টাঙ্গাইলে মুক্তির লড়াই

মাহবুব হাসান

মুক্তিযোদ্ধা ড. মাহবুব হাসান। মাত্র স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যেই স্বাধীনতা যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। আর বসে থাকতে পারেননি। খাতা–কলম রেখে অস্ত্র হাতে রণাঙ্গণে নেমেছেন। দেশের মুক্তির লড়াইয়ে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। সেই সময়ের কথা স্মরণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ডিসেম্বর এলেই আমাদের মনে পড়ে, আমরা দেশটিকে স্বাধীন করেছিলাম রক্তাক্ত এক যুদ্ধের মাধ্যমে।

মাহবুব হাসান স্মৃতিচারণ করেন সেই সময়ের। কথা বলেন স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে। বলেন, আমরা যারা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী, তারা রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ের পাশাপাশি সন্ধ্যা নামলেই অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিতাম। আমি টাঙ্গাইলের মানুষ। আমার রাজনৈতিক কাজও ছিল ওই শহর ও গ্রামকে কেন্দ্র করে। তখনই প্রথম চিনলাম ডামি রাইফেল। হুবহু রাইফেলের মতো, কিন্তু স্বয়ংক্রিয় নয় এবং মূলত কাঠের তৈরি। ওই ডামি দিয়েই আমাদের ট্রেনিং হচ্ছিল। তখন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরাও কমবেশি সশস্ত্র সংগ্রামের কথা বলত। তাদেরও প্রশিক্ষণ হতো।

টাঙ্গাইল শহরে আমাদের প্রকাশ্য রাজনৈতিক অফিস ছিল একটি। সেখানেই সব রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞ চলত। আর একটি গোপন অফিস ছিল, যা নেতারা ও বাছাই করা কর্মীরা ব্যবহার করতেন। আমরা এইচকিউ বলতাম। এটা বলা মানেই আমাদের গোপন হেড কোয়ার্টারের কথা বুঝতাম। সন্ধ্যার পর সেখান থেকে গোপনে চলে যেতাম শহরের পশ্চিম পাশের স্টেডিয়ামের প্রায় গা-লাগোয়া একটি মরা নদীর পাড়ে। সেখানেই আমাদের প্রশিক্ষণ হতো। এটাই ছিল যুদ্ধ শুরুর আগে আমার মৌলিক প্রশিক্ষণ। এ ছাড়া রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে সামলানোর কৌশল শেখানো হতো।

১৯৭১ সালের মার্চে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠল, আমাদের পরিবার টাঙ্গাইলের বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি বাসাইল থানার আইসরায় চলে গেল। আমাদের গ্রাম টাঙ্গাইল সদর থানার পুবে, কালিহাতী থানার দক্ষিণ-পশ্চিমে আর বাসাইল থানার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। টাঙ্গাইলের পুবের গ্রাম তারোটিয়া ও নওগাঁর মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহ নামের ধলেশ্বরী নদীর একটি শাখা নদী বয়ে গেছে। টাঙ্গাইল শহর দখলের পর পাকিস্তানি সৈন্যরা ঝিনাইদহ পাড়ে এসে ওই নদীর কারণে থেমে যায়। ওখান থেকেই আমাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এপ্রিলের প্রথম দিকেই গ্রামবাসীর সঙ্গে আমরাও বাড়ি ঘর ফেলে আরও পুবে চলে যাই।

