান কেবল সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য নয়। এর পেছনে কাজ করে নানা শৈলী। এই নির্বাচিত রংগুলোর পেছনে রয়েছে নানা গল্প বা মিথ! অতীতকে স্বীকার করে নিয়েই শুরু হলো ভবিষ্যতের প্রত্যাশা!

২০২১ সালের অভিষেক অনুষ্ঠানটি গণতন্ত্রের জন্য একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। তবে এটি ফ্যাশনের জন্যও ছিল দুর্দান্ত।

অন্যদিকে আমরা দেখি, রং সচেতনতা আছে শোক ও সমবেদনা প্রকাশের ক্ষেত্রেও। পশ্চিমা বিশ্বে মৃতের বাড়ি সমবেদনা জানাতে গেলে বা ফিউনারেলে কালো পোশাক পরার নিয়ম। কালো একটি প্রথাগত, মার্জিত ও মর্যাদাপূর্ণ রং। কালো মৃত্যু, শোক, রহস্যের সঙ্গেও সম্পর্কিত।

অন্যদিকে হিন্দু সংস্কৃতিতে সাদা পোশাকে শোক প্রকাশ করার রীতি। প্রাচীনকালে হিন্দু বিধবাদের সাদা পোশাক পরার কড়াকড়ি নিয়ম ছিল। মুসলিম ধর্মে মৃতদেহ সাদা কাপড়ে দাফন করার নিয়ম।

মনে করা হয়, সাদা বিশুদ্ধতা, শান্তি, নম্রতা, নির্মলতা ও পূর্ণতার রং। সাদা রং মনকে স্পষ্ট ও বিশুদ্ধ করে তোলে বলে বিশ্বাস করা হয়। কামনা-বাসনাকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে সাদা রং!

রঙের রয়েছে অপরিমেয় শক্তি। রং আমাদের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করে।