আমার অগ্রজ মাহবুব সাদিক তখন কক্সবাজার কলেজের প্রভাষক। তিনি সেখানেই আছেন। আমরা খুব উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলাম। তিনি ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় বাড়ি এলেন। তাঁর কাছে ঢাকার ভয়াবহ অবস্থার কথা শুনলাম। তিনি ঢাকায় কিছুদিন থাকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে টাঙ্গাইল চলে এলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। কাদের সিদ্দিকী আর আনোয়ার উল আলম (সদ্য প্রয়াত) মিলে গড়ে তুলতে শুরু করেন যোদ্ধাবাহিনী। টাঙ্গাইলে পাকিস্তানি বাহিনী আসার আগ পর্যন্ত বিন্দুবাসিনী বালক স্কুলের মাঠে ছাত্র-যুবাদের রিক্রুটিংয়ের কাজ হয়েছে। জোগাড় হতে থাকে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল। এলএমজির চেহারা আমরা অনেক পরে দেখেছি। সাবমেশিন গান বা এসএমজি আমরা ব্যবহার করেছি যুদ্ধের সময়। চাইনিজ অটো রাইফেল আর থ্রি-নট-থ্রি—প্রথম দিকে এগুলোই ছিল। পরে আরও বহু ধরনের অস্ত্র আমরা পেয়েছি।

এপ্রিলের প্রথম দিকের এক বিকেলে, আমাদের বাড়িতে চেয়ার পেতে বসে আছি আমি আর ভাইজান মাহবুব সাদিক। দেখি, এক নারী আসছেন আমাদের বাড়ির দিকে। কাছে এলে দেখলাম, তিনি হাজেরা সুলতানা। তিনি আমার নেত্রী। তিনি এসেই বললেন, মাহবুব ভাই আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি বুলবুল ভাইয়ের (কবি বুলবুল খান মাহবুব) শ্বশুরবাড়িতে।

ঠিক দেড় মাস পর ফজলু ভাই তাঁর বাহিনী নিয়ে আমাদের হাটখোলা কাম স্কুলের মাঠে এলেন। সেখানেই আস্তানা গেঁড়েছেন। খবর পেয়েই আমরা ছুটলাম। এর মধ্যে দেখলাম ফজলু ভাইয়ের গোঁফ বড় হয়েছে, মুখে দাঁড়ি। তিনি পাকিস্তানি আর্মির মতো গোঁফ তা দিচ্ছেন আর আতদের দিকে তাকাচ্ছেন। আমার মুখে তার চোখ পড়তেই আমার ডাক নাম ধরে ডাকলেন।

তুই যাবি?

আমি বললাম, হ্যাঁ। তবে মা-কে বলতে হবে।

ফজলু ভাই সন্ধ্যায় এসে মাকে বললেন, চাচি, ও আমার সঙ্গে থাকবে। কোনো ভয় নেই।

মা রাজি হলেন। আব্বার গররাজি হওয়ার কিছু ছিল না। বড় ভাইজান তো আগেই চলে গেছেন। আর মেজ ভাই গেছেন খন্দকার মুসার সঙ্গে। মুসা আর মেজ ভাই ছিলেন সহপাঠী। তিনি ফজলু ভাইয়ের ছোট ভাই। আমাদের প্রতিবেশী। মুসা ভাইও ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, তবে তারা ভাগ হয়ে বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন নাম নিয়েছিলেন।

সেই সন্ধ্যায় হাটখোলার এক দরজির দোকানে আমার ও আমার স্কুলের সহপাঠী তারোটিয়া গ্রামের টগরের জন্য কালো হাফ প্যান্ট ও কালো সুতি কাপড়ের গেঞ্জি বানানো হলো। সেই রাতেই আমরা রওনা হলাম পাহাড়ের পাদদেশের বহেরাতৈলের উদ্দেশ্যে। আমার মাথায় চাপল ২০ কেজি ওজনের গোলার বাক্স, টগরেরও। প্রায় সবাই গোলাবারুদ বয়ে চলেছে। প্রায় ৫ মাইল হেঁটে পৌঁছালাম কাউলজানি গ্রামের হাটখোলায়। বংশাই নদীর পাড় থেকে নৌকায় রওনা হলাম বহেরাতৈলের দিকে। সামনে বিশাল এক বিল। তার ও-পাড়েই সেই পাহাড়ি জনপদ বহেরাতৈল। একটি হাটখোলা ও প্রাইমারি স্কুল আর মাঠ। পেছনে কাঁঠাল গাছের প্রাকৃতিক বাগান আর জঙ্গল। সপ্তাহে একদিন এখানে হাট বসে।

শুরু হলো আমার আসল প্রশিক্ষণ। এখন সাড়ে সাত কেজি ওজনের থ্রি-নট-থ্রি দিয়ে প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষক যিনি, তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আগেই ফিরে এসেছিলেন। যোগ দিয়েছেন দেশকে হানাদারমুক্ত করতে। তাঁর কাছে শিখেছি কীভাবে রাইফেল চালাতে হয়, পরিষ্কার করতে হয়।

যুদ্ধের জন্য আমাকে নির্বাচিত করলেন ফজলু ভাই। এখন আর তাঁর সঙ্গে আমার তেমন কথা হয় না। কারণ, তিনি আমার কমান্ডার। তিনি যে টিনের ঘরে থাকতেন, সেখানে তার মা, ছোট ভাই আমার কাছাকাছি বয়েসের ছোট ভাই ও বোনেরাও থাকত। ওটা ছিল তার কোয়ার্টার। আমি সেখানে যেতাম।

বল্লা বাজারে কয়েকটি যুদ্ধ হয়েছে। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী টাঙ্গাইলের পর পরই সব থানা সদর ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ বাজার দখলে নিতে চায়। সেই রকম একটি বাজার কালিহাতী থানার বল্লাবাজার। পাকিস্তানিদের বল্লাবাজার থেকে উৎখাত করে মুক্তিসেনারা। সেই বাজার আবার দখল করতে আসে পাকিস্তানিরা আগস্টে। সেই খবর জানার পর বহেরাতৈলে থাকা আমাদের কোম্পানি প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সেই যুদ্ধেই আমি অংশ নিয়েছিলাম। বল্লাবাজারে তারা আর ঢুকতে পারেনি।

কালিহাতী থানা সদর থেকে পাকিস্তানি বাহিনী বল্লাবাজার আবার দখল করতে আসে। আমরা বল্লাবাজার ও বাজারের পশ্চিমে খালের ওপারে একটি প্রায় ডুবে থাকা ইটের ভাটায় পজিশন নিই। তিনজনের একজন ছিলাম আমি। আমাদের কাছে ছিল একটি লাইট মেশিনগান, একটি এসএলআর ও এসএমজি। পাকিস্তানিরা খালপারে এলেই আমরা গুলি শুরু করি। পাকিস্তানিরা হালটের দুপাশে নেমে যায়। অন্য পাশে গোরস্থান ও জঙ্গল থাকায় তারা আত্মরক্ষা করতে পারে। কিন্তু আমাদের দিকে যারা নেমেছিল, হালটের নামায় তারা আমাদের এলএমজির গুলিতে আহত হয়। পাকিস্তানিরা গা-ঢাকা দিয়ে পিছু হটে যায়।

বল্লাবাজার যুদ্ধের পর পাকিস্তানিরা এতটাই খেপল যে, আমাদের পাহাড়ি আস্তানাগুলো ধ্বংস করতে তারা চিরুনি (কম্বিং) অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের কাছে নির্দেশ এল ভর (নিচু) এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে লুকিয়ে থাকার। কাদের সিদ্দিকী তার নিজস্ব বাহিনী নিয়ে চলে গেলেন। পরে জেনেছি, তিনি ভারতে গিয়েছিলেন। আমরা পাহাড় থেকে নেমে ভর এলাকার সেই ঝনঝনিয়া গ্রামে আস্তানা গাড়লাম। পুরা বর্ষা। থই থই পানি। অনেক বাড়িই ডুবু ডুবু অবস্থা। চারপাশের কয়েকটি বাড়িতে আমাদের আশ্রয় হলো। ওই গ্রামেরই দুজন কমান্ডার আলী হোসেন রহম ও লাল্টু নিজের বাড়িতেই বাহিনী নিয়ে অবস্থান নেন। পাকিস্তানিদের কম্বিং অপারেশনে পাহাড়ি জনপদের ব্যাপক ক্ষতি হলেও জনগণের ক্ষতি হয়নি। কারণ, পাকিস্তানি বোমারু বিমানগুলো বোমা মেরে গাছপালা আর ঘরদোর ভেঙে দিতে পারলেও মানুষ লুকিয়েছিল নানা বাংকারে। তাদের আশ্রয়ের জন্য আমাদের কোম্পানিগুলো থেকে বিশেষ সাহায্য ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিছু গরু-বাছুর, হাঁস-মুরগি আর গাছ-গাছালির ক্ষতি হয়েছিল।

ভর এলাকার আশ্রয় থেকে আমরা আবার ফিরে এলাম কোম্পানির শেল্টার কাম ট্রেনিং ক্যাম্পাস, সেই বহেরাতৈলে। এসেই জানলাম কাদের সিদ্দিকী ফিরে আসছেন সহসাই। দু-দিন যায়নি, এক দুপুরে এসে ভিড়ল বেশ কয়েকটা নৌকা। নামলেন কাদের সিদ্দিকী। সেই দলে দেখলাম ভাইজানকে।

ফজলু ভাই বললেন, আমরা সিএনসিকে গার্ড অব অনার দেব। কাদের সিদ্দিকী গার্ড পরিদর্শন করে এসে ছোট একটা বক্তৃতা দিলেন। আবার তিনি চলে যাচ্ছেন হেড কোয়ার্টারে, সখীপুরের ধুপখালি গ্রামের সালাম ফকিরের বাড়িতে। সেখানে আছেন কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান আনোয়ার উল আলম (শহীদ)।

নৌকার দিকে যেতে যেতে ভাইজান কাদেরকে বললেন, ও আমার ছোট ভাই। কাদের সিদ্দিকী ফিরে তাকালেন আমার দিকে। বললেন, ‘আমি তো চিনি তাকে, স্যার।

ভাইজান বললেন, ওকে এইচকিউকে নিয়ে আসেন।

–ঠিক আছে। বলে ফিরলেন ফজলু ভাইয়ের দিকে। তিনি ছিলেন তারই বাঁ-পাশে।

বললেন, ব্রিগেডিয়ার সাহেব, ওকে কালকে এইচকিউকে পাঠিয়ে দেবেন। ফজলু ভাই সিনা টান করে বললেন, জি স্যার।

দুদিন পর আমি হেডকোয়ার্টারে পৌঁছালাম। এখান থেকেই বেরোয় ‘রণাঙ্গন’ নামের পাক্ষিক সাইক্লোস্টাইল করা পত্রিকা। আমি সেখানেই কাজে লাগলাম। সাথি হিসেবে পেলাম বন্ধু নূরুল ইসলাম সৈয়দ, যিনি স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগের মহানগর সভাপতি হয়েছিলেন। পেলাম কাউলজানির আর্টিস্ট আনিস ভাইকে, আর পেলাম মাসুদকে। মাসুদ বল্লার ছেলে। ঢাকার আর্ট কলেজে ভর্তি হয়েছে। ভাইজান মাহবুব সাদিক তো ছিলেনই, আর শহীদ ভাই। মনি খন্দকার আমাদের টিমে না থাকলেও, তিনি ছিলেন শহীদ ভাইয়ের সার্বক্ষণিক দলে। ছিল আমার সহপাঠী মনিরুজ্জামান সানু, ছাত্রলীগের ফারুক আহমেদ আর নূরুল ইসলাম সৈয়দ। নূরু আর ফারুক আহমেদ আমাদের রণাঙ্গনের জন্য মাঝেমধ্যে কাজ করতেন। তাদের প্রধান দায়িত্ব ছিল প্রধান প্রশাসকের সঙ্গে কাজ করার।

শহীদ ভাই প্রতিদিনই প্রশাসনিক কাজে বিভিন্ন এলাকায় যেতেন। দূরের কোনো এলাকায় গেলে সানুসহ আরও জনাকয়েক তার সঙ্গী হতো। আর নূরু, ফারুক, কচুয়ার স্কুলশিক্ষক হামিদুল হককে প্রশাসনের দায়িত্ব দিয়ে যেতেন। আর আমরা রণাঙ্গনের সংবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। সংবাদের পাশাপাশি কবিতা, গল্পও ছাপতাম আমরা। আমার নিজের লেখাও এখানেই প্রথম প্রকাশ পায়। লিখতেন রফিক আজাদ, মাহবুব সাদিকও।

সখীপুর বাজারে যেতাম প্রায় দিনই, একটি পাহাড়ি ঝোরা পার হয়ে। ওই ঝোরাটা থাকায় ধুপখালি গ্রামটিকে মনে হতো যেন একটি পরিখা দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। ওই ঝোরার ওপর বাঁশের একটি সাঁকো দেওয়া ছিল। সেখানে দুজন মুক্তিযোদ্ধা রুটিন করে পাহারায় থাকতেন।

এক দিন আমরা গেলাম মাইল দু-এক দূরে পাহাড়ে স্থাপিত হাসপাতালে। সেটা মূল হেডকোয়ার্টার মহানন্দপুরেই, একটু ভেতরে জঙ্গলের মধ্যে। সেখানে শাহজাদা ডাক্তারকে পেলাম। তিনি চিকিৎসায় ব্যস্ত। আর আমজাদ সাহেব ছিলেন হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে। সেই হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা চলছে।

মহানন্দপুর হেডকোয়ার্টারটি ছিল একটি প্রাইমারি স্কুলে। সেখানে থাকতেন আজিজ বাঙাল। তিনি রেডিও ট্রান্সমিটার চালাতেন। আমি আর হাবিবুর রহমান খোকাও এখানে এলাম থাকতে। খোকা আহত হয়েছিলেন নাটিয়াপাড়ার যুদ্ধে। এখানে আরেকজনের সঙ্গে আলাপ হলো। নাম রুহুল আমিন। শুনেছি, তিনি বিএ পাস করার পর এখন কোনো স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

‘হ্যালো মানিকগঞ্জ’, ‘মানিকগঞ্জ’ বলে আজিজ বাঙাল মানিকগঞ্জের সরকারির রেডিও ট্রান্সমিটারের চালকের সাতে যোগাযোগ করতেন। তিনিও বাঙালি বলে মুক্তিযোদ্ধা আজিজ বাঙালের সঙ্গে খাতির হয়ে গেছে। শুধু তার সঙ্গেই নয়, টাঙ্গাইল সদরের রেডিও অপারেটরের সঙ্গেও তাঁর সখ্য ছিল। এদের কাছে থেকে নিয়মিতই পাকিস্তানি বাহিনীর গতিবিধির খবর সংগ্রহ করেন আজিজ। আমি খুব আনন্দ পেতাম তাঁর এই কাজে। পাশে বসে শুনতাম। তিনি বলতেন, অমুক ভাই, শুনতে পাচ্ছি না। আপনি ১২.৩৮এ আসেন। হ্যালো হ্যালো ভাই। ওপাশের লোকটি যদি ব্যস্ত থাকতেন, তাহলে বিজি টোন দিতেন বা কোনো পাকিস্তানি লোক তার ধারে কাছে থাকত তখন অন্যভাবে তা বোঝাতেন। কিন্তু কখনোই তার সঙ্গে কথা বলতেন না। আহা! সেই সব দিনের আওয়াজ আমি আজও শুনতে পাই। হ্যালো মানিকগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ৩৪৯২০,৩৪৯২০